| বৃহস্পতিবার, ২৭ আগস্ট ২০২০
যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর বন্দুকের গুলিতে প্রাণ হারায় ৩৬ হাজার মানুষ। গড়ে প্রতিদিন ১০০ জন আমেরিকানকে শিকার হতে হয় অপমৃত্যুর। ভয়ঙ্কর এ পরিসংখ্যান নিয়ে সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত, উদ্বিগ্ন-উৎকন্ঠিত। শিশু থেকে সব বয়সী মানুষই মরছে বন্দুক সহিংসতায়। এ নিয়ে বিতর্ক সমালোচনা চলছে বিরামহীন। কখনো কখনো আন্দোলনও গড়ে উঠেছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। রাজনৈতিক সদিচ্ছ্বার অভাবে বরাবরই চাপা পড়ে গেছে বিষয়টি। আগ্নেয়াস্ত্রের অবাধ লাইসেন্স এবং বহনের ক্ষেত্রে কঠোর আইন প্রণয়ন জরুরী হয়ে পড়েছে। দেশের সাধারণ মানুষের পাশাপাশি রাজনীতিকগণও বিষয়টি অনুধাবন করেন। কিন্তু ন্যাশনাল রাইফেল এসোসিয়েশনের বাঁধার মুখে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন কার্যকর করা সম্ভব হচ্ছে না। ন্যাশনাল রাইফেল এসোসিয়েশন বা এনআরএ অত্যন্ত শক্তিশালী একটি সংগঠন। তাদের প্রতি একশ্রেনীর রাজনীতিকদের রয়েছে জোর সমর্থন। এমনকি অনেক রাজনীতিক এই সংগঠনের সক্রিয় সদস্য ও কর্মকর্তা। তাদের সদিচ্ছার অভাবেই আইনটি দেখছে না আলোর মুখ। ৩৬ হাজার মানুষ নিহত হলেও বন্দুকের গুলিতে আহতের সংখ্যা বছরে লক্ষাধিক। ২০১২ সালে ৩৯ হাজার ৭৭৩জনের প্রাণহানি ঘটে শুধু বন্দুক সহিংসতায়। যা তার পূর্বের ৪০ বছরের মধ্যে ছিলো সর্বোচ্চ। ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালে বন্দুক সহিংসতায় মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পায় ১৬ শতাংশ।
চলতি বছরের প্রথমার্ধের শেষের দিকে বন্দুকের গুলিতে মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পেয়েছে ব্যাপক হারে। বন্দুক সহিংসতার সবচেয়ে বেশী ঘটনা ঘটে আত্নহত্যার মধ্য দিয়ে। প্রায় ৬১ শতাংশ অর্থাৎ ২২ হাজার ২৭৪ জন মানুষ বন্দুকের গুলি চালিয়ে কেড়ে নেয় তার নিজ জীবন। বন্দুকের গুলিতে খুনের সংখ্যা বছরে গড়ে ১২ হাজার ৮৩০জন। যার আনুপাতিক হার ৩৫শতাংশ। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে বছরে মারা যায় ১.৪ শতাংশ মানুষ। যার সংখ্যা ৪৯৬ জন। অপরদিকে অনিচ্ছাকৃত যা অসাবধানতাবশত গুলিতে মারা যায় ৪৮৭ জন আমেরিকান। এই হার ১.৩ শতাংশ। এছাড়া অনিরূপিত মৃত্যুর সংখ্যা ২৯৫ জন। যুক্তরাষ্ট্রে বিদ্যামান দুর্বল বন্দুক আইন ও আগ্নেয়াস্ত্র সহজলভ্য হওয়ার কারণে প্রতিদিন প্রাণহানি ঘটছে বেঘুরে। বন্দুক সহিংসতায় সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটে ১০ স্টেটে। যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্বে অন্যান্য দেশের তুলনায় আমেরিকানদের বন্দুকের গুলিতে মৃত্যুর সম্ভাবনা ২৫ শতাংশ বেশি। এদেশে ৫১ শতাংশ মানুষ আত্মহননের পথ বেছে নেয় বন্দুকের গুলিতে। বন্দুকে গুলি সার্বক্ষণিক লোড করা থাকে এমন পরিবারে বড় হচ্ছে ৪৬ লাখ শিশু। ফলে বছরে মারা যাচ্ছে ১ হাজার ৫’শ শিশু। পুলিশের গুলিতে শ্বেতাঙ্গদের চেয়ে কৃষ্ণাঙ্গদের মৃত্যুহার পাঁচগুণ বেশি। বন্দুক সহিংসতার খাতে বার্ষিক ব্যয়ের পরিমাণ ২২৯ বিলিয়ন ডলার।
আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন কার্যকর করতে হলে কংগ্রেসকে পালন করতে হবে জোরালো ভূমিকা। এজন্য প্রয়োজনে চাপ সৃষ্টি করতে হবে তাদের উপর। বন্দুক সহিংসতার ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে জনমনে। বিশেষ করে আগ্নেয়াস্ত্র আইন এবং অস্ত্র বহনের দায়িত্বশীলতা সম্পর্কে সতর্ক করতে হবে সবাইকে। এ নিয়ে জনসমর্থন সৃষ্টি করতে হবে তৃণমূল পর্যায়ে। যে সকল পরিবারের সদস্য বন্দুক সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছেন এবং যারা আহত হয়েছেন তাদেরকে সামনে নিয়ে আসতে হবে। সাধারণ নির্বাচনের পূর্বে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন ইস্যুটি জোড়ালোভাবে তুলে ধরতে হবে। এক্ষেত্রে গণমাধ্যম পারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে। প্রতিদিন, প্রতিবছর এভাবে প্রাণহানি ঘটতে থাকলে মানুষ আরো অসহায় হয়ে পড়বে। তেমনি লোপ পাবে মানবিকতা। মানুষের জীবনের নিরাপত্তা বিধানের বিষয়টি রাষ্ট্রকেই নিশ্চিত করতে হবে। দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন।
Posted ১০:২০ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৭ আগস্ট ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh