| বৃহস্পতিবার, ০৪ নভেম্বর ২০২১
নিউইয়র্ক সিটির স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অভাবনীয়ভাবে দুই বাংলাদেশী আমেরিকান নারী নির্বাচিত হয়েছেন। গত ২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে বিজয়ীরা হলেন এটর্নী সোমা সাঈদ ও শাহানা হানিফ। সোমা সাঈদ সিটির কুইন্স ডিস্ট্রিক্ট সিভিল কোর্টেও বিচারকের পদ অলংকৃত করবেন। অপরজন শাহানা হানিফ জয়ী হয়েছেন নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিল ওম্যান পদে। ব্রƒকলীনে ৩৯ ডিস্ট্রিক্ট থেকে নির্বাচিত শাহানা হানিফ বয়সে তরুণ এবং সম্ভাবনাময় একজন রাজনৈতিক কর্মী।
এদের উভয়েই ডেমোক্রেটিক দলীয় প্রার্থী। গত ২২ জুন অনুষ্ঠিত নিজ দলীয় প্রাইমারীতে জয়লাভের পরই কার্যত তাদের চূড়ান্ত সাফল্য নির্ধারিত হয়। প্রাথমিক নির্বাচনে তারা প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীর চেয়ে বড় ধরণের ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন। সাধারণ নির্বাচনে তারা রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বিকে ধরাশায়ী করেন বিপুল ভোটের ব্যবধানে। সিটির এ নির্বাচনে জয়লাভের মধ্যদিয়ে তারা বাংলাদেশী-আমেরিকান হিসেবে রেকর্ড গড়লেন যুক্তরাষ্ট্রে। এছাড়া নারী জন প্রতিনিধি হিসেবে তারা দু’জন নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ কমিউনিটিকে পৌছে দিয়েছেন অনন্য উচ্চতায়। সোমা সাঈদ ও শাহানা হানিফের বিজয় গোটা বাংলাদেশী-আমেরিকান কমিউনিটির বিজয়।
যুক্তরাষ্ট্রে বিশেষ করে নিউইয়র্ক সিটিতে প্রায় তিন লক্ষাধিক বাংলাদেশী অভিবাসীর বসবাস। বিগত তিন দশক ধরে এখানে বাংলাদেশীদের সংখ্যা ব্যাপক হারে বেড়ে চলেছে। নূতন প্রজন্মের একটি বড় অংশ স্কুল কলেজে ভালো ফলাফল করে উন্নত জীবন জীবিকায় মনোনিবেশ করছে। ভালো পেশায় অনেকে নিয়োজিত করেছে নিজেদেরকে। নূতন এই প্রজন্মের সাথে তাদের অভিভাবকগণ পিছিয়ে আছেন। সন্তানদের সাথে প্রথম ও দ্বিতীয় প্রজন্মের বাবা-মা’দের মাঝের দূরত্ব দীর্ঘায়িত হচ্ছে ক্রমেই। বিশেষ করে স্বদেশী ধাঁচের রাজনীতি, সংগঠন সভা সমাবেশ বিমুখ সন্তানদের অনেকেই আবার পা বাড়াচ্ছে বিপথে।
এসব কারণে বহুজাতিক নিউইয়র্ক সিটিতে বাংলাদেশী আমেরিকান কমিউনিটিতে এক ধরণের অস্থিরতা বিরাজ করছে নীরবে। অনেক ব্যক্তি ও সংগঠন মূলধারার রাজনীতির পেছনে ছুটলেও তেমন কোন সাফল্য ঘরে তুলতে পারছেন না তারা নানা কারণে। শিক্ষাগত যোগ্যতা, অভিজ্ঞতার অভাবের পাশাপাশি বিভেদ, বিভক্তিতে জড়িয়ে পড়ায় বাংলাদেশী কমিউনিটি মূলধারার রাজনীতিতে কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছে। নির্বাচনী মওসুমে একই আসনে বাংলাদেশী আমেরিকান একাধিক প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়টি বড় একটি নেতিবাচক দিক। এছাড়া নির্বাচনী প্রচারণাকালে অনেক বাংলাদেশীকে দেখা যায় বড় বড় প্রার্থীদের তহবিলে অর্থ যোগান দিতে ও দৌড়াতে। কিন্তু তারা নিজেদের অবস্থান সংহত করা বা কমিউনিটির জন্য কোন কল্যাণকর কিছু করতে পারছেন না।
এতোসব নেতিবাচক দিকের মধ্য থেকে নিজ যোগ্যতা বলে বেড়িয়ে এসেছেন এটর্নী সোমা সাঈদ ও শাহানা হানিফ। বাংলাদেশী আমেরিকান মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা এ দু’জনের অতীত পথ চলা মসৃন ছিলো না মোটেই। এক্ষেত্রে স্বপ্ন ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টা তাদেরকে পৌছে দিয়েছে সম্ভাবনা ও সাফল্যের শীর্ষে।
এটর্নী সোমা সাঈদ নিউইয়র্ক সিটির সিভিল কোর্টের দায়িত্ব পালন করবেন টানা ১০ বছর। সিটির বিচার বিভাগে বাংলাদেশী একজন নারীর প্রতিনিধিত্ব গোটা দক্ষিণ এশীয় কমিউনিটির জন্য গর্বের। কর্ম নিষ্ঠা ও ন্যায়পরায়ণতা সোমা সাঈদকে আরো অনেক দূর এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে। বাংলাদেশী কমিউনিটির প্রত্যাশাও তাই। অপরদিকে শাহানা হানিফ নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে যাচ্ছে। জন প্রতিনিধি হিসেবে আগামী দু’বছর জনগণের দাবি-দাওয়া আদায় ও তাদের পক্ষে কথা বলতে কখনোই পিছপা হবেন না শাহানা হানিফ। ইতোমধ্যেই এর প্রমাণ রেখেছেন তিনি। ট্যাক্সি ক্যাবিদের দাবি আদায়ের সংগ্রামে শামিল হয়ে গ্রেফতার বরণ করেছেন শাহানা হানিফ। তার সামনের রয়েছে অফুরান ভবিষ্যত। রাজনীতিতে অনেক দূর এগুতে পারবেন তিনি এমন প্রত্যাশাই আমাদের। সোমা সাঈদ ও শাহানা হানিফের বিজয়ে আমাদের অভিনন্দন।
Posted ৭:৫০ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৪ নভেম্বর ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh