| বৃহস্পতিবার, ২২ আগস্ট ২০২৪
ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব গণবিপ্লবে বেসামাল হয়ে শেষ পর্যন্ত জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশের প্রায় সাড়ে পাঁচ দশকের ইতিহাসে জঘন্যতম স্বৈরাচারী শাসক শেখ হাসিনাকে পালাতে হয়েছে। বিপ্লবের জোয়ারে খান খান হয়ে গেছে তার দম্ভ, অহঙ্কার ও ঔদ্ধত্যের প্রাসাদ। শত শত তরুণ ও সাধারণ জনতার আত্মদানে অর্জিত বিপ্লবের সাফল্য সমগ্র দেশবাসীর বিজয়। কয়েক হাজার মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। চিরতরে পঙ্গুত্ববরণ করেছেন কয়েক হাজার।
রক্তের বন্যায় অর্জিত ছাত্র-জনতার এ বিজয় ইতোমধ্যে দেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। বিপ্লবে নিগৃহীত ও পর্যুদস্ত হওয়া ইতিহাসের অন্যতম বর্বর ফ্যাসিবাদী একনায়ক শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগের প্রাপ্য ছিল। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ এর আগস্ট পর্যন্ত সাড়ে তিন বছর, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত পাঁচ বছর এবং সর্বশেষ ২০০৯ থেকে ২০২৪ এর ৫ আগষ্ট পর্যন্ত টানা সাড়ে ১৫ বছরের আওয়ামী শাসন কার্যত আওয়ামী বর্বরতা ও দু:শাসনের কাল ছিল। ক্ষমতা ভোগের প্রতিটি পর্যায়ে তারা গুম, খুন, মানুষ হত্যা, বিনাবিচারে আটক, জঙ্গি নাটক, লুণ্ঠন, দলীয়করণ, সকল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করা, শিক্ষাব্যবস্থাকে কবরস্থ করা এবং নৈতিক মূল্যবোধকে উপড়ে ফেলে ভূঁয়া উন্নয়নের বুলি দিয়ে জাতিকে নেশাগ্রস্ত করে রেখেছিল।
অন্যায়ভাবে জাতির ওপর চেপে বসে মানুষের সব ধরনের অধিকার কেড়ে নেয়ার ফলে মানুষের যে পুঞ্জীভূত ক্ষোভ তা ছাত্রদের মর্মকে এত গভীরভাবে স্পর্শ করেছিল যে এর বিহিত করতে তারা প্রচন্ড সাহসে জীবন বাজি রেখে রাজপথে নেমে এসে স্বৈরাচারীকে দেশত্যাগে বাধ্য করে ঘরে ফিরেছে। তাদের কোরবানির বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্র্ব্তীকালীন সরকার। আমরা বিশ্বাস করি, এই বিপ্লবী সরকার দেশ ও জাতির আশা আকাংখা পূরণ করতে সক্ষম হবে। এ সরকারের কাছে জাতির যে প্রত্যাশা সেগুলোর মধ্যে অন্যতম আইনশৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা, যাতে জনগণ আইনশৃংখলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর ওপর আস্থা স্থাপন করতে পারে।
শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে প্রতিটি আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আওয়ামী লীগের ক্যাডার বাহিনীতে পরিণত করা হয়েছিল। এ বাহিনীগুলো হয়ে উঠেছিল কার্যত রাষ্ট্রের পীড়ন যন্ত্র। তাদের একটাই কাজ ছিল, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের ‘স্বাধীনতা বিরোধী’, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী’, ও ‘জঙ্গি’ তকমা দিয়ে ‘ক্রসফায়ার,’ ‘এনকাউন্টার,’ এ হত্যা করা, ধরে নিয়ে গুম করে ফেলা এবং বিনাবিচারে গোপন কারাগারে বছরের পর বছর আটকে রাখা।
আইন শৃংখলা রক্ষাকারীরা একটি দানবীয় সরকারের মর্জিতে সাড়া দিয়ে জনগণের আস্থা হারিয়েছে, যা ফিরিয়ে আনা খুব সহজ নয়। সেজন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে দৃঢ়তার সাথে সরকারের গত তিনটি মেয়াদের এসব বাহিনীর যারা অন্যায় কাজে ইন্ধন জুগিয়েছে তাদেরকে অবিলম্বে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা। বিপ্লবে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের তালিকা প্রণয়ন এবং তাদের ঘাতকদের বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে উদ্যোগ নেয়া।
যারা আহত হয়েছেন এবং পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন তাদেরও সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা। আশার কথা যে ইতোমধ্যে বিভিন্ন হত্যাকাণ্ড, নিপীড়নসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের অভিযোগে দেশত্যাগকারী প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা শুরু হয়েছে শেখ হাসিনা যেমন তার মেয়াদে বিরোধী দলের অসংখ্য নেতাকে ‘হুকুমের আসামি’ সাব্যস্ত করে শাস্তি দিয়েছেন, অসংখ্য হত্যার জন্য দায়ী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের অবশ্যই বিচারের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে আর কোনো শাসক জাতির ওপর অভিশাপ হিসেবে চেপে বসার সাহস করতে না পায়। ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার কৌশল হিসেবে শেখ হাসিনা প্রশাসন, বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, পাবলিক সার্ভিস কমিশনকে যেভাবে দলীয়করণ করেছিল, অন্তবর্তীকালী সরকারকে সেগুলো ভেঙে প্রতিষ্ঠানগুলোর পুনর্গঠন এবং আর্থিক খাত লুণ্ঠনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
Posted ১:৩৫ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২২ আগস্ট ২০২৪
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh