| বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর ২০২০
যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন জো-বাইডেন। নানা কারণেই গত ৩ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ৫৯তম নির্বাচন ছিলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যয়বহুল এবং আলোচিত এ নির্বাচনে কে জয়ী হবেন বাইডেন না ট্রাম্প এ নিয়ে বড় ধরণের অনিশ্চয়তা ছিলো আগে থেকেই। যদিও নির্বাচনে জয় পরাজয়ের বিষয়টি কখনোই নিশ্চিত থাকে না। তারপরও এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে ঘিরে জনমনে একধরণের আশংকা বিরাজমান ছিলো। নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে ট্্রাম্পের আগাম হুমকির কারণে এমন আশংকা দেখা দেয়। পূর্বাহ্নেই ট্রাম্প পরাজয় মেনে না নিয়ে আইনী লড়াইয়ের ঘোষণা দেন। এমনিতেই করোনা ভাইরাসের কারণে বিধস্ত দেশের অর্থনীতি জনজীবনে বড় ধরণের চাপ সৃষ্টি করেছে। অপরদিকে ঘাতক ব্যধি করোনা প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করে উল্টো বাহাস করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এছাড়া তার শাসনামলে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেনীর আমেরিকানরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেন। পক্ষান্তরে ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রার্থী জো বাইডেন নির্বাচনী প্রচারণায় নামেন গণমুখী ইস্যু নিয়ে। দীর্ঘ প্রায় অর্ধ শতাব্দী ধরে লব্ধ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা তিনি কাজে লাগিয়েছেন নির্বাচনে। ফলে আমেরিকান জনগণ সঠিক সময়ে নিয়েছেন সঠিক সিদ্ধান্ত । বিজয়ী করেছেন জো বাইডেনকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে।
সাধারণ নির্বাচনের পূর্বেই জনগণ ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন আগাম ভোট প্রদানের মাধ্যমে। রেকর্ড সংখ্যক আগাম ভোটের সংখ্যা ছিলো মোট ভোটের দুই তৃতীয়াংশ। শুধু তাই নয় গত ৩ নভেম্বরের নির্বাচনে মোট ভোট প্রদানের হার ছিলো শতাব্দীকালের সর্বোচ্চ। জনগণ স্বত:স্ফূর্তভাবে ভোট কেন্দ্রে যান আর তাদের একমাত্র লক্ষ্য ছিলো ট্্রাম্প শাসনের অবসান ঘটানো। শেষ পর্যন্ত হয়েছেও তাই। নির্বাচনের পর তাৎক্ষণিকভাবে ফলাফল না পাওয়ায় জনমনে উদ্বেগ উৎকন্ঠা বেড়ে যায়। এ উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বব্যাপী। টানা চারদিন চরম অনশ্চিয়তা শেষে অবসান ঘটে শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির। ব্যাটল গ্রাউন্ড পেনসিলভেনিয়ায় ফলাফল ঘোষণার মধ্য দিয়ে নিশ্চিত হয় বাইডেনের বিজয়। এর আগে ব্যাটলগ্রাউন্ড উইসকনসিন ও মিশিগানে জয়লাভের পর বাইডেনের বিজয় অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যায়। নড়েচড়ে বসে ট্রাম্প শিবির। ট্রাম্পের দুর্গ বলে পরিচিতি মিশিগানে দেড়লক্ষ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন তিনি। এরপরই ভূয়া অভিযোগ আনেন নির্বাচনে অনিয়ম ও জালিয়াতির। নির্বাচনে তিনি প্রতারিত হয়েছেন বলে উত্থাপন করেন হাস্যকর অভিযোগ। ট্রাম্প শিবির দাবি জানায় পেনসিলভেনিয়া, জর্জিয়াসহ কয়েকটি রাজ্যে ভোট গণনা বন্ধের।
এজন্য তার সমর্থকদেরকে রাস্তায় নামান ট্রাম্প। কয়েকটি রাজ্যে মামলা দায়ের করেন ভোট জালিয়াতির। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। ভরাডুবি হয়েছে ট্রাম্পের। বিপুল ভোটে এগিয়ে থাকা অ্যারিজোনা ও জর্জিয়ার ফলাফল ছাড়াই ইলেকটোরাল কলেজের ৫৩৮টির মধ্যে ২৯০টি ভোট পেয়েছেন বাইডেন। তাকে ঘোষণা করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে। এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে অবসান ঘটেছে সকল জল্পনা-কল্পনা উৎকন্ঠার। স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলেছে বিশ্ববাসী। সর্বশেষ ফলাফল অনুযায়ী বাইডেন পাবেন ইলেকটোরাল কলেজের ৩০৬ ভোট। শুধু তাই নয় পপুলার ভোটেও এগিয়ে আছেন বাইডেন। এ পর্যন্ত তার প্রাপÍ পপুলার ভোট ট্রাম্পের চেয়ে ৪৬ লক্ষাধিক বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এটা নজির বিহিন ঘটনা। বাইডেনের রানিংমেট কামালা হ্যারিসও সৃষ্টি করেছেন নূতন ইতিহাস। প্রথম নারী এবং কৃষ্ণাঙ্গ ভাইস প্রেসিডেন্ট কামালা হ্যারিসের বিজয় যুক্তরাষ্ট্রের নারী সমাজের জন্য আনন্দের ও সম্মানের বিষয় বলে বিবেচিত হচ্ছে।
আমেরিকার ৮০ শতাংশ মানুষ অভিনন্দিত করেছে বাইডেন হ্যারিস জুটিকে। বিশ্ব নেতৃবৃন্দের অভিনন্দন পাল্লা ভারী হচ্ছে ক্রমেই। বিজয়ী ভাষণে বাইডেন জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন। নিজেকে উল্লেখ করেছেন সকল আমেরিকানের প্রেসিডেন্ট বলে। অপরদিকে আমেরিকান ঐতিহ্যকে জলাঞ্জলী দিয়ে আইনী লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন ট্রাম্প। আমেরিকানদেরকে দেখাচ্ছেন সুপ্রীম কোর্ট। অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন পরাজয় মেনে নিতে। নজিরবিহিন গোয়ার্তুমি করছেন ক্ষমতা হস্তান্তরের ক্ষেত্রে। আমরা মনে করি দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে ট্রাম্প তার অবস্থান পরিবর্তন করবেন। মেনে নেবেন বাস্তবতা। এটাই আমেরিকার ইতিহাস, ঐতিহ্য ও গণতন্ত্রের সৌন্দর্য্য। মহান রাষ্ট্রের নব নির্বাচিত মহান নেতা জো বাইডেন ও তার রানিংমেটকে আমাদের প্রাণঢালা অভিনন্দন।
Posted ১০:৪৫ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh