| বৃহস্পতিবার, ০১ অক্টোবর ২০২০
বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাস বিশ্বমানবতার জন্য এক অভিশাপ। চীনের উহান শহরে গত নভেম্বর মাসে উৎপত্তি কোভিড-১৯ এর। চলতি বছরের জানুয়ারী থেকে বিশ্বব্যাপী বিরামহীন যুদ্ধ চলছে অশরীরি এই মরণব্যাধির বিরুদ্ধে। করোনা সংক্রমনে ভেঙ্গে গেছে গ্লোবাল ভিলেজ। শুরুতে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে জল-স্থল-অন্তরীক্ষের সকল যোগাযোগ ব্যবস্থা। ছোট বড় সকল রাষ্ট্র পরিণত হয় একেকটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপে। সীমিত হয়ে পড়ে মানুষের চলাচল। একদেশ থেকে আরেক দেশ। এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়ি। এমন কি বাড়ীর এক ঘর থেকে অন্য ঘরে নিষিদ্ধ হয়ে যায় স্বজনের প্রবেশাধিকার। ব্যবসায় বাণিজ্য, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ে বন্ধ হয় যায় সকল উদ্যোগ আয়োজন । মানুষ পরিচিত হয় লক ডাউন, সামাজিক দূরত্ব, কোয়ারেন্টাইন ধরণের নূতন নূতন শব্দের সাথে। ভয়াবহ এ ঘাতক ব্যাধির হাত থেকে রেহাই পায়নি কোন ধর্ম-বর্ণের মানুষ। রক্ষা পায়নি মহা শক্তিধর ব্যক্তি বিশেষ ও রাষ্ট্র। করোনা ভাইরাসের প্রথম সংক্রমনের ঢেউ বিশ্বের প্রায় সবগুলো দেশেই আছড়ে পড়ে। ইতোমধ্যে করোনায় বিশ্বব্যাপী প্রাণহানির সংখ্যা ১১ লক্ষ ছাড়িয়ে গেছে। আক্রান্ত হয়েছে ৩৪ কোটি মানুষ। সবচেয়ে বেশী মানুষ আক্রান্ত এবং মৃত্যুবরণ করেছে যুক্তরাষ্ট্রে। অর্থ-বিত্ত, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও আধুনিক চিকিৎসা সেবার সূতিকাগার বলে খ্যাত এদেশটি এখনও পাড় করছে অস্থির সময়। গত মার্চে কোভিড-১৯ এর সংক্রমন শুরু হওয়ার পর এপর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাস সংক্রমনে মৃত্যু ঘটেছে ২লাখ ১০ হাজার মানুষের। মৃত্যুর প্রকৃত পরিসংখ্যান এর চেয়েও অধিক বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। আর দেশটিতে সবচেয়ে বেশী মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে নিউইয়র্ক নগরীতে। এখানে মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার। মৃত্যুর এ মিছিলে যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে প্রায় তিনশত বাংলাদেশী। নজিরবিহীন এ মহামারীতে দেশটির অর্থনীতিতে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ মন্দা।
এখনো বেকারত্বের অভিশাপ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকন্ঠায় দিন কাটাচ্ছে তিন কোটি মানুষ। দীর্ঘ লক ডাউনের পর বিভিন্ন রাজ্যে চলছে নূতন স্বাভাবিকতায় ফিরে যাওয়ার প্রচেষ্টা। সংক্রমণ কিছুটা স্তিমিত হওয়ায় এমন উদ্যোগ আয়োজনে মানুষ যখন কিছুটা আশাবাদী হয়ে উঠেছে ঠিক তখনি করোনা ভাইরাস সংক্রমনের দ্বিতীয় ঢেউ আসছে। নূতন করে শুরু হচ্ছে সংক্রমন। আর এ সংক্রমন প্রথম ঢেউয়ের চেয়েও মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে বলে আভাস ইঙ্গিত দিচ্ছেন সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞগণ। তাদের মতে সার্বিক পরিস্থিতি অনুকূলে না এলে এ বছরের শেষ নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুর সংখ্যা ৬ লক্ষাধিক ছাড়িয়ে যেতে পারে। করোনা ভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হতে পারে আগামী অক্টোবর মাসেই । যা নভেম্বরের প্রথম দিক থেকে চরম অবস্থায় পৌছতে পারে বলে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন সংক্রামক ব্যাধি বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা। আট মাস আগে যখন যুক্তরাষ্ট্রে করোনা হানা দিয়েছিল, তখন কেউ হয়ত ভাবতেই পারেনি কোভিড-১৯ এতটা ভয়ঙ্করভাবে দেশটিকে আক্রান্ত করবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমণ ও মৃত্যুর দ্বিতীয় পর্যায়ের আশঙ্কা বহুদিন থেকেই করা হচ্ছে। এখন তারা অনেকটা নিশ্চিতভাবেই বলছেন যে, এটি সম্ভবত আরো বিপর্যয়কর হবে।
বিশেষজ্ঞরা আশংকা করছেন যে ৩ নভেম্বরের নির্বাচনের আগে থেকে দ্বিতীয় পর্যায়ে সংক্রমণের ব্যাপকতা বৃদ্ধি পেতে থাকবে। ভয়াবহ রূপ নেবে কয়েক সপ্তাহ পর। যখন শীত জাঁকিয়ে বসবে। শ্বাস-প্রশ্বাস সংক্রান্ত অন্যান্য ভাইরাসের প্যাটার্নের কারণে কোভিড ১৯ এর শীতকালীন প্রকোপের শোচনীয় অবস্থার কথা বলা হচ্ছে। জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির স্কুল অফ মেডিসিনের একজন এপিডেমিওলজিষ্ট এলি ক্লেইন বলেছেন, ‘আমার মনে হয় করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় তরঙ্গ আসছে। শীতের সাথে আসছে এটা বড় ব্যাপার নয়, বরং কতোটা ভয়াবহভাবে আঘাত হানতে পারে সেটি উদ্বেগের বিষয়।’ গবেষকরা এমন এক সময়ে তাদের সতর্কতা ব্যক্ত করছেন যখন মিডওয়েষ্টে সংক্রমণ হার বৃদ্ধির ঘটনা সত্বেও গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই জাতীয়ভাবে আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যু হার উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে। শুধু যুক্তরাষ্ট্রই নয় গোটা বিশ্ব জুড়ে পুনরায় আঘাত হানছে করোনা।
করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলা করতে না পারলে মানব জাতিকে বড় ধরণের মাশুল গুনতে হবে। এর ভয়াবহতা আঁচ করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং বিভিন্ন দেশের সরকার ও সচেতন শ্রেনী উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। যেকোন মূল্যে মানুষকে প্রস্তুত হতে হবে। গ্রহণ করতে হবে সচেতনামূলক ব্যবস্থা। রাষ্ট্রীয়, সামাজিক ও ব্যক্তিগত জীবনে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাগুলো মেনে চলার কোন বিকল্প নেই। বিশেষ করে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, ঘরের বাইরে সার্বক্ষণিক মাস্ক পরিধান করা, সমাবেশ এড়িয়ে চলা। প্রয়োজন হলে কোয়ারেন্টাইন মেনে চলা। এসব মেনে চলে নিজেকে করোনা সংক্রমন থেকে দূরে রাখার পাশাপাশি অপরকেও নিরাপদ রাখা জরুরী। মানুষ তার জীবনকেই সবচেয়ে ভালোবাসে। আর জীবন একটাই। মহামারী কেটে গেলে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবো আমরা। উপভোগ করার সুযোগ পাবো সবধরণের অনুষ্ঠানাদি। সেজন্য করতে হবে আরো কিছুটা সময় অপেক্ষা। অন্তত ভ্যাকসিন বাজারে না আসা পর্যন্ত। কোন সংক্রমন ব্যাধিই দীর্ঘস্থায়ী হয় না। মহান সৃষ্টিকর্তা এর হাত থেকে এবারো মানবজাতিকে নিশ্চয়ই রক্ষা করবেন। তবে এজন্য আমাদেরকে ধৈর্য্য ধরতে হবে। সংক্রমন রোধে মেনে চলতে হবে সকল ধরণের স্বাস্থ্যবিধি। ভরসা রাখতে হবে মহান আল্লাহর তায়ালা’র প্রতি।
Posted ৪:০০ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০১ অক্টোবর ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh