| বৃহস্পতিবার, ২৭ জানুয়ারি ২০২২
চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন নিউইয়র্ক সিটির সাবওয়ে যাত্রীরা। সম্প্রতি অপরাধ প্রবণতা এতোটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে স্টেশনে অপেক্ষমান যাত্রীদের ধাক্কা দিয়ে চলন্ত ট্রেনের নিচে ফেলে দেয়ার ঘটনা ঘটছে অহরহ। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় এবং বিশ্বের প্রাচীনতম এই সাবওয়ে পরিণত হয়েছে মৃত্যুফাঁদে। জীবন ক্রমাগত ঝুকিপূর্ণ হয়ে ওঠায় যাত্রী সংখ্যা নেমে গেছে অর্ধেকে। আগে প্রতিদিন গড়ে ৫৬ লাখ যাত্রী ওঠানামা করতো এই সাবওয়ে ট্রেনে। ৮৫০ মাইল দৈর্ঘ্যরে নিউইয়র্ক সিটি সাবওয়ের ৪৭২টি স্টেশনে দিনরাত ২৪ ঘণ্টাই চলাচল ছিলো যাত্রীদের। ভীতির কারণে এসব স্টেশন আজ মৃতপ্রায়।
নিউইয়র্ক সিটির সাবওয়ে যাত্রীদের জন্য ক্রমবর্ধমানভাবে বিপজ্জনক হয়ে পড়ছে। সাবওয়ে অপরদিকে অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে যাত্রীসংখ্যা হ্রাসের কারণে। টাইমস স্কোয়ার সাবওয়ে স্টেশনে এক নারীকে ট্রেন আসার ঠিক পূর্ব মুহূর্তে ট্রেনের সামনে ধাক্কা দিয়ে ট্র্যাকে ফেলে দেওয়ার ফলে তার মৃত্যুর ঘটে।
নতুন করে তুলকালাম কান্ড শুরু হয়েছে এই মৃত্যু নিয়ে। মেয়র এরিক অ্যাডামস আশ্বাস দিয়েছেন তার পূর্বসূরী মেয়রদের মত কোন ঘটনা ঘটার পর জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রযোজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণের। ঘটনার জন্য একষট্টি বছর বয়স্ক সাইমন মার্শালকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। এই ঘটনা আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে সাবওয়ে ব্যবহারকারী সিটিবাসীদের মধ্যে। সিটি মেয়র এরিক অ্যাডামস গত মঙ্গলবার টাইমস স্কোয়ারে আয়োজিত এক সমাবেশে সাবওয়ে ব্যবহারকারী নিউইয়র্কারদের সতর্কতার সঙ্গে চলাফেরার আহবান জানিয়ে বলেছেন যে, তিনি নিজেও নিরাপদ বোধ করেন না সাবওয়ে ব্যবহার করতে। দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিনে তিনি সাবওয়ে ব্যবহার করেন। তিনি সর্বত্র হোমলেসদের দেখেছেন, লক্ষ্য করেছেন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি। তিনি বলেন, সিটিবাসী নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছে। তিনি অপরাধ হ্রাসে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং নিউইয়র্কারদের জন্য সাবওয়ে সিস্টেমকে নিরাপদ করার প্রতিশ্রুতি দেন। করোনা পরিস্থিতিতে সিটির অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কাজে যথেষ্ট বিঘ্ন ঘটছে এবং এখন পর্যন্ত অর্থনীতি আগের পর্যায়ে আসেনি। এখনো বহু মানুষ কর্মহীন এবং সরকারি সহায়তা দান বন্ধ করা হয়েছে। সেজন্য অপরাধ সংঘটন এবং অপরাধের শিকার হওয়ার ভয় অর্থনীতিকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কর্তৃপক্ষ কঠোর হাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে অফিসগুলো খুলতে এবং বিনোদন কেন্দ্রে প্রাণ সঞ্চার করতে আরো দীর্ঘ সময় লেগে যাবে।
সিটির অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করে সিটিকে নিরাপদ করে তোলাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে নতুন মেয়রের জন্য। সিটিকে নিরাপদ ও অপরাধমুক্ত করতে যেসব প্রতিশ্রুতি মেয়র দিয়েছেন, তা পূরণ করা বাস্তব জীবনে কঠিন হলেও সিটিবাসীর অবাধে চলাফেরার ন্যূনতম নিরাপত্তা বিধান করতে হবে। সিটিবাসী তাকে নির্বাচিত করেছে তাকে বিশ্বাস করে এবং এখন তাকে তার নীতি নির্ধারক ও নীতি কার্যকর করার জন্য দায়িত্বশীলদের সঙ্গে নিয়ে এগুতে হবে। কারণ অপরাধ এখনই ঠেকানো না হলে অপরাধীরা আস্কারা পেয়ে যাবে। অপরাধ দমনে মেয়র বরাবর যে পদ্ধতির কথা বলে এসেছেন তার মধ্যে রয়েছে পুলিশের সম্প্রসারিত ভূমিকা পালন। মেয়র অ্যাডামস আগ্নেয়াস্ত্র সংশ্লিষ্ট অপরাধ মোকাবিলার জন্য সাদা পোশাকে পুলিশ নিয়োগে সংষ্কার আনার বিষয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করছেন। মেয়র অ্যাডামসের দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম সপ্তাহেই স্টেট গভর্নর ক্যাথি হকুল বলেছেন যে তারা সাবওয়ে সিস্টেমে পুলিশে নিয়মিত টহল ও অনুসন্ধান চালানোর পরিকল্পনা করছেন এবং হোমলেসদের সমস্যা সমাধানেও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
Posted ৯:৪১ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৭ জানুয়ারি ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh