| বৃহস্পতিবার, ১৩ জুন ২০২৪
বিশ্ব মুসলিম উম্মার মাঝে আবার এসেছে ঈদুল আজহা। মুসলমানদের সর্ববৃহৎ দু’টি ধর্মীয় উৎসবের মধ্যে ঈদুল আজহা ঈদ অন্যতম। ঈদ মানে খুশি তবে একার আনন্দ নয়। বছরে মাত্র দু’বার ঈদ আসে বিশেষ একটা মাহাত্ন্য নিয়ে। আর তা হলো পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ব ও সৌহাদ্যপূর্ণ সম্পর্ককে বাড়িয়ে তোলা। ধনী-গরীব, উচুঁ-নীচু, সাদা কালো নির্বিশেষে সকল মানুষ সমান, এই আদর্শে উজ্জীবিত হওয়াই হচ্ছে ঈদের মূল উদ্দেশ্য। ঈদুল আজহা এক্ষেত্রে ত্যাগ-তিতিক্ষা আর আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়ার সর্বোচ্চ নিদর্শন। ঈদুল আজহাকে তাই বলা হয় কোরবানীর ঈদ অর্থাৎ আত্নত্যাগ বা উৎসর্গের ঈদ। এবার ১৬ জুন যুক্তরাষ্ট্রে এবং ১৭ জুন বাংলাদেশে উদযাপিত হবে পবিত্র ঈদুল আজহা।
পবিত্র হজ্ব পালিত হচ্ছে ১৫ জুন। অনেক ইসলামিক সেন্টার ও মসজিদের পক্ষ থেকে খোলা মাঠে বড় ঈদ জামাতের আয়োজন করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। মহান আল্লাহতায়ালার নৈকট্য লাভের আশায় সামর্থ্যবান মুমিন বান্দারা নির্দিষ্ট সময়ে পশু জবাইয়ের মাধ্যমে কুরবানি দিয়ে থাকেন। এর মধ্যে রয়েছে ত্যাগের মহান শিক্ষা। ত্যাগের মহান শিক্ষা নিয়ে প্রতিবছর আসে কোরবানি। মহামহিম রবের সামনে আত্মসমর্পণ করে প্রভুপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে তাঁর জন্য সবকিছু বিসর্জন দেওয়ার এই তো সুযোগ। পশু কোরবানি একটি প্রতীক মাত্র। কোরবানির প্রাণ হলো মহান রবের জন্য একনিষ্ঠ আত্মনিবেদন। মনের পশুবৃত্তিকে পরাজিত করার জন্য পশু জবাই বা পশু কোরবানি একটা আনুষ্ঠানিক মাধ্যম। এটা মনের কালিমা ও চরিত্রের কুস্বভাব চিরতরে দূরীভূত করার মোক্ষম হাতিয়ার।
বাহ্যিকভাবে পশু জবাই করাতে আল্লাহর কোনো লাভ নেই। আমরা পশু কোরবানি করি এবং আমরা এর গোশত ভক্ষণ করি। তাঁর কাছে পৌঁছায় শুধু একনিষ্ঠতা। ঈদের খুশি মানে কেবল আমাদের খুশি নয়; আল্লাহকে খুশি করার উদ্দেশ্যে ত্যাগ স্বীকার করাই হচ্ছে ঈদুল আযহার মূল কথা। কেননা, স্বয়ং আল্লাহই তার প্রিয় বান্দা বা সৃষ্টির সর্বশ্রেষ্ঠ জীব আশরাফুল মাখলুকাত মানুষ জাতিকে ত্যাগ তিতিক্ষার চেতনায় মহীয়ান করার উদ্দেশ্যে স্মরনীয় একটি ঘটনার মধ্য দিয়ে এই ঈদুল আযহার প্রবর্তন করেন। সেই ঘটনাটি আমরা সকলেই জানি। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এক এক করে তার প্রিয় দুম্বাগুলোর কয়েকটিকে কোরবানী করার পরও স্বপ্নে আল্লাহর আদেশ পেতে থাকলেন সর্বাপেক্ষা প্রিয় হচ্ছে একমাত্র কিশোর পুত্র ইসমাইল (আঃ)। তখন তিনি পুত্র ইসমাইল (আঃ) কেই নিজ হাতে কোরবানী করার প্রস্তুতি নিলেন। আল্লাহকে খুশি করার কথা ভেবে হযরত ইসমাইল (আঃ) রাজি হলেন। এক পর্যায়ে পিতার ধারালো ছুরির নীচে শায়িত হলেন ইসমাইল (আঃ) এবং হযরত ইব্রাহীম (আঃ) নিজের চোখ বেঁধে ছুরি চালালেন প্রিয়তম পুত্রের গলায়। আর এর পরপরই ঘটলো বিস্ময়কর ঘটনাটি।
চোখ খুলে তিনি দেখতে পেলেন, পুত্র তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে তার বদলে কোরবানী হয়েছে একটি দুম্বা। অর্থাৎ মহান আল্লাহ হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর সর্বোচ্চ ত্যাগের এই সদিচ্ছ্বায় খুশি হয়েছেন এবং তাৎক্ষণিকভাবে এজন্য তাকে তিনি পুরস্কৃত করেছেন। আর সেদিন থেকেই প্রতিবছর জিলহজ্ব মাসের দশ তারিখে এই কোরবানীর ঈদ বা ঈদুল আযহা পালিত হয়ে আসছে। এই ঈদে প্রত্যেক সামর্থবান মুসলমান গবাদিপশু কোরবানী দিয়ে থাকে। তার মানে কোরবানী নিছক পশু জবাই বা গোশত খাওয়া নয়। এটা একটি প্রতীক মাত্র। কোরবানীর আসল কথা হলো আত্নত্যাগ ও আত্নশুদ্ধি। আর নিজেদের মধ্যকার পশুত্ব বা পাশবিকতাকে কোরবানী করা। মুসলিম উম্মাহ যথাযোগ্য মর্যাদা, ধর্মীয় উৎসাহ, উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালন করবে পবিত্র এই দিবসটি। পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।
Posted ১:৩৩ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৩ জুন ২০২৪
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh