| শনিবার, ১১ জুলাই ২০২০
মহামারি করোনা ভাইরাসের ভয়াল থাবায় গোটা বিশ্ব বিপর্যস্ত। অশরীরি এ ঘাতকের বিরুদ্ধে নীরব যুদ্ধ চলছে এখনো। বড় বেশী অস্থির সময় পাড় করছে পৃথিবীর মানুষগুলো। বছরের শুরুতেই ছড়িয়ে পড়া ভাইরাস করোনা ভেঙ্গে দিয়েছে কথিত গ্লোবাল ভিলেজ। সর্বাধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা করে দিয়েছে বিচ্ছিন্ন। প্রতিটি মানুষের মাঝে তুলে দিয়েছে অদৃশ্য দেয়াল। মানুষের স্বপ্নের ভবিষ্যতকে ঠেলে দিয়েছে অনিশ্চিত অন্ধকার গহ্বরে। পৃথিবীর সকল কোলাহল, উৎসব আয়োজন থমকে গেছে। বদলে গেছে চিরচেনা সমাজ, সংস্কৃতি পরিবেশ, প্রতিবেশ। অজানা এক আতঙ্ক এখনো পিছু ধাওয়া করছে মানুষের। উদ্বেগ উৎকন্ঠা কাটেনি পুরোপুরি। তিনমাসেরও অধিককাল ঘরবন্দী মানুষ হাপিয়ে উঠেছে। মানুষকে গৃহবন্দী করে দেশে দেশে শহরে বন্দরে দাপিয়ে বেড়িয়েছে হন্তারক করোনা। কেড়ে নিয়েছে লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণ। পারমানবিক অস্ত্রধারী কোন পরাশক্তিও রুখতে পারেনি করোনাকে। হার মেনেছে সকল জাতি গোষ্ঠির মানুষ। বাতাসে ভাসমান অক্সিজেন মানবদেহে প্রবেশে অন্তরায় সৃষ্টি করে অবশ্যম্ভাবী করে তুলে মানুষের মৃত্যু। এ মৃত্যু ছিলো অপ্রত্যাশিত। ভয়ংকর মর্মান্তিক।
যুক্তরাষ্ট্রে এ মহামারির প্রথম সংক্রমন মার্চের প্রথম সিয়াটলে। এরপর মার্চের মাঝামাঝি শুরু হয় নিউইয়র্কে। এভাবে ক্রমান্বয়ে ছড়িয়ে পড়ে গোটা যুক্তরাষ্ট্রে। সরকারী হিসেবেই এ পর্যন্ত এখানে করোনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজারে। আর আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৩ মিলিয়নের অধিক। করোনার হটস্পট খ্যাত নিউইয়র্কে রাজ্য হিসেবে সবচেয়ে বেশী মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। নিউইয়র্কের মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৩৩হাজার। তন্মধ্যে নিউইয়র্ক সিটিতে মৃতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশী। তবে সবকিছু মিলিয়ে প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা আরো অনেক বেশী এমন ধারণা সিডিসি সহ অন্যান্য সংস্থার। প্রতিদিন নিউইয়র্কে সাত আটশ মানুষের মৃত্যুর সংবাদ এসেছে। শিউড়ে উঠেছে গা। সে সময়টায় বিরাজমান আতঙ্ক মানুষকে অস্থির ও আবেগপ্রবণ করে তুলেছে। হাসপাতালে লাশের স্তুপ। হিমঘরে লাশ রাখার জায়গা ছিলোনা। দাফন-কাফনের জন্য অপেক্ষা করতে হতো সপ্তাহধিককাল। তারপর নীরবে নিভৃতে প্রিয়জনকে সমাহিত করতে হয়েছে। লাশের এ সারিতে যোগ হয়েছেন অনেক বাংলাদেশী অভিবাসী আপনজন। যাদের অনেকেই ছিলেন আমাদের অতি কাছের মানুষ। এদের সংখ্যাও প্রায় তিনশ’র কাছাকাছি। কোভিড-১৯ একটি নূতন ভাইরাস। শতাব্দীকালের করোনার মতো এতো ভয়ঙ্কর মহামারি আসেনি। এ রোগের নেই সুনির্দিষ্ট কোন প্রতিকার ও প্রতিষেধক। রোগ নিরাময়ের জন্য নানাবিধ ঔষধ ব্যবহার করা হয়েছে পরীক্ষামূলকভাবে। প্রতিষেধক টিকা আবিষ্কারের চেষ্টা চলছে। এজন্য আরো কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে বিশ্ববাসীকে। ভাইরাসটির ঢেউ এখনো আছড়ে পড়ছে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে। নিউইয়র্কে প্রকোপ অনেকটা কমে গেলেও একেবারে শেষ হয়ে যায়নি। এজন্য সরকার ও সাধারণ মানুষের যৌথ প্রচেষ্টা কাজে লেগেছে। ভালো ফল দিয়েছে তিন মাসব্যাপী লকডাউন। বিশেষ করে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। মাস্ক ব্যবহার করা। সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করা। মহামারির শুরুতে এ ধরণের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা সম্পর্কে জানা না থাকায় বিপুল সংখ্যক মানুষ সংক্রমিত হন। আর এ কারণেই ব্যাপক প্রাণহানি ঘটে। করোনার ছোবলে শুধু প্রাণহানিই নয়।
এর প্রভাব পড়েছে দেশের অর্থনীতিতে। চার কোটি আমেরিকান চাকুরী হারিয়েছেন। বন্ধ হয়ে গেছে অনেক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান। সংক্রমন কমে যাওয়ার সাথে সাথে নিউইয়র্ক স্টেটের বিভিন্ন এলাকা ধাপে ধাপে খুলে দেয়া হচ্ছে। নিউইয়র্ক সিটিতে এখন চলছে তৃতীয় ধাপ। চতুর্থ ধাপ শুরু হওয়ার পর আরো অনেকটা সময় অপেক্ষা করতে হবে নূতন ধাঁচের স্বাভাবিকতায় ফিরতে। জনজীবনে ভীতি এখনো কাটেনি। তারপরও প্রাণের সঞ্চার ঘটছে সবকিছুতে। স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে আমাদেরকে অস্বাভাবিক আচরণ থেকে বিরত থাকতে হবে। মেনে চলতে হবে সামাজিক দূরত্ব। ঘরের বাইরে, গণ পরিবহণে, গণ সমাবেশে মাস্কের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। যারা এসব মানছে না তারা নূতন করে আক্রান্ত হচ্ছেন। বিভিষিকাময় সময়ে ফিরতে না চাইলে এসব নিয়ম মানার কোন বিকল্প নেই।
Posted ১০:১৪ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ১১ জুলাই ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh