| বৃহস্পতিবার, ২৩ জুলাই ২০২০
কথায় আছে ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। ফাহিম সালেহকে খুনের পর নিজকে আড়াল করতে পারেনি খুনি। ফাহিমের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে ধরা খেয়েছে। ম্যানহাটানের নিজ বিলাসবহুল এপার্টমেন্টে নৃশংসভাবে খুন হন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত তরুণ টেকনোলজি ব্যবসার উদ্যোক্তা ফাহিম সালেহ। গত ১৪ জুলাই নিউইয়র্ক পুলিশ তার খন্ড-বিখন্ড লাশ উদ্ধার করে।
ম্যানহাটানের ল্যোয়ার ইস্ট সাইডের দুই বেডরুমের এপার্টমেন্টটি ২২লাখ ডলার মূল্যে একবছর আগে ক্রয় করেন তিনি। আর এ বাসায় খুন হলেন ফাহিম। মাত্র ৩৩ বছর বয়সে টেকনোলজি ব্যবসায়ে উদীয়মান উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন ফাহিম। মেধাবী ফাহিম সালেহর পৈত্রিক নিবাস বাংলাদেশের সন্দ্বীপে।ট্যাক্সি সার্ভিস উবারের সফলতা দেখে ২০১৫ সালে বাংলাদেশে সম্পূর্ন নূতন সাহসী উদ্যোগ গ্রহণ করেন ফাহিম। প্রতিষ্ঠা করেন ‘পাঠাও’ নামে একটি পরিবহণ কোম্পানী। মোটর সাইকেলে যাত্রী পরিবহণের নতুন উদ্যোগ দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠে বাংলাদেশে। স্বল্প সময়ে ট্রাফিক জ্যামের ঝামেলা এড়িয়ে যাত্রীদেরকে গন্তব্যে পৌছে দিতে প্রতিষ্ঠিত “পাঠাও” কোম্পানী অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করে। এক পর্যায়ে তা দেশের সীমানা ছাড়িয়ে সম্প্রসারিত হয় নাইজেরিয়া, কলাম্বিয়া, নেপাল, ইন্দোনেশিয়া সহ অন্যান্য দেশে। নাইজেরিয়ায় পাঠাও’র আদলে ফাহিম চালু করেন ‘গোকাডা’। তিনি হন এর প্রধান নির্বাহী। অসম্ভব মেধার অধিকারী ফাহিম সালেহর উদ্ভাবনী শক্তি ছিলো অত্যন্ত প্রখর। প্র্যাঙ্ক ফোন অ্যাপ তৈরির মাধ্যমে সুনাম কুড়ানোর পাশাপাশি বছরে কম করে হলেও ২০ লাখ ডলার আয় করেন তিনি। ফাহিম নিউইয়র্কের একটি হাইস্কুলে পড়ার সময় ‘উইজ টিন’ নামে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করে বেশ অর্থ আয় করে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছিলেন। এরপর ম্যাসাচুসেটস স্টেটের বেন্টলি ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার ইনফরমেশন সিস্টেমে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন ফাহিম। সম্প্রতি তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার সিলিকন ভ্যালিতে একটি নতুন কোম্পানী চালু করেছেন বলে জানা গেছে। ফাহিম বিনোদনমূলক অ্যাপারেটস কোম্পানী ‘কিকব্যাকের’ প্রতিষ্ঠাতা ও এডভেঞ্চার ক্যাপিটালেরও সহপ্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।
হত্যার তিন দিনের মাথায় খুনী তারই সাবেক সহকারীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ফাহিম সালেহকে হত্যার পর তাঁর ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করছিলো খুনী হ্যাসপিল। ক্রেডিট কার্ড দিয়ে উবার পরিবহনের ভাড়া মিটিয়েছেন হোম ডিপোট নামের দোকানে ইলেকট্রিক করাত কেনার জন্য যাওয়া– আসার সময়ে। ক্রেডিট কার্ডের সূত্র ধরেই পুলিশ তাঁকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয় এবং ১৭ জুলাই সকালে ম্যানহাটনের এপার্টমেন্ট থেকে সন্দেহভাজন খুনী টাইরেস ডেভোন হ্যাসপিলকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ।তার বিরুদ্ধে সেকেন্ড ডিগ্রি মার্ডারের অভিযোগ আনা হয়েছে। বিচার প্রক্রিয়া শুরুর উদ্দেশ্যে শুক্রবার মধ্যরাতে তাকে আদালতে তোলা হয়। ম্যানহাটনের আসিস্ট্যান্ট ডিসট্রিক্ট এটর্নি লিন্ডা ফোর্ড আদালতে বলেন, হ্যাসপিলের কেনা ইলেকট্রিক করাত ফাহিম সালেহর অ্যাপার্টমেন্টে পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ভিডিওতে চিহ্নিত খুনির পোশাক মিলেছে হ্যাসপিলের বাড়িতে। হ্যাসপিল অবশ্য নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন। তবে আদালত তাকে জামিন দেননি।অপরাধ সংঘটিত হওয়ার আগে-পরের ভিডিও সার্ভিলেন্স থেকে অন্তত দু’জন হ্যাসপিলকে শনাক্ত করেছেন। ১৭ আগস্ট তাকে আবার আদালতে হাজির করতে বলা হয়েছে। ফাহিমকে ১৯ জুলাই নিউইয়র্ক সিটি থেকে ৬৫ মাইল দূরে অরেঞ্জ কাউন্টির নিউ উইন্ডসোর সিটির ‘নূর মিড হাডসন সিমেট্রি’তে দাফনের আগে একইস্থানে অনুষ্ঠিত হয় জানাজা ।ফাহিম সালেহর মতো সম্ভাবনাময় একজন তরুণ খুনের শিকার হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে বাংলাদেশী আমেরিকান শোকাহত। প্রতিটি বিবেকবান মানুষ তার হত্যাকান্ডের সুবিচার দাবি করছে।
Posted ৮:১৬ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৩ জুলাই ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh