| বৃহস্পতিবার, ০৭ জানুয়ারি ২০২১
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ধ্বংস করে দিয়েছেন। পরাজিত হওয়ার পর নির্বাচনে জালিয়াতির মিথ্যে অভিযোগ এনে জাতিকে বিভক্ত করার ভয়ঙ্কর খেলায় মেতেছেন তিনি। সংবিধান, বিচার বিভাগ ও আইনের শাসন অমান্য করে অব্যাহত রেখেছেন ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম। সর্বশেষ গত ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে হামলা চালিয়েছে তার সমর্থকরা।
কংগ্রেসের উভয় হাউজের সম্মিলিত অধিবেশনে ইলেক্ট্রোরাল কলেজ ভোট গণনাকালে হামলায় চালায় তারা। জো বাইডেনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রত্যায়ন করা ঠেকাতে এই নজিরবিহীন হামলা উস্কে দেন ট্রাম্প। এর আগে তিনি জর্জিয়ায় স্টেট সেক্রেটারীকে নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে দেয়ার অনুরোধ করেন। যা ছিলো সম্পূর্ন অনৈতিক। বিশ্বের স্বৈ¦রশাসকদের মতো ক্ষমতা ধরে রাখতে নজিরবিহিন আচরণ করছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এজন্য তিনি আশ্রয় নিচ্ছেন সব ধরণের প্রতারণা ও অনৈতিকতার। ধূলোয় মিশিয়ে দিয়েছেন তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সোয়া দু’শ বছরের গণতান্ত্রিক ইতিহাস-ঐতিহ্য। বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে চলেছেন দেশের সংবিধান ও আইনের শাসনের প্রতি। ক্ষমতালোভী এ মানুষটিকে নিয়ে এখন বিদ্রুপ বাহাস করছে গোটা বিশ্ববাসী। ট্রাম্পকে নিয়ে তার নিজ দল রিপাবলিকান নেতৃবৃন্দও বিব্রত। গোটা দেশটাকে তিনি করে তুলেছেন অস্থিতিশীল। জাতিকে স্পষ্টত তিনি করেছেন দ্বিধাবিভক্ত। শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্বের প্রবক্তা ট্রাম্প কার্যত উসকে দিয়েছেন ভয়ংকর বর্ণবাদী বিদ্বেষ। বিগত চার বছর তিনি যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে একে একে যে সকল সমস্যার সৃষ্টি করেছেন তা দেশটার জন্য মর্যাদা হানিকর।
মানবিক মর্যাদা বোধও বিনষ্ট করেছেন ট্রাম্প। রাষ্ট্রের কল্যাণের চেয়ে তার ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক স্বার্থের বিষয়টি অধিকতর অগ্রাধিকার পেয়েছে তার আচরণে। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এমন অযোগ্য ও অনৈতিক মূল্যবোধহীন প্রেসিডেন্ট কখনো আসেনি। দেশ ও জাতির জন্য অত্যন্ত বিপদজনক এ ব্যক্তিটি গত ৩ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রার্থী জো-বাইডেনের নিকট হেরে যাওয়ার পরও ক্ষমতা ধরে রাখার সবধরণের ফন্দি ফিকির করছেন। হেন কোন অনৈতিক, অগণতান্ত্রিক ও সংবিধান পরিপন্থি কুটচাল নেই যা তিনি চালতে বাকি রেখেছেন। মরিয়া হয়ে উঠেছেন তিনি ক্ষমতা ধরে রেখে হোয়াইট হাউজ না ছাড়ার। নির্বাচনের অনেক আগে থেকেই আঁচ করা যাচ্ছিল পরাজিত হলে ট্রাম্প সহজে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন না। তার ধারণা ছিলো নির্বাচনে সুনিশ্চিতভাবে বিজয়ী হবেন। সেভাবেই সুপ্রীম কোর্টের বিচারক নিয়োগে করেন তড়িঘড়ি। হোয়াইট হাউজে সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পছন্দের ব্যক্তিদের নিয়োগ দেন। ২০১৬ সালের নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পরপর অনেকগুলো বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নেন ট্রাম্প। প্রথম দিকে তার পছন্দনীয় ব্যক্তিদেরকে প্রশাসনের উচ্চপদে আসীন করলেও ট্রাম্পের একগুয়েমি ও অসদারচরণের কারণে এক এক করে অনেক কর্মকর্তা ছেড়ে যান তাকে। সাম্প্রতিক নির্বাচনের পর ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে তালবাহানা শুরু করলে হোয়াইট হাউজ ছেড়েছেন অনেকেই। নির্বাচনে দেশের জনগণ তাকে লাল কার্ড দেখিয়েছেন। ইলেকটোরাল কলেজ ভোটে বড় ধরণের ব্যবধানে হেরেছেন তিনি। কিন্তু নাছোড় এ বান্দা কিছুতেই চাচ্ছেন না ক্ষমতা ছাড়তে। যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রীতি ও ঐতিহ্য বরখেলাপ করে জো-বাইডেনকে অভিনন্দন জানাননি ট্রাম্প। উল্টো নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখান করে বিভিন্ন রাজ্যে আদালতে মামলা ঠুকে দেন। আপ্রাণ চেষ্টা চালান প্রকাশিত ফলাফল বানচালের। বেশ কয়েকটি রাজ্যের আদলত ট্রাম্পের পক্ষ থেকে দায়ের করা মামলা খারিজ করে দিয়েছে ইতোমধ্যে। এ নিয়ে সুপ্রীম কোর্ট পর্যন্ত গিয়েছেন তার আইনজীবীরা। সেখান থেকেও ব্যর্থ হয়েছেন কয়েক দফা।
রাজ্যগুলোর রাজধানীতে ইলেকটোরাল কলেজ ভোট গণনার দিন অনৈতিকভাবে প্রভাব খাটিয়ে ফলাফল তার পক্ষে নেয়ার চেষ্টা করেছেন। বলাবাহুল্য তাতেও ব্যর্থ হয়েছেন ট্রাম্প। এ ঘটনার পর তার দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ট্রাম্পের পক্ষ ত্যাগ করে জো বাইডেনকে অভিনন্দিত করেছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন সিনেটের রিপাবলিকান মেজরিটি লীডার। বলতে গেলে ট্রাম্পের দুর্গ এখন জন মনুষ্যহীন। তারপরও থেমে নেই তিনি। আগামী ২০জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে আনুষ্ঠানিক শপথ গ্রহণ করবেন জো-বাইডেন। তার আগে সামরিক হস্তক্ষেপের হুমকি এবং অভিষেকের দিন পাল্টা সমাবেশের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। ট্রাম্প ভালোভাবেই জানেন ক্ষমতার মোহ ত্যাগ করে হোয়াইট হাউজ তাকে ছাড়তেই হবে। সে বিষয়টিও লক্ষ্যণীয়। গত কয়েকদিনে ৮০ জনকে নিজ ক্ষমতাবলে ক্ষমা করেছেন ট্রাম্প। এদিকে জর্জিয়া সিনেটে রানঅফ ইলেকশনে রিপাবলিকান প্রার্থীদের ভরাডুবি ট্্রাম্পের ক্ষমতার ভিত নাড়িয়ে দিয়েছে। রিপাবলিকানরা এ পরাজয়ের জন্য দায়ী করছেন ্ট্রাম্পকে। ডেমোক্র্যাটরা এই বিজয়ের মধ্য দিয়ে কংগ্রেসের উভয়কক্ষ ও তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। এখন ট্রাম্পের সময় এসেছে প্রস্থানের।
Posted ৭:০৮ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৭ জানুয়ারি ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh