বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১
নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিল ডিস্ট্রিক্ট-২৪ এ স্পেশাল ইলেকশনে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন জেমস এফ জিনারো। গত ২ ফেব্রুয়ারি, মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হয় বহুল আলোচিত নির্বাচনে। গুরুত্বপূর্ণ এই আসনের নির্বাচনে এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন বাংলাদেশী আমেরিকান ৪ প্রার্থী মৌমিতা আহমেদ, এটর্নি সোমা সাঈদ, ডঃ দীলিপ নাথ ও মুজিব রহমান। নির্বাচনে মোট ৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচনে বিজয়ী জেমস এফ জিনারো ২০২১ সালের ৩১ডিসেম্বর পর্যন্ত এই পদে বহাল থাকবেন। উল্লেখ্য, কাউন্সিলমেম্বার রোরি ল্যান্স্যামনের পদত্যাগের পর এই আসনটি শূণ্য হয়। কিউ গার্ডেনস হিলস, পমোনক, ইলেক্টচেস্টার, ফ্রেশ মেডোস, হিলক্রেস্ট, জ্যামাইকা এস্টেটস, ব্রায়ারউড, পার্কওয়ে ভিলেজ ও জ্যামাইকা হিলস নিয়ে গঠিত-ডিস্ট্রিক্ট-২৪ নির্বাচনী এলাকা।
যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে জনবহুল নগরী নিউইয়র্ক। কুইন্স হচ্ছে দেশটির সর্ববৃহৎ কাউন্টি। এই কাউন্টির ডিস্ট্রিক্ট-২৪ এ সাউথ এশিয়ান রেজিস্ট্রার্ড ভোটার রয়েছে ৩০ সহস্রাধিক। তন্মধ্যে বড় একটি সংখ্যক ভোটার হচ্ছে বাংলাদেশী। ফলে নানা কারণেই এই আসনের উপর রাজনীতিকদের রয়েছে কড়া নজর। গত ২ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে ‘র্যানকড চয়েস ভোটিং’ প্রক্রিয়ায় একজন ভোটার একই সাথে ৫ জন প্রার্থীকে ভোট দেন। প্রচন্ড ঠান্ডা আর তুষারপাতের মধ্যেই ভোটগ্রহণ চলে সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। নির্বাচনে ভোটারগণ সরাসরি ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেন। আগাম ও এ্যাবসেন্টি ব্যালটে ভোট প্রদানের ও সুযোগ ছিল। গত ২৩ জানুয়াারি থেকে শুরু হয় অগ্রিম ভোট প্রদান। চলে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। আগাম ভোট প্রদান করেন ২,০৩৯ জন ভোটার।
নিউইয়র্ক সিটি বোর্ড অব ইলেকশন অফিস সূত্রে পাওয়া ফলাফলে জানা যায়, নির্বাচনে বিজয়ী জেমস এফ জিনারো পেয়েছেন ৩,১৩৯ ভোট । তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি বাংলাদেশী-আমেরিকান মৌমিতা আহমেদ-এর প্রাপ্ত ভোট ৮২৩। এছাড়া অন্যান্য প্রার্থীদের মধ্যে এটর্নী সোমা এস সাঈদ পেয়েছেন ৪৬১ ভোট, দীপ্তি শর্মার পেয়েছেন ২৫৮ভোট, ড. দিলীপ নাথের প্রাপ্ত ভোট ২২১, নীতা জেইন-এর প্রাপ্ত ভোট ১৫৯, মুবি-উর রহমানের পেয়েছেন ১১৮ভোট এবং মাইকেল আর্ল ব্রাউন-এর পেয়েছেন ৬৬ ভোট । একই আসনে ২০১৭ সালে একক প্রার্থী হিসেবে মো: তৈয়েবুর রহমান হারুন ২,৩০০ ভোট পেয়েছিলেন। আর এবার ৪ জন প্রার্থী মিলে ভোট পেয়েছেন তার চেয়ে কম। রোরি ল্যান্সম্যানের পূর্বসূরি ডেমোক্রেট দলীয় সাবেক কাউন্সিল মেম্বার জেমস জিনারো যিনি ২০০২ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত ডিস্ট্রিক্ট-২৪ এর কাউন্সিল মেম্বার ছিলেন। পরে তিনি গভর্নর অফিসে চাকুরী নিয়ে চলে যান।
তিনি ২০০১ সালে প্রথম, ২০০৫ সালে দ্বিতীয় এবং ২০০৯ সালে তৃতীয়বারের মতো সিটি কাউন্সিলম্যান নির্বাচিত হন। মাঝে তিনি ২০০৮ সালে নিউইয়র্ক ষ্টেট সিনেটর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং সিনেটর ফ্রাঙ্ক পাদাভানের কাছে পরাজিত হন। এরপর ‘টার্ম লিমিট’-এর কারণে ২০১৩ সালের সিটি কাউন্সিল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা থেকে তাকে বিরত থাকতে হয়। বাংলাদেশী প্রার্থীদের জন্য একটি উর্বর এলাকা।স্পেশাল নির্বাচনে ভোট প্রদানের হার বরাবর অত্যন্ত কম। সুতরাং এখানে বাংলাদেশী ভোটারদেরকে ভোট কেন্দ্রে যেতে উৎসাহিত করতে পারলে তা ভালো ফলাফল বয়ে আনতে পারতো। কিন্তু বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত প্রার্থীদের মাঝে এ ধরনের কোন উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায়নি।
দেশীয় আঞ্চলিকতা এবং রাজনৈতিক পরিচয় নিয়েও কেউ কেউ দাড়ান প্রার্থীদের পক্ষে। কোন কোন প্রার্থীর প্রচারণা ছিল শুধুমাত্র নিজ কমিউনিটিতে সীমিত । শুধুমাত্র বাংলাদেশীদের ভোটে ডিস্ট্রিক্ট-২৪ নির্বাচনী এলাকায় নির্বাচিত হওয়ার সুযোগও নেই। এই এলাকার বড় একটি অংশ জুড়ে রয়েছে অন্যান্য জাতি গোষ্ঠী ও কমিউনিটির মানুষের বসবাস। তাদের মাঝে নিজেদের প্রার্থীতা ও পরিচয় শক্ত ও সঠিকভাবে তুলে ধরার বিকল্প নেই। একটি আসনে বাংলাদেশী এবং ৪ জন প্রার্থী হওয়ায় স্থানীয় কমিউনিটিতে একধরণের বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় । তারপরও অনেকে অনুদানের হাত বাড়িয়েছেন প্রার্থীদের প্রতি। প্রার্থীরা সংগৃহীত তহবিল সিটি প্রশাসনকে প্রদর্শন করে বড় ধরণের আর্থিক সহায়তা লাভ করেন। নিউইয়র্ক সিটির নিয়মানুসারে কোন প্রার্থী যে পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করে থাকেন সিটি কর্তৃপক্ষ তার ৬ গুণ অর্থ প্রার্থীদেরকে প্রদান করে নির্বাচনী প্রচারনার কাজে ব্যবহারের জন্য। এদিক থেকে আর্থিক দৈন্য দশাতে পড়তে হয়নি প্রার্থীদেরকে।
এ আসনে একজন শক্তিশালী সাবেক কাউন্সিলম্যানের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য যে ধরণের প্রচারণা বা প্রস্তুতি প্রয়োজন তা প্রার্থীদের মাঝে ছিল না। স্থানীয় নির্বাচনে যারা প্রার্থী হন তাদেরকে রাজনীতির ময়দানে থাকতে হয় সার্বক্ষণিক। বিভিন্ন ইস্যুতে দাঁড়াতে হয় কমিউনিটির মানুষের পাশে। বছর কয়েক আগে থেকেই হোম ওয়ার্ক করে সেভাবে নিতে হয় প্রস্তুতি। এসব নির্বাচনে জয়ী হতে হলে নিজ মেধা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা এবং সামষ্টিক জনসমর্থন প্রয়োজন। বাংলাদেশী অভিবাসী সমাজে এখনো ঢেড় অভাব ঐক্যের। অভাব সঠিক ও দূরদর্শী নেতৃত্বের। অভাব উদার মন-মানসিকতা ও পারস্পরিক সহমর্মিতার। এবারের নির্বাচনের এ ধরনের সব অভাব বিদ্যমান ছিল।
আমেরিকান রাজনীতিতে একবারে তৃণমূল থেকে শুরু করে রাজনীতিকরা ধাপে ধাপে উপরের দিকে অগ্রসর হন। আর একবার বিফলকাম হলেই নির্বাচনের ময়দান ছেড়ে নিরুদ্দেশ হন না তারা। নির্বাচনে জিততে হলে সকল ধর্ম-বর্ণ, জাতি ও কমিউনিটির ভোট এবং সমর্থন প্রয়োজন। প্রার্থীরা ডাকযোগে বাসায় বাসায় যেসব প্রচারপত্র পাঠিয়েছেন তা খুব কম সংখ্যক মানুষ পড়েছেন। কোন কোন ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রচারণা লক্ষ্য করা যায় প্রার্থীদের মাঝে। তবে বাংলাদেশী কমিউনিটিতে প্রত্যাশা ছিলো একক প্রার্থীর। তা না করে একটি আসনে ৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিজেদের দুর্বলতার বহি:প্রকাশ ঘটিয়েছেন। এবারের নির্বাচনে প্রার্থীরা লাখ লাখ ডলার খরচ করেছেন নির্বাচনী প্রচারের জন্য। তবে তা কতোটা সঠিকভাবে কাজে লাগিয়েছেন এ নিয়ে আলোচনা চলছে কমিউনিটিতে।
Posted ৯:৫৩ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh