| বৃহস্পতিবার, ১৪ আগস্ট ২০২৫
ছবি : সংগৃহীত
গত ৫ আগস্ট জাতির উদ্দেশ্যে প্রদত্ত ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচন আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে রমজান মাসের আগেই জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা করেছেন। তার ঘোষণা বিপুলভাবে অভিনন্দিত হয়, অন্যদিকে নির্বাচন হবে কিনা, অথবা নির্বাচনকে বানচাল বা বিঘ্নিত করার কোনো চক্রান্ত পরাজিত পক্ষ করবে কিনা তা নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে অনেকের। ড. ইউনুস ভোটারদের উৎসবের সাথে ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার আহবান জানিয়েছেন।
একইসঙ্গে তিনি হুঁশিয়ারিও উচ্চারণ করেন যে একটি গোষ্ঠী নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। তারা দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে দেশের বাইরে বসে এবং ভেতরে থেকে নানা অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। আমাদেরকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, তারা যেন নির্বাচনকে সংঘাতময় করে তোলার কোনো রকমের সুযোগ না পায়। মাথায় রাখবেন, পরাজিত শক্তি নির্বাচনের আগ পর্যন্ত বারবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করবে।
কিন্তু একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সফলভাবে আয়োজন করা গেলে অপশক্তির পরাজয় চূড়ান্ত হবে। তিনি যথার্থই বলেছেন যে, নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে পলাতক শেখ হাসিনা ও তার দলের পক্ষ থেকে এখন যে অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে তার অবসান ঘটবে। কিন্তু তারা যেকোনো সরকারকে বাধাগ্রস্ত করতে হাল ছাড়বে না। কারণ বাংলাদেশে রাজনীতি করার, ক্ষমতায় থাকার অধিকারী একমাত্র তারাই এমন মানসিকতা কাটিয়ে উঠতে পারে না তারা। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন। জানা গেছে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হতে পারে ৫, ৮ অথবা ১২ ফেব্রুয়ারি। এই তিনটি তারিখকে চূড়ান্ত করে ভোটের জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছে কমিশন। নির্বাচন কমিশন চাইলে ১০ ও ১১ ফেব্রুয়ারিকেও বেছে নিতে পারে।
সিইসি বলেছেন, বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো, আরও উন্নতির দিকে যাচ্ছে। আমরা চাই যাতে শান্তিপূর্ণ ও নির্ভয়ে মানুষ পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দিতে পারেন। মানুষ ভোটকেন্দ্রে যাওয়া ভুলে গেছে। তাদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়াই নির্বাচন কমিশনের চ্যালেঞ্জ। এজন্য সচেতনতার প্রয়োজন রয়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘এবারের নির্বাচনে কাউকে বিশৃঙ্খলা করার সুযোগ দেওয়া হবেনা। কেউ অরাজকতা করার চেষ্টা করলে তা কঠোরভাবে প্রতিরোধ করা হবে। নির্বাচনে কেউ একজন গোলমাল করলো বা বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করলেই সঙ্গে সঙ্গেই ওই কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করা হবে না।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে থাকবে। নির্বাচন কমিশন সব প্রস্তুতি নিয়ে নিশ্চিত করার সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে যাতে জনগণ তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোটকেন্দ্রে এসে ভোট দেয়। নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর এক মুখপাত্র। তিনি বলেছেন যে, নির্বাচন অনুষ্ঠান বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপ বাংলাদেশের জনগণকে তাদের নিজস্ব প্রতিনিধি বেছে নেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করবে। অবশ্য ভারতীয় গণমাধ্যম থেকে যেসব খবর পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলো পর্যালোচনা করলে বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, পতিত স্বৈরাচার ভারতে বসে সেখানকার সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে চক্রান্তের জাল বুনছে। তবে প্রধান উপদেষ্টাগত ৫ আগস্ট নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময় ঘোষণা করার পর থেকে ভারতীয় গণমাধ্যমে উল্টো সুরে কথা বলতে শুরু করেছে।
তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হলে তাদের জন্য এবং বাংলাদেশের জন্যও ভালো। ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি বিতর্কিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় আসে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ বেশ কিছু রাজনৈতিক দল এই নির্বাচন বর্জন করে এবং ২০১৪ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত প্রতিটি নির্বাচনকে সাজানো ও প্রহসনের নির্বাচন হিসেবে উল্লেখ করে। গতবছরের জুলাই আন্দোলনে শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটে এবং শেখ হাসিনা ও তার দলের নেতারা দেশত্যাগে বাধ্য হন। তার পলায়নের এক বছর ইতোমধ্যে পূর্ণ হয়েছে এবং অন্তবর্তী সরকার নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছে। উল্লেখ্য, জাতীয় সংসদের আসন সংখ্যা ৩০০, যা সরাসরি ভোটে নির্বাচনযোগ্য। এছাড়া ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসন রয়েছে, যা পূরণ করা হয় নির্বাচিত সদস্যরা যে দলের তাদের আসন সংখ্যা অনুযায়ী আনুপাতিক হারে।
Posted ১১:৪২ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৪ আগস্ট ২০২৫
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh