সম্পাদকীয় | শুক্রবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২০
যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান বিশ্বে করোনাক্রান্ত ও প্রাণহানির দিক থেকে বরাবরই শীর্ষে। নিউয়র্ক সিটির জনজীবন ও অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয় করোনার প্রথম আঘাতেই। আর সবচেয়ে বেশী মানুষের লাশ পড়েছে নিউইয়র্ক সিটিতে। করোনাকালে নিউইয়র্ক সিটি হয়ে উঠে হটস্পট। প্রায় নব্বুই লক্ষ বাসিন্দার এ নগরীতে করোনা প্রাণ কেড়েছে ২৫ হাজার মানুষের। এ তালিকায় প্রায় আড়াই’শ বাংলাদেশী অভিবাসীও রয়েছে। জুনে এসে কমে যায় সংক্রমন। মৃত স্বদেশী ও স্বজন হারানোর বেদনা প্রশমিত রয়ে গেছে এখনো। এরই মধ্যে আবার ফিরে এসেছে করোনা। মার্চের মাঝামাঝি থেকে জুন পর্যন্ত ভীতি এবং অনিশ্চয়তার মধ্যেই পুরো সময় কেটেছে সবার। কথা ছিলো জুলাই মাসে ধাপে ধাপে সিটির সবকিছু খুলে দেয়ার। কিন্তু নানাবিধ জটিলতায় আশানুরূপ কোন অগ্রগতি নেই। নজিরবিহিন বেকারত্ব, জীবন-যাত্রায় বিরাজমান অস্বাভাবিকতায় বাংলাদেশী অভিবাসীদের মাঝে নেমে এসেছে এক ধরণের হতাশা, উদ্বেগ-উৎকন্ঠা। করোনাকালে সবচেয়ে দীর্ঘায়িত ও কঠোর লকডাউনের কারণে নিউইয়র্ক সিটির অর্থনীতি কার্যত ভেঙ্গে পড়ে । লকডাউনকালে প্রতিদিন সিটি কর্তৃপক্ষকে লোকসান গুনতে হয়েছে ১৭৩মিলিয়ন ডলার। বহুজাতিক এ নগরীতে কর্মজীবী মানুষের সংখ্যা প্রায় ৪৬ লক্ষ।
নিম্ন আয়ের মানুষদের মধ্যে বেশীর ভাগই কাজ করতেন রেস্টুরেন্ট, ট্রান্সপোর্টেশন ও রিটেইল স্টোরে। করোনাকালে এসব কর্মস্থল থেকে চাকুরী হারান সাড়ে ৮ লাখ মানুষ। ফলে নিউইয়র্কে বেকারত্বের হার ৩.৪ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ১৮.৩ শতাংশে। করোনায় সৃষ্ট মারাত্মক অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে উঠতে প্রাথমিকভাবে ফেডারেল সরকার বয়স্ক নাগরিকদের জন্য এককালীন ১২‘শ এবং সন্তানদের জন্য ৫০০ ডলার করে প্রণোদনা চেক প্রদান করে। জুলাই মাসে শেষ হয়ে যায় প্যানডেমিক ভাতার সুযোগ। চাকুরী হারালেও সবকিছু মিলিয়ে জুলাই পর্যন্ত অনেকের দিন ভালোই কাটছিলো প্যানডেমিক আর্থিক সুবিধা পেয়ে। আগষ্টেই আবার শুরু হয় কঠিন সময়। এনিয়ে বেকারদের মাঝে বিরাজ করছে একধরণের অস্থিরতা। ব্যবসার ক্ষেত্রেও তেমন ভালো কোন লক্ষণ নেই। করোনার শুরুতেই মুখ থুবড়ে পড়ে কম্যুনিটির ৯০ শতাংশ ব্যবসায়। পরে গ্রোসারী, সুপার মার্কেট, ফার্মেসী সহ কতিপয় ব্যবসায় কার্যক্রম শুরু হয়। এসব ব্যবসাও চলছিলো সীমিত আকারে। নিউইয়র্ক সিটির ৯৮ শতাংশই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ের অন্তর্ভূক্ত। প্রায় ২ লাখ ২০ হাজার মানুষ কাজ করে সিটির ক্ষুদ্র ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে। বলতে গেলে এরাই নিউইয়র্ক সিটির প্রাণ। করোনায় সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ এসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। মহামারির শুরুতেই পাততারি গুটাতে হয় তাদেরকে। বাংলাদেশী কম্যুনিটির অনেকেরই রয়েছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়। রেস্টুরেন্টগুলো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ের আওতায় পড়ে। করোনাকালে তাদের মাথায় হাত পড়েছে। জীবন যাত্রায় অস্বাভাবিকতা এখনো কাটেনি।
নিউইয়র্কের বাংলাদেশীদেও একটি অংশ ইয়েলো ট্যাক্সি চালকের পেশায় নিয়োজিত। এছাড়া সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনেক বাংলাদেশী কাজ করছেন উবার চালক হিসেবে। করোনাকালে কাজ চলে গেছে এদের অনেকের। অপরদিকে রিয়েল এস্টেট, ট্রাভেল এজেন্ট, টিউটোরিয়াল, ভেন্ডারসহ সবধরণের ব্যবসায়েই ধ্বস নেমেছে বড় ধরণের। সংবাদপত্র, প্রিন্টিং ব্যবসায় সহ কোন কিছুতেই ফিরছে না প্রাণ। সবকিছু মিলিয়ে গোটা নিউইয়র্কবাসীর মাঝেই বিরাজ করছে চরম হতাশা। সন্তানদের নিয়ে ঘরে বন্দী থেকে মানসিক দিক থেকেও ভেঙ্গে পড়ছেন অনেকে। ইমিগ্রেশনের খড়গ ঝুলছে অনেকের মাথার উপর। বাংলাদেশী কম্যুনিটিতে অনেক বাড়ির মালিক ও ভাড়াটের মাঝে চলছে শীতল যুদ্ধ। সম্প্রতি হয়ে যাওয়া নির্বাচনের পরে এখন সময় ক্ষমতার পালাবদলের। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হাত থেকে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের হাতে দায়িত্ব তুলে দেওয়া এখন সময়ের অপেক্ষা মাত্র। হোয়াইট হাউস উদাসীন এবং কংগ্রেস অচল। কেননা, কোনো রাজনৈতিক নেতৃত্ব বা সিদ্ধান্ত আসছে না। আর এমন নেতৃত্বহীন পরিস্থিতির মধ্যেই আসছে শীতকাল। এই শীতে করোনায় সংক্রমণ ও মৃত্যুর পাশাপাশি দেশটিতে বেকারের সংখ্যাও অনেক বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারির আগ পর্যন্ত থাকতে হবে এমন রাজনৈতিক নেতৃত্বহীন অবস্থার মধ্যেই। যা চলমান এই করোনা সঙ্কট আরও বাড়িয়ে তুলবে।
Posted ৯:৪৩ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh