বাংলাদেশ ডেস্ক | বৃহস্পতিবার, ০৭ মার্চ ২০২৪
বাংলাদেশ ডেস্ক : প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী দৌড় থেকে শক্তিশালী রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী নিকি হ্যালি নিজেকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ভারমন্টে রিপাবলিকান প্রাইমারিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিপক্ষে বিস্ময়কর জয়ের পর এই দৌড় থেকে সরে দাঁড়ালেন তিনি। বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের একই ম্যাচ এখন নিশ্চিত। ডোনাল্ড ট্রাম্পই হবেন প্রেসিডেন্ট পদে একমাত্র রিপাবলিকান প্রার্থী এর ফলে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দলীয় প্রাইমারি বাছাই প্রক্রিয়ায় সুপার টুয়েসডে খ্যাত অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম দিনের পর গতকাল বুধবার দলীয় প্রাইমারিতে রিপাবলিকান পার্টি থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এগিয়ে রয়েছেন। এখন প্রায় নিশ্চিত যে আগামী নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাইডেন ও ট্রাম্পই হতে যাচ্ছেন প্রতিদ্বন্দ্বী। গতকাল নিকি হ্যালি প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার দৌড় থেকে সরে আসার অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে গেছে যে ডোনাল্ড ট্রাম্পই হতে যাচ্ছেন আগামী নির্বাচনে দলটির প্রার্থী।মঙ্গলবার সাউথ ক্যারোলিনার রাজধানী চার্লসটন থেকে দেওয়া এক ভাষণে নিকি হ্যালি তার সিদ্ধান্তের কথা জানাবেন বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। এদিকে ডেমোক্রেটিক পার্টিতে জো বাইডেনের কোনো শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। একটি সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প রিপাবলিকান মনোনয়ন জিতবেন ও নভেম্বরের নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মুখোমুখি হবেন। নিকি হ্যালি স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় তার পরিকল্পনা নিয়ে ভাষণ দেবেন। সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, ভাষণে তিনি ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন জোগানোর জন্য ভোটারদের অনুরোধ করবেন। ১৫টি অঙ্গরাজ্যের প্রাইমারি নির্বাচনের মধ্যে ট্রাম্প জিতেছেন ১৪টিতে। হেরেছেন মাত্র একটিতে। আর এই আসনেই জয় পেয়েছেন নিকি হ্যালি। এদিকে ডেমোক্রেট থেকে বাইডেনও ১৪টি অঙ্গরাজ্যে জয় পেয়েছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার আগে নিজ দলেই তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হতে হয়। অঙ্গরাজ্যগুলোর প্রাথমিক বাছাই আর ককাসে জয় নিয়ে আসতে হয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার জন্য। অঙ্গরাজ্যগুলোতে রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধিত ভোটাররা নিজ দলের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেন। এরপরই দলের সম্মেলনে বিজয়ী প্রার্থী দলের মনোনয়ন পান।
সুপার টুয়েসডেতে একসঙ্গে এক ডজনের বেশি অঙ্গরাজ্যের প্রাইমারি ও ককাসে ভোট হয়। এদিন যিনি সবচেয়ে বেশি প্রাথমিক বাছাইয়ে জয় পাবেন, দলীয় মনোনয়নে তিনিই শেষ হাসি হাসবেন, এটা প্রায় নিশ্চিত। একই সঙ্গে বিশেষ এই দিনে কংগ্রেসের দুই কক্ষের সম্ভাব্য প্রার্থীদেরও প্রাথমিক বাছাইয়ে ভোটের মুখোমুখি হতে হয়। এবারের নির্বাচনে একে তো ডেমোক্রেটিক দল থেকে তেমন বিরোধিতার মুখোমুখি হতে হয়নি বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে। তাই দলীয় প্রার্থী হিসেবে বাইডেন নভেম্বরের নির্বাচনে লড়ছেন, সেটা প্রায় নিশ্চিত। আর ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিযোগিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর আরও নিশ্চত হওয়া গেলো। হ্যালি শক্তিশালী রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী থাকলেও ট্রাম্পের জন্য কোনো গুরুতর হুমকি সৃষ্টি করেননি। সাবেক এই প্রেসিডেন্টের নামে একাধিক অপরাধমূলক অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও দলটির ভিত্তির ওপর শক্ত প্রভাব রয়েছে তার। এর আগে পরপর দুইবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে একই প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা ঘটনা ঘটেছিল ১৯৫৬ সালে। তবে আমেরিকানরা এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি চায় না। মতামত জরিপ বলছে, বাইডেন ও ট্রাম্প উভয়ই ভোটারদের পছন্দের তালিকায় কম রেটিং পেয়েছে। অর্থাৎ অধিকাংশ ভোটারই চায় না তারা পুনরায় নির্বাচনে প্রার্থীতা করুক।
আমেরিকান সামোয়ায় স্বল্প পরিচিত জ্যাসনের কাছে হারলেন বাইডেন
যুক্তরাষ্ট্রে নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সামনে রেখে গত মঙ্গলবার যে ১৪টি অঙ্গরাজ্যে ডেমোক্র্যাট দলের প্রাথমিক বাছাইপর্বের ভোট (প্রাইমারি) হয়েছে, তার সব কটিতে জয়ী হয়েছেন জো বাইডেন। তবে সুপার টুয়েসডেতে আমেরিকান সামোয়া অঞ্চলে অনুষ্ঠিত ককাসে হেরে গেছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী বাইডেন যাঁর কাছে হেরেছেন, তিনি খুব স্বল্প পরিচিত একজন ব্যবসায়ী। নাম জ্যাসন পামার। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী বাছাই ভোটের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন হিসেবে পরিচিত ‘সুপার টুয়েসডে’। গতকাল এ ‘সুপার টুয়েসডে’-তে যুক্তরাষ্ট্রের ১৫টি অঙ্গরাজ্যে রিপাবলিকান পার্টির বাছাইপর্বের ভোট হয়। আর ১৪টি স্টেট ও আমেরিকান সামোয়া অঞ্চলে অনুষ্ঠিত হয় ডেমোক্র্যাটদলীয় বাছাইপর্বের ভোট।
প্রশান্ত মহাসাগরীয় ছোট অঞ্চল আমেরিকান সামোয়ায় ডেমোক্র্যাটদলীয় ককাসে ভোট পড়েছে ৯১টি। এর মধ্যে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী পদে বাইডেনের প্রতিদ্বন্দ্বী জ্যাসন পামার পেয়েছেন ৫১টি ভোট। আর বাইডেন পেয়েছেন ৪০টি ভোট। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে পামার লিখেছেন, ‘আমেরিকান সামোয়ায় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী পদের প্রাথমিক বাছাইয়ে আমার বিজয়ের খবর ঘোষণা করতে পেরে সম্মানিত বোধ করছি।’ তাঁকে সমর্থন দেওয়ায় স্থানীয় ভোটারদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যগুলোর বাসিন্দারা প্রেসিডেন্ট প্রার্থী নির্বাচনের প্রাথমিক বাছাইয়ে ভোট দিতে পারলেও ইলেকটোরাল কলেজে প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন না। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কে জয়ী হচ্ছেন, সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতিতে।
মঙ্গলবার আমেরিকান সামোয়ায় জয়লাভের মধ্য দিয়ে জ্যাসন পামার শুধু চারজন প্রতিনিধির সমর্থন নিশ্চিত করেছেন। সেদিক থেকে প্রার্থী মনোনয়নের দৌড়ে তাঁর অবস্থান বাইডেনের ধারেকাছে নেই। অর্থাৎ সামোয়ায় হারলেও বাইডেনের প্রার্থিতা পাওয়ার ক্ষেত্রে এর কোনো প্রভাব পড়বে না বললে চলে। এর আগে ২০২০ সালে আমেরিকান সামোয়া অঞ্চলে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রাথমিক বাছাইয়ে জয়ী হয়েছিলেন ধনকুবের মাইকেল ব্লুমবার্গ। যদিও তিনি প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পাননি। প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহে মিশিগান অঙ্গরাজ্যে অনুষ্ঠিত ডেমোক্র্যাট প্রাইমারিতে লক্ষাধিক নিবন্ধিত ভোটার ‘আনকমিটেড’ (প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নয়) ভোট দেন। ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে বাইডেনের অব্যাহত সমর্থনের প্রতিবাদে এমন অবস্থান নেন এই ভোটাররা। এদিকে বিভিন্ন জনমত জরিপের ফলাফল গড় করে মার্কিন সংবাদমাধ্যম রিয়েলক্লিয়ারপলিটিকস বলছে, নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দৌড়ে বাইডেনের চেয়ে দুই পয়েন্ট এগিয়ে আছেন ট্রাম্প।
বাইডেনের নেতৃত্ব নিয়ে সন্দেহ, এগিয়ে ট্রাম্প
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ওপর তার দল ডেমোক্রেটিক পার্টির আস্থায় ঘাটতি রয়েছে। তিনি যেভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তা নিয়েও তাদের মনে সন্দেহ রয়েছে। এটা তাকে তার প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান পার্টির ডোনাল্ড ট্রাম্প থেকে পেছনে ফেলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সামনে রেখে দ্য নিউইয়র্ক টাইমস ও সায়েনা কলেজের এক জরিপে এসব তথ্য উঠে আসে। শনিবার জরিপটি প্রকাশ হয়।
আগামী নভেম্বরে এ নির্বাচন হবে। দেশব্যাপী নিবন্ধিত ভোটারদের মধ্যে চালানো নতুন জরিপে প্রেসিডেন্ট বাইডেন পেয়েছেন ৪৩ শতাংশের সমর্থন; তার প্রতিদ্বন্দ্বী ট্রাম্প ৪৮ শতাংশ সমর্থন পেয়ে এগিয়ে আছেন। ১০ শতাংশ ভোটার কোনো মন্তব্য করেননি। কেবল চারজনের মধ্যে একজন ভোটার মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র সঠিক পথে রয়েছে। অধিকাংশ ভোটার মনে করেন, অর্থনীতি খারাপ অবস্থায় আছে। জরিপে বলা হয়, ট্রাম্প তার দলকে যথেষ্ট ঐক্যবদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছেন। বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের মনোনয়নের প্রাথমিক লড়াইয়েও এটা দেখা যাচ্ছে। ২০২০ সালে ট্রাম্পকে যারা ভোট দিয়েছেন, এবারও তাদের ৯৭ শতাংশ তাকেই সমর্থন করছেন। তারা কেউই বলেননি, এবার তারা বাইডেনকে ভোট দেবেন। পক্ষান্তরে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ক্ষেত্রে এ হার ৮৩ শতাংশ।
আর ১০ শতাংশ ভোটার বলছেন, ২০২০ সালে বাইডেনকে ভোট দিলেও এবার তারা ট্রাম্পকে দেবেন। বিগত নির্বাচনে বাইডেনকে ভোট দিয়েছিলেন লস অ্যাঞ্জেলেসের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক মমতা মিশ্র। তিনি বলেন, ‘আমি এবার খুব কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছি। আমি ভাবছি, এবার ভোটই দেব না।’ জরিপে দেখা গেছে, ট্রাম্প ৫ পয়েন্টে এগিয়ে আছেন।
Posted ১১:৩৯ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৭ মার্চ ২০২৪
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh