| বৃহস্পতিবার, ১৫ অক্টোবর ২০২০
একের পর এক নৃশংস সব নারী ধর্ষণের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের সচেতন মানুষ এখন বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। ক্ষুব্ধ ও প্রতিবাদী মানুষ ধর্ষণকারীদের ফাঁসির দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠেছেন এবং ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এ নিয়ে অনেক কথা আলোচিত হয়েছে, অনেক কথাই আলোচিত হয়নি। নি:সন্দেহে আইন কঠোর এবং প্রয়োগ আরো কঠোর হওয়া উচিত। কিন্তু বাংলাদেশে আইনের কঠোর প্রয়োগ হয় না এবং সরকার দলীয় ও প্রভাবশালী অপরাধীরা সহজে পার পেয়ে যায় বলে সমাজ থেকে ছোট বড় কোন অপরাধ ও অনাচার দূর হয় না। সেই উদাহরণ ভুড়ি ভুড়ি সামনেই আছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০৩ প্রতিপক্ষকে হেনস্তার কাজে ব্যবহার করা হয়। পুলিশের ভাষ্যমতেই জানা যায়, এসব মামলার ৮০ ভাগেরই কোনো বাস্তব ভিত্তি পাওয়া যায় না। ২০১৮ সালের ১৫ হাজার মামলার অভিযোগের ৪ হাজারটির কোনোই সত্যতা মেলেনি।
২০১৭ সালে মাত্র সাড়ে ৭০০-র মতো মামলার বিচার হয়েছে। জামিন-অযোগ্য অপরাধ বিধায় প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে বা প্রতিশোধ নিতে অনেক নারীকে এসব মিথ্যা মামলায় ব্যবহার করা হচ্ছে। এই আইনে ৯০ দিনের মধ্যে দ্রুত বিচার করতে হয়। ফলে বিবাদীপক্ষকে চাপের মুখে ফেলে একদল অপরাধী টাকাকড়ি নিয়ে মামলায় আপস-নিষ্পত্তি করে। অথচ আইনটি কার্যকর করা হয়েছিল নির্যাতন থেকে নারীদের সুরক্ষার জন্য। এই আইনেই তো ধর্ষণের শাস্তি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড আছে। ধর্ষণজনিত হত্যা হলে সরাসরি সম্পৃক্ত সবার জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান তো রয়েছেই। নারী নির্যাতন (নিবর্তক শাস্তি) অধ্যাদেশ, ১৯৮৩, এবং ১৯৯৫ ও ২০০০ সালের আইনেও শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডই ছিল। কিন্তু বিচার সম্পন্নের হার সাড়ে তিন ভাগের মতো। শাস্তির হার এক ভাগেরও নিচে। অর্থাৎ, কড়া আইন তো আছেই। সমস্যা তাহলে কী? সমস্যা আইনের প্রয়োগহীনতা। অনেকে যে প্রসঙ্গগুলো ইতিমধ্যে এনেছেন, সেগুলোর অন্যতম হলো, ধর্ষণের পর হত্যা বেড়ে যাবে। ধর্ষক মৃত্যুদণ্ডের ভয়ে তার শিকারকেই হত্যা করবে।
নমুনা ধ্বংস করতে লাশ পোড়ানো, গুম বা বিকৃত করার মতো অপরাধও বাড়বে। ঘটনাচক্রে আক্রান্ত ব্যক্তি বেঁচে গেলেও ধর্ষক যেভাবেই হোক ভিকটিমকে বাধ্য করবে আদালতে গিয়ে উল্টো জবানবন্দি দিতে। এটা বলতে যে সে ধর্ষণের শিকার হয়নি। এখানেই ক্ষমতা-সম্পর্কের প্রশ্ন চলে আসে। ধর্ষকেরা প্রায়ই ক্ষমতাবান হয়। ভিকটিম তাদের দাপটের কাছে নতি স্বীকার করবে না, এমন সম্ভাবনা কম। বিশেষত আমাদের দেশে আদালতের দীর্ঘসূত্রতা এবং বিচার-ব্যবস্থার গিঁটে গিঁটে দুর্নীতি লেপ্টে থাকায় আশ্বস্ত থাকার কোনোই সুযোগ নেই। শাস্তির বিধান তো থাকতেই হবে। পাশাপাশি সরকারের উচিত একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিরোধ-মোর্চা আন্দোলন গড়ে তোলা। স্কুল পর্যায়ে স্কুল ব্রিগেড তৈরি করা যায়। ইউনিয়ন থেকে ওয়ার্ড পর্যায়ে নারীদের সংগঠিত করা যায়। সে জন্য সাহায্য সংস্থাগুলোর মাধ্যমে নারী ও শিশুদের জন্য বিশেষ সুরক্ষামূলক প্রকল্পের ব্যবস্থা করা যায়। অন্যথায় কঠিন আইনের সুযোগ নিয়ে অনেক নারী অপরাধে জড়াবে। অনেক নারীর জন্য আবেগীয় কারণে অভিযোগ দায়েরের রাস্তাটিও বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ অপরাধ কেবল দন্ডের ওপর নির্ভর করে না, আরও হাজারটা কারণে বাড়ে বা কমে অথবা একই থাকে। সকলের সুমতি হোক। ধর্ষণের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে উঠুক।
Posted ১১:০৩ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৫ অক্টোবর ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh