সম্পাদকীয় | বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর ২০২০
কিছুটা বিলম্বে হলেও ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রস্তুতি চলছে হোয়াইট হাউজে। নির্বাচনে জয়ী জো বাইডেনের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরুর বিষয়ে সম্মতি দেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্প বলেছেন, সরকারের যে সংস্থা ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়টি দেখভাল করে, তাদের যা করণীয়, তা অবশ্যই করা উচিত। যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়টি দেখভাল করে ফেডারেল এজেন্সি জেনারেল সার্ভিস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিএসএ)। জিএসএ বলেছে, ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেন নির্বাচনে জয়ী বলে প্রতীয়মান হওয়ার বিষয়টি তারা স্বীকার করছে। মিশিগান অঙ্গরাজ্যে বাইডেনের বিজয় আনুষ্ঠানিকভাবে ‘সার্টিফাই’ হওয়ার পরই ট্রাম্পের কাছ থেকে এমন নাটকীয় ঘোষণা এল। মিশিগানের ঘটনা ট্রাম্পের জন্য একটা বড় ধাক্কা। ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরুর বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছে বাইডেন টিম। ক্ষমতা হস্তান্তরে রাজি হলেও ট্রাম্প কিন্তু নির্বাচনে পরাজয় স্বীকার করতে এখনো রাজি নন। নির্বাচনে কথিত কারচুপি নিয়ে করা মামলাগুলোও চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন। তবে নির্বাচনের তিন সপ্তাহ পর এভাবে জিএসএকে ক্ষমতা হস্তান্তরে রাজি হওয়ায় একটি বিষয় উঠে এসেছে। আর তা হলো ট্রাম্প দেয়ালের ভাষা বুঝতে পারছেন। বিলম্বে কাজ হবে না, জনরায় মানতেই হবে। জিএসএকে ট্রাম্পের এই নির্দেশনার মাধ্যমে এখন বাইডেন অর্থ ব্যবহারের সুযোগ পাবেন। অফিস ব্যবহার করতে পারবেন এবং কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বসতে পারবেন।
গত ২৩ নভেম্বর জেনারেল সার্ভিস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেনকে প্রস্তুতি শুরু করার চিঠি দিয়েছে। এ চিঠি দেওয়ার কিছুক্ষণ পরেই তিনি জিএসএ প্রধান এমিলি মারফিকে ধন্যবাদ জানিয়ে টুইট করেন। ইতোমধ্যে বাইডেন টিম ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। পেনসিলভানিয়া, মিশিগান ও জর্জিয়ার রাজ্যের ইলেকটোরাল ভোট সার্টিফিকেশনের পর অঙ্কের হিসেবে ট্রাম্পের কাছে নির্বাচনে জয় দাবি করার মতো অঙ্ক মেলানোর সুযোগ অবশিষ্ট নেই। পেনসিলভানিয়া নিয়ে রাজ্যের সুপ্রিম কোর্টে হেরে যাওয়ার পর সার্কিট কোর্টে গেছেন ট্রাম্প। সেখান থেকে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন ট্রাম্পের আইনজীবী। ভোটে অনিয়মের মাধ্যমে ভোটারদের সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘনের প্রতিকার চাওয়া হচ্ছে সুপ্রিম কোর্টের আবেদনে। রাজ্যের ভোট বাতিল করে রাজ্য আইনসভার সদস্যদের ইলেকটোরাল ভোট নিয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়ার নির্দেশ চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করা হয়েছে। রাজনৈতিক ও আইন বিশ্লেষকেরা এ নিয়ে ট্রাম্পের সফল হওয়ার কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না। গত ২৩ নভেম্বর মধ্যরাতের দিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় দফা টুইট বার্তার আগেই ডিপার্টমেন্ট অফ ডিফেন্সের পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে বাইডেন-হ্যারিস প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। ডিপার্টমেন্ট অফ ডিফেন্সের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিভাগটির পক্ষ থেকে দ্রুততার সঙ্গে বিধি অনুযায়ী সব কাজ শুরু করা হবে। প্রথা ও বিধি অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট–ইলেক্ট জো বাইডেন এখন থেকে প্রতিদিনের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা তথ্য পাবেন ডিপার্টমেন্ট অফ ডিফেন্সের কাছ থেকে।
জো বাইডেন নিজের রাজ্য দেলাওয়ারের উইলমিংটনে আবারো ঘোষণা করলেন মিত্রদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলার প্রত্যয়। ঘোষণা করলেন তার প্রশাসনিক টিমের অতি গুরুত্বপূর্ণ ৬টি পদে মনোনীতদের নাম। তারা হলেন তার সরকার পরিচালনার অতি গুরুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদে অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। এই ব্লিঙ্কেন এই মধ্যে বলেছেন, অন্য দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের যে অবনমন সৃষ্টি হয়েছে তা পুনঃস্থাপন করবেন এবং আস্থা ফিরিয়ে আনবেন খুব শিগগিরই। জলবায়ু পরির্বতন বিষয়ক দূত হিসেবে বাইডেন মনোনয়ন দিয়েছেন আরেক ঝানু রাজনীতিক জন কেরিকে। জন কেরি যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে দীর্ঘ সময় পরিচিত মুখ। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত জো বাইডেন ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের পরিচালক হিসেবে এভরিল হেইন্সকে মনোনয়ন দিয়েছেন।হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছেন আলেজান্দ্রো মায়োরকাসকে। হোয়াইট হাউজের ন্যাশনাল সিকিউরিটি উপদেষ্টা হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন জ্যাক সুলিভান। তিনি তার বস জো বাইডেনের প্রশংসা করেছেন। বলেছেন, রাষ্ট্র পরিচালনার অনেক কিছু তিনি তার কাছ থেকে শিখেছেন। তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মানুষের প্রকৃতি। জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের দূত হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছেন লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ডকে।
গত ২৪ নভেম্বর এক সাক্ষাৎকারে বাইডেন জানিয়েছেন, আপাতত তার প্রথম এবং প্রধান লক্ষ্য করোনা সংকট থেকে দেশকে উদ্ধার করা। সেজন্য প্রথমেই টাস্ক ফোর্স তৈরি করেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। এদিকে জিএসএ সম্মতি দেওয়ার পর গত ২৪ নভেম্বর থেকেই নিরাপত্তা সংক্রান্ত গোপন তথ্য তার কাছে আসতে শুরু করেছে। আর্থিক বিষয়েও তিনি রিপোর্ট পেতে শুরু করেছেন। ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মহলের বরাত দিয়ে পলিটিকো বলেছে, ট্রাম্প সবাইকে দেখাচ্ছেন লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। যদিও তাঁর এক পা এখন দরজার বাইরে। আড়ালে নিজেকে গুছিয়ে নেওয়ার কাজও সারছেন তিনি। নিজের সমর্থকদের নিয়ে রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম গড়ার কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন। পরের নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্যও মনস্থির করছেন। রাতদিন বাইডেন টিম কাজ করছে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়টি শান্তিপূর্ণ ও মসৃন করার জন্য। দীর্ঘ ৪৮ বছরের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা সম্পন্ন বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ইতিহাস গড়তে চান। তার কোন বাণিজ্যিক অভিলাষ নেই। একমাত্র মানুষের কল্যাণ করা ছাড়া। আর সেভাবেই চলছে তার সকল প্রস্তুতি। অপরদিকে ট্রাম্প মামলার হুমকি দিলেও আড়ালে তল্পিতল্পা গুটাচ্ছেন হোয়াইট হাউজ থেকে। আমরা চাই আগামী ২০ জানুয়ারি একটি উৎসব মুখর আনন্দঘন অভিষেক।
Posted ৯:৫৬ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh