| বৃহস্পতিবার, ৩০ জুলাই ২০২০
বিশ্ব মুসলিম উম্মার মাঝে আবার এসেছে ঈদুল আযহা। মুসলমানদের সর্ববৃহৎ দু’টি ধর্মীয় উৎসবের মধ্যে ঈদুল আযহা ঈদ অন্যতম। ঈদ মানে খুশি তবে একার আনন্দ নয়। বছরে মাত্র দু’বার ঈদ আসে বিশেষ একটা মাহাত্ন্য নিয়ে। আর সেটা হলো পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ব ও সৌহাদ্যপূর্ণ সম্পর্ককে বাড়িয়ে তোলা। ধনী-গরীব, উচুঁ-নীচু, সাদা কালো নির্বিশেষে সকল মানুষ সমান, এই আদর্শে উজ্জীবিত হওয়াই হচ্ছে ঈদের মূল উদ্দেশ্য। ঈদুল আযহা এক্ষেত্রে ত্যাগ-তিতিক্ষা আর আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়ার সর্বোচ্চ নিদর্শন। ঈদুল আযহাকে তাই বলা হয় কোরবানীর ঈদ অর্থাৎ আত্নত্যাগ বা উৎসর্গের ঈদ।
এবার ৩১ জুলাই শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রে এবং ১ আগস্ট শনিবার বাংলাদেশে উদযাপিত হবে ঈদুল আজহা। আর পবিত্র হজ্ব পালিত হচ্ছে ৩০ জুলাই বৃহস্পতিবার। কিন্তু মুসলিম বিশ্বের ইতিহাসে এবারের ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে সম্পূর্ণ ভিন্ন আঙ্গিকে। বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে ঈদুল ফিতরের জামাত যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত হয়নি। মুসলমানরা বড় কোন ঈদ জামাত আয়োজন করতে পারেনি। বাংলাদেশে মসজিদগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্বল্প পরিসরে অনুষ্ঠিত হয়েছে ঈদ জামাত। এবারের ঈদুল আজহার জামাত নিউইয়র্কসহ অন্যান্য স্টেটে সামাজিক দূরত্ব এবং স্বাস্থ্য বিধি মেনে ছোট ছোট জামাতে অনুষ্ঠিত হবে। খোলা মাঠে বড় কোন জামাত আয়োজনের সুযোগ নেই। অপরদিকে বাংলাদেশে করোনা মহামারির পাশাপাশি দেশজুড়ে দেখা দিয়েছে বন্যা। অবর্ণনীয় দুঃখ কষ্টে দিন কাটবে মানুষের। এমতাবস্থায় ঈদের আনন্দ তো দূরের কথা, মানুষ তাদের স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে পারছে না। এবার হজ্বও পালিত হচ্ছে নজিরবিহীনভাবে। অত্যন্ত সীমিতাকারে। মহান আল্লাহ তায়ালা সবাইকে ঈদের আনন্দ উপভোগ করার সুযোগ দিবেন-এটাই আমাদের প্রার্থনা।
ঈদের খুশি মানে কেবল আমাদের খুশি নয়; আল্লাহকে খুশি করার উদ্দেশ্যে ত্যাগ স্বীকার করাই হচ্ছে ঈদুল আযহার মূল কথা। কেননা, স্বয়ং আল্লাহই তার প্রিয় বান্দা বা সৃষ্টির সর্বশ্রেষ্ঠ জীব আশরাফুল মাখলুকাত মানুষ জাতিকে ত্যাগ তিতিক্ষার চেতনায় মহীয়ান করার উদ্দেশ্যে স্মরনীয় একটি ঘটনার মধ্য দিয়ে এই ঈদুল আযহার প্রবর্তন করেন। সেই ঘটনাটি আমরা সকলেই জানি। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এক এক করে তার প্রিয় দুম্বাগুলোর কয়েকটিকে কোরবানী করার পরও স্বপ্নে আল্লাহর আদেশ পেতে থাকলেন সর্বাপেক্ষা প্রিয় হচ্ছে একমাত্র কিশোর পুত্র ইসমাইল (আঃ)। তখন তিনি পুত্র ইসমাইল (আঃ) কেই নিজ হাতে কোরবানী করার প্রস্তুতি নিলেন। আল্লাহকে খুশি করার কথা ভেবে হযরত ইসমাইল (আঃ) রাজি হলেন। এক পর্যায়ে পিতার ধারালো ছুরির নীচে শায়িত হলেন ইসমাইল (আঃ) এবং হযরত ইব্রাহীম (আঃ) নিজের চোখ বেঁধে ছুরি চালালেন প্রিয়তম পুত্রের গলায়। আর এর পরপরই ঘটলো বিস্ময়কর ঘটনাটি। চোখ খুলে তিনি দেখতে পেলেন, পুত্র তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে তার বদলে কোরবানী হয়েছে একটি দুম্বা। অর্থাৎ মহান আল্লাহ হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর সর্বোচ্চ ত্যাগের এই সদিচ্ছ্বায় খুশি হয়েছেন এবং তাৎক্ষণিকভাবে এজন্য তাকে তিনি পুরস্কৃত করেছেন। আর সেদিন থেকেই প্রতিবছর জিলহজ্ব মাসের দশ তারিখে এই কোরবানীর ঈদ বা ঈদুল আযহা পালিত হয়ে আসছে। এই ঈদে প্রত্যেক সামর্থবান মুসলমান গবাদিপশু কোরবানী দিয়ে থাকে। তার মানে কোরবানী নিছক পশু জবাই বা গোশত খাওয়া নয়। এটা একটি প্রতীক মাত্র। কোরবানীর আসল কথা হলো আত্নত্যাগ ও আত্নশুদ্ধি। আর নিজেদের মধ্যকার পশুত্ব বা পাশবিকতাকে কোরবানী করা। মুসলিম উম্মাহ যথাযোগ্য মর্যাদা, ধর্মীয় উৎসাহ, উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালন করবে পবিত্র এই দিবসটি। পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।
Posted ১০:৩৫ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ৩০ জুলাই ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh