মোহাম্মদ আজাদ : | বৃহস্পতিবার, ২৯ অক্টোবর ২০২০
প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আগামী ৩ নভেম্বর, মঙ্গলবার। আর মাত্র ৪ দিন বাকি। সারা বিশ্ব তাকিয়ে আছে এই নির্বাচনের ফলাফলের দিকে। সর্বশেষ জরিপে ট্রাম্পের চেয়ে এখনও বাইডেন এগিয়ে। তবে শেষ মুহূর্তে পাল্টে যেতে পারে সব হিসেব। এই নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের জণগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে আগামী চার বছরের জন্য নির্বাচন করবেন তাদের প্রেসিডেন্ট বা কমান্ডার-ইন-চিফকে। এখন পর্যন্ত যে স্টেটগুলোর আগাম ভোট নেয়া হয়েছে এবং ভোটগ্রহণ চলছে সবগুলোতেই ডেমোক্রেট প্রার্থী জো বাইডেন এগিয়ে রয়েছেন। প্রেসিডেন্ট ছাড়া এবার মোট ১১ স্টেটে গভর্নর, ষ্টেট এসেম্বলি, কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টেটিভের ৪৩৫ ও উচ্চকক্ষ সিনেটের ৩৫টি আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। গত ২৪ অক্টোবর থেকে নিউইয়র্কে আগাম ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে, যা আগামী ১ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে।
মঙ্গলবার সকাল ৬টায় নিউইয়র্কে ভোটারদের জন্য ভোট কেন্দ্র খুলে দেয়া হবে এবং কোন বিরতি ছাড়াই রাত ৯টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ করা হবে। পার্শবর্তী নিউ জার্সিতে সকাল ৬টা থেকে রাত ৮টা, কানেকটিকাটে সকাল ৬টা থেকে রাত ৮টা, পেনসিলভেনিয়ায় সকাল ৭টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলবে। এবারের নির্বাচনে বাইডেন-হ্যারিস জুটি যদি জয়ী হতে পারেন তাহলে কামালা হ্যারিস সর্বপ্রথম কোন কৃষ্ণাঙ্গ ও মহিলা ভাইস প্রেসিডেন্ট হয়ে হিসেবে ইতিহাস গড়বেন। এর আগে ১৯৮৪ সালের নির্বাচনে গার্লেডাইন ফেরারো সর্বপ্রথম কোন মহিলা ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। ফেরারো তৎকালীন ডেমোক্রেট প্রার্থী ওয়াল্টার মণ্ডেলের রানিংমেট ছিলেন। কিন্তু নির্বাচনে মণ্ডেল -ফেরারো জুটি তৎকালীন শক্তিশালী রিপাবলিকান জুটি রিগ্যান-বুশের কাছে পরাজিত হন। এরপর ২০০৮ সালের নির্বাচনে প্রথম রিপাবলিকান ভাইস প্রেসিডেন্ট মনোনয়ন লাভ করেন সারা পলিন। সারা পলিন ২০০৮ সালের নির্বাচনে প্রয়াত সিনেটর জন ম্যাককেইনের রানিংমেট ছিলেন। কিন্তু এই জুটি ডেমোক্রেট ওবামা-বাইডেনের কাছে পরাজিত হন।
কিন্তু এবার ডেমোক্রেট প্রাথী জো বাইডেন তার রানিংমেট হিসেবে নিয়েছেন একজন নারীকে, তাও আবার কৃষ্ণাঙ্গ। ৩ নভেম্বরের নির্বাচনে জো বাইডেন জয়ী হলে কামালা হ্যারিস যথার্থই ইতিহাস গড়বেন। প্রথমত যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম মহিলা ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে, দ্বিতীয়ত একজন কৃষ্ণাঙ্গ ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে। গুরুত্বপূর্ণ প্রতিটি জরিপ সংস্থার জরিপে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চেয়ে জো বাইডেন এগিয়ে রয়েছেন। বাইডেনের পক্ষে শেষ মুহূর্তে প্রচারণায় নেমেছেন রাজনৈতিক কলাকৌশলের মাষ্টার খ্যাত সাবেক প্রেসিডেন্ট ওবামা। সিএনএন এর সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রে জো বাইডেন ১০.৬ শতাংশ পয়েন্টে ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে আছেন। ইউএস টুডে’র সর্বশেষ জরিপে সমগ্র দেশে বাইডেন গড়ে ৫১.৪ এবং ট্রাম্প ৪২.৯ শতাংশ পয়েন্টের পার্থক্যের কথা বলা হয়েছে। বাইডেনের পক্ষে এ পরিমাণ আরো বাড়তে পারে। ফাইভথার্টিএইটের জরিপে পুরো দেশে বাইডেন ৫২ ও ট্রাম্প ৪২.৯ শতাংশ পয়েন্ট, ইউএস টুডে’র জরিপে ১২ টি স্যুয়িং স্টেটের মধ্যে ৯টিতে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা সামান্য বৃদ্ধি পেলেও এখন পর্যন্ত ১০টি স্যুয়িং স্টেটে বাইডেন এগিয়ে আছেন।পেনসিলভেনিয়া এবারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্যুয়িং স্টেট এবং সেখানকার পল্লী এলাকা ও শিল্পাঞ্চলে ট্রাম্পের বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে। ইউএস টুডে দেখিয়েছে যে পেনসিলভেনিয়ায় বাইডেন ৫০ শতাংশ এবং ট্রাম্প ৪৪.৬ শতাংশ ভোট পাবেন।
সিএনএন এর জরিপে বাইডেন পাবেন ট্রাম্পের চেয়ে ৭ শতাংশ পয়েন্ট এগিয়ে থাকলেও রিয়েল ক্লিয়ার পলিটিকসের জরিপে ট্রাম্প ও বাইডেনের সমান জনপ্রিয়তা দেখানো হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে পেনসিলভেনিয়ায় এবার হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। উইজকনসিন একটি স্যুয়িং স্টেট, সেখানে সর্বশেষ জরিপে ট্রাম্প ৪৪.৪ শতাংশ পয়েন্ট ও বাইডেন ৫০.১ শতাংশ ভোট পাবেন । ফ্লোরিডা রিপাবলিকানদের গুরুত্বপূর্ণ একটি স্যুয়িং স্টেট। সেখানে বাইডেন এতদিন এগিয়ে থাকলেও শেষ মুহূর্তে বাইডেন ও ট্রাম্পের জনপ্রিয়তার পার্থক্য হচ্ছে বাইডেন ৫০ শতাংশ এবং ট্রাম্প ৪৮ শতাংশ।
এছাড়া নর্থ ক্যারোলিনা ও জর্জিয়ায় বাইডেন এগিয়ে আছেন, ওহাইয়োতে ট্রাম্প এগিয়ে আছেন সামান্য ব্যবধানে। রেড স্টেট টেক্সাস নিয়ে রিপাবলিকানরা বেকায়দায় রয়েছে। সেখানে কিছু সংস্থার জরিপে ট্রাম্প সামান্য এগিয়ে থাকলেও কিছু জরিপে দুই প্রার্থীর জনপ্রিয়তা সমান বলা হয়েছে। গত সোমবারের ডালাস মর্নিংয়ের জরিপে বাইডেন ট্রাম্পের চেয়ে ৫ শতাংশ পয়েছে এগিয়ে ছিলেন। সিএনএন বলছে যে এবার রেকর্ড সংখ্যক ভোটার ভোট দেবেন। সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রে ৫০ শতাংশ ভোটার ভো দিয়ে থাকেন। জরিপ বলছে এবার রেকর্ড সংখ্যক অর্থ্যাৎ ৮৫.১ শতাংশ ভোটার ভোট দেবেন। গত সোমবার পর্যন্ত ৬৫.৫ মিলিয়ন ভোটার আগাম ভোট দিয়ে অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছেন, যার মধ্যে তরুণ ভোটারের সংখ্যা অধিক। আগাম ভোট ও মঙ্গলবারের ভোটারের সংখ্যা যোগ করলে সিএনএন এর জরিপ ছাড়িয়ে ভোটারের সংখ্যা ৯০ শতাংশে উন্নীত হতে পারে। যেসব স্টেটে আগাম ভোট শুরু হয়েছে সেসব স্টেটেও জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছেন।
উইজকনসিনে আগাম ভোট শুরু হয়েছে ২০ অক্টোবর এবং শেষ হয়েছে ২৬ অক্টোবর। সেখানে বাইডেন পেয়েছেন ৫৩ শতাংশ ভোট এবং ট্রাম্প পেয়েছেন ৪৪ শতাংশ ভোট। পেনসিলভেনিয়ায় আগাম ভোট ২০ অক্টোবর শুরু হয়ে ২৬ অক্টোবর শেষ হয়েছে এবং সেখানে বাইডেন ৫০ শতাংশ এবং ট্রাম্প ৪৫ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। ফ্লোরিডায় আগাম ভোট ১৪ অক্টোবর শুরু হয়ে ২০ অক্টোবর শেষ হয়েছে এবং জো বাইডেন ৫০ ও ট্রাম্প ৪৬ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। অ্যারিজোনায় আগাম ভোট ছিল ১৪ থেকে ২১ অক্টৈাবর পর্যন্ত এবং সেখানে বাইডেন ৪৯ শতাংশ ও ট্রাম্প ৪৬ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। মিশিগানে আগাম ভোট হয়েছে ১৪ থেকে ২০ অক্টোবর পর্যন্ত এবং সেখানে বাইডেন ৫১ ও ট্রাম্প ৪৪ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। একই ভাবে নর্থ ক্যারোলিনায় ১৪ থেকে ২০ অক্টোবরের আগাম ভোটে বাইডেন ৪৯ ও ট্রাম্প ৪৬ শতাংশ ভোট পেয়েছেন।
ডসনেটে এবার ৩৫ আসনে নির্বাচন হবে। এর মধ্যে ২৩টি আসন রিপাবলিকানদের। এর মধ্যে ৯টি আসন ঝুঁকিতে। সিএনএন এর জরিপে বলা হয়েছে এই আসনগুলোর মধ্যে রিপাবলিকানরা ৫ থেকে ৬টি আসন হারাতে পারেন এবং এর ফলে তারা সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠতাও হারাতে পারে। হাউজের ৪৩৫ আসনের মধ্যে এখ নপর্যন্ত ২৩৫ আসন নিয়ে ডেমোক্রেটরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। হাউজে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন হয় ২১৮ আসনের। রিপাবলিকানরা হাউজে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না বলে স্পষ্ট। মঙ্গলবার নির্বাচনের পর চূড়ান্ত নির্বাচনী ফলাফলের জন্য হয়ত দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হবে। কোভিড ১৯, ইমেইল ভোটিং ও মেইল ভোটিং এর কারণে চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণায় দীর্ঘ সময় লেগে যাবে।
Posted ১০:০৬ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৯ অক্টোবর ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh