| বৃহস্পতিবার, ০৬ জুন ২০২৪
যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান ও সাবেক প্রেসিডেন্টদের মধ্যে ট্রাম্প প্রথম কোনো প্রেসিডেন্ট, যিনি আদালতের রায়ে দোষী সাব্যস্ত হলেন। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এখনো তিনটি গুরুতর মামলা চলমান। সেগুলোর কোনোটিতেই তিনি দোষী সাব্যস্ত হননি। এর মধ্য দিয়ে আইন তাঁকে শেষ পর্যন্ত ধরতে পারল। এখানেই ঘটনার শেষ এমনটা মনে করতে পারলে সত্যিই ভালো হতো। ট্রাম্পের দিন শেষ হয়েছে এবং তাঁর হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার সব আশা শেষ হয়ে গেছে বিশ্ব স্বাভাবিকভাবে চললে এ কথায় কেউ দ্বিমত করত না। সাবেক এই প্রেসিডেন্টের অনুচরেরা এখন তাঁদের সেই রাজনৈতিক প্যাটার্নের দিকে ঝুঁকবে যা তাঁরা একটু একটু করে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছেন।
ট্রাম্পের অনুসারীরা ট্রাম্পের ওপর আসা আইনি আঘাতকে রিপাবলিকান প্রাইমারি চলাকাল থেকে চক্রান্ত হিসেবে দেখাচ্ছেন। রিপাবলিকান প্রাইমারি থেকে ট্রাম্প নিজেকে রাষ্ট্রক্ষমতার গভীরে থাকা উদারপন্থীদের চক্রান্তের শিকার হিসেবে দাবি করে আসছেন।
ট্রাম্প যত বড় অন্যায়ই করুন না কেন, তাঁর ভক্ত ও সমর্থকদের কাছে তাতে তাঁর জনপ্রিয়তা কমবে না বলে ধারণা করা যেতে পারে। কেননা ট্রাম্প একবার নিজের মুখে বলেছিলেন, তিনি যদি ফিফথ অ্যাভিনিউতে ‘কাউকে গুলি করেন’, তা হলেও তাঁর সমর্থকেরা তাঁকে ছেড়ে যাবেন না। তা সত্ত্বেও, এই রায় ঘোষণার পর ট্রাম্প এবং তাঁর উপদেষ্টাদের চেহারায় চিন্তার রেখা দেখতে পাবেন। কারণ তাঁরা ভালো করেই জানতেন, ১৫৩০ নম্বর বিচারকক্ষে ১২ জন বিচারক যে রায় দিয়েছেন, তা জো বাইডেনের জন্য প্রাণসঞ্চারী হয়ে উঠেছে।
প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা নিয়ে যেসব জরিপ হয়েছে, সেসব জরিপে বাইডেনের অবস্থা খুবই খারাপ দেখা গেছে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে জয় পেতে হলে জিততেই হবে, এমন ছয়টি অঙ্গরাজ্যের মধ্যে পাঁচটিতে তিনি ট্রাম্পের চেয়ে পেছনে রয়েছেন। এই পরিস্থিতির মধ্যেও একটি সান্ত্বনা পাওয়া গেছে। সাম্প্রতিক একটি জরিপে দেখা গেছে, প্রতি পাঁচজন রিপাবলিকান ভোটারের মধ্যে প্রায় একজনকে খুঁজে পাওয়া গেছে, যাঁরা বলেছেন তাঁরা ট্রাম্পের প্রতি তাঁদের সমর্থন পুনর্বিবেচনা করবেন অথবা যদি তিনি দোষী সাব্যস্ত হন, তাহলে তাঁকে সম্পূর্ণভাবে ত্যাগ করবেন। এখন যেহেতু রায় হয়ে গেছে, সেহেতু বলা যায়, সেই দিন এসে গেছে। তবে জনপ্রিয়তা বাইডেনের কাছে হেঁটে এসে ধরা দেবে না। এই রায়ের মাধ্যমে জো বাইডেনের জন্য যে দরজা খোলা হয়েছে, তাঁকে তার মধ্য দিয়ে হেঁটে যেতে হবে। অর্থাৎ রিপাবলিকানদের মধ্যে যাঁরা ভিন্নমত পোষণকারী, তাঁদের কাছে বাইডেনের সরাসরি আবেদন করতে হবে; তাঁদের দলীয় আনুগত্য ভাঙতে এবং বাইডেনকে তাঁদের ভোট দিতে অনুরোধ করতে হবে।
বাইডেন এমন কিছু বলতে পারবেন না, যা থেকে মনে হতে পারে তিনিই ট্রাম্পের আইনি পতনের মূল অনুঘটক। সে ক্ষেত্রে আইনের ঊর্ধ্বে কেউ না থাকার বিষয়ে নিরপেক্ষ বক্তব্য দিয়ে যাওয়াই বাইডেনের জন্য ভালো হবে। ২০২৪ সালের এই নির্বাচনকে একটি স্বাভাবিক ও গতানুগতিক নির্বাচন বলে মনে করার সুযোগ নেই। এটা সম্পূর্ণ আলাদা কিছু।
বর্তমানে যিনি বাইডেনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, তিনি ২০২০ সালে হেরে গিয়ে ভোটের ফল উল্টে দিতে চেষ্টা করেছিলেন এবং আদালতের ভাষ্যমতে, ২০১৬ সালে তিনি নির্বাচনে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছিলেন। এবার তিনি ভোটে জেতার জন্য মরিয়া হয়ে গেছেন। কারণ, একমাত্র আগামী ৫ নভেম্বরের নির্বাচনের জয়ই তাঁকে জেলে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে পারবে। ট্রাম্প তাঁর নিজের কোমর ভেঙে যাওয়াকে যতটা ভয় পান, সেভাবেই জেলে যাওয়ার বিষয়টিকে ভয় পান। এমন একজন ব্যক্তির পুনরায় ক্ষমতায় আসাটা আমেরিকান প্রজাতন্ত্রের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য এবং আইনের শাসনের জন্য মহাবিপদের বিষয়। এর চেয়ে গুরুতর বিপদ আর হতে পারে না। কিন্তু সেই বিপদ সম্পর্কে ভোটারদের সতর্ক করাই যথেষ্ট বলে মনে হয় না। এই প্রতিযোগিতায় একটি স্মার্ট প্রচারণা এবং জনগণকে রুটি-রুজির বার্তা দিয়ে বাইডেনকে জিততে হবে।
Posted ১:৫১ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৬ জুন ২০২৪
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh