| বৃহস্পতিবার, ১৮ জুলাই ২০২৪
নির্বাচনী প্রচারণা সভায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন রিপাবলিকান প্রার্থী সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পেনসিলভেনিয়া স্টেটের বাটলার সিটিতে ১৩ জূলাই বিকেলে এ ঘটনায় নিহত হয় আততায়ী। অপরদিকে ট্রাম্পের পাশে থাকা এক ব্যক্তি নিহত ও গুরুতর আহত হয়েছেন অপর এক জন। তার রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী সুস্থ আছেন। এর আগে আততায়ীর হাত থেকে বেঁচে যান জ্যাকসন, টি রুজভেল্ট, এফ রুজভেল্ট, ট্রুম্যান, ফোর্ড রিগ্যান এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প সহ ৬ জন প্রেসিডেন্ট।
ঘটনা বলছে যে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক সহিংসতার বিরুদ্ধে জোরালো আওয়াজ তোলার সময় এসেছে। এমন সময়ে এ গুলি চালানো হলো, যখন রাজনীতিতে সবচেয়ে ভয়ংকর সময় পার করছে যুক্তরাষ্ট্র। এই গুলির মধ্য দিয়ে মূলত মার্কিন রাজনীতির সহিংসতার অধ্যায়কেই আবার নাড়িয়ে দেওয়া হলো। গুলির এ ঘটনার মধ্য দিয়ে যেন এটা ইঙ্গিত দেওয়া হলো, ২০২৪ সালে ভয়ংকর এক প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হতে যাচ্ছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে আর কখনোই হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের এনবিসি নিউজের বিশ্লেষণে এমনটিই লিখেছেন দেশটির রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাংবাদিক জনাথন অ্যালেন। তাঁর মতে, যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক বিভাজন গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছে এবং মেরুকরণের যে রাজনীতি, তা কয়েক দশক ধরেই চলছে। এই যখন পরিস্থিতি, তখন ট্রাম্পকে হত্যাচেষ্টার ঘটনা এতে নতুন অধ্যায় হিসেবে যুক্ত হলো। এ মুহূর্তে অনাকাঙ্ক্ষিত এ ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে নাড়িয়ে দিচ্ছে। এই নির্বাচনকে ঘিরে বেশ কিছু ঘটনা ইতিমধ্যেই ঘটে গেছে, যা আগে ঘটেনি। যেমন এই গুলির ঘটনার ৪৩ দিন আগে ট্রাম্প দোষী সাব্যস্ত হলেন আদালতে। এক পর্নো তারকার মুখ বন্ধ করতে গিয়ে তিনি যে কেলেঙ্কারি করেছিলেন, তাতে তিনিসহ তাঁর সব সহযোগী দোষী সাব্যস্ত হন। এমন ঘটনা এর আগে কখনো ঘটেনি। এর মধ্যে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে বিতর্কে হারিয়ে দিলেন। এ বিতর্কে বাইডেনের অবস্থা এমন হলো, নিজ দলের নেতারাই তাঁকে সরে দাঁড়াতে বলছেন। আবার সুপ্রিম কোর্ট ট্রাম্পকে সুরক্ষা দিচ্ছেন এই বলে যে, তিনি আপাতত দায়মুক্ত।
এসব ঘটনা এর আগে কখনো ঘটেনি। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে রাজনৈতিক সহিংসতার প্রতি সমর্থনের এই উত্থান চরম পক্ষপাতিত্ব, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপতথ্যের ছড়াছড়ি এবং ট্রাম্প ও তাঁর মিত্রদের সহিংস কথাবার্তার মধ্য দিয়ে ঘটেছে। এসব বিষয় একত্র হওয়ায় ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি হাজার হাজার মানুষ ক্যাপিটল হিলে হামলা চালিয়েছিলেন। রাজনৈতিক সহিংসতা ও গণতন্ত্রের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বিষয়ে একটা সিরিজের অংশ হিসেবে গার্ডিয়ানে প্রথম প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় জানা যাচ্ছে, দুই পক্ষের মধ্যেই সহিংসতায় সমর্থনের কারণ হলো, স্টাবলিশমেন্টের ওপর অবিশ্বাস ও ষড়যন্ত্র তত্ত্ব। দুই পক্ষে যাঁরা সহিংসতা সমর্থন করেন, তাঁরা প্রধানত শহুরে আমেরিকান।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার দুই মাস পর ১৯৮১ সালে গুলি খেয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান। এর ৪৩ বছর পর রিপাবলিকান শিবিরে এমন ঘটনা ঘটল। ট্রাম্প মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে গেলেন। এরপর তিনি দলের মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের চার প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন, জেমস গারফিল্ড, উইলিয়াম ম্যাককিনলে এবং জন এফ কেনেডিকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। সে সময় মার্কিনিরা যেমন ব্যথিত ও হতবিহ্বল হয়েছিলেন, তেমনি এবারও হতবিহ্বল হয়েছেন। এ ঘটনা বাইডেন ও ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কতটা প্রভাব ফেলবে, এটা স্পষ্ট নয়। তবে এটা স্পষ্ট, ট্রাম্পকে হত্যাচেষ্টার ঘটনা দেশকে নাড়া দিয়েছে। গুলির ঘটনার পর মুষ্টিবদ্ধ হাতে ট্রাম্পকে দেখা গেছে। ওই সময় ট্রাম্পের মুখমণ্ডলে রক্ত ছিল।
কিন্তু শনিবার সন্ধ্যায় এ ঘটনার পর রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়, ট্রাম্পের গাড়িতে গুলি করা হয়েছে। এমন তথ্যে ট্রাম্পের কট্টর সমর্থকেরা উজ্জীবিত হয়েছেন। ট্রাম্পকে হত্যাচেষ্টার ঘটনা নির্বাচনকে ঘিরে যত ঘটনা ঘটেছিল সবকিছুকে ঢেকে দিয়েছে। বাইডেন যে নিজ দলে সমালোচনার মুখে পড়েছেন, তাও ঢেকে গেছে এ ঘটনায়। ট্রাম্প ও বাইডেন শিবির দুই পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দলের নেতারা যেন এই গুলির ঘটনা নিয়ে কোনো মন্তব্য না করেন। কিন্তু কে শোনে কার কথা। ট্রাম্পের পক্ষ থেকে বাইডেনের ওপর দায় চাপানো হচ্ছে গুলির ঘটনায়। এতে বিভেদ বাড়ছে। অর্থাৎ বিভাজন সামনে আসছে। আর বিভেদ স্পষ্ট হয়ে ওঠায় যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন এবং গণতন্ত্র একটি বড়োসড়ো ঝাঁকুনি খাচ্ছে।
Posted ১২:৪৩ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৮ জুলাই ২০২৪
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh