| শুক্রবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
কোনভাবেই রোধ করা যাচ্ছে না দেশ থেকে বিদেশে অর্থপাচার। কারণ অর্থপাচারের সঙ্গে জড়িত রয়েছে সরকারেরই ঘনিষ্টজন। অর্থপাচারের সঙ্গে জড়িত মন্ত্রী, এমপি এবং তাদের আত্মীয়পরিজনের নাম নানাভাবে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরেই। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা লাভকারী আমলা ও ব্যবসায়ী এবং সামরিক ও বেসামরিক পদস্থ অফিসাররাও অর্থপাচারের অভিযোগ থেকে মুক্ত নন। অতএব দুনীতি দমন কমিশন তাদের বিরুদ্ধে যত অভিযোগপত্র দাখিল করুক না কেন এবং আদালতে মাশলা শুনানি হোক না কেন, শেষ পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই গ্রহণ করা হচ্ছে না। সরকার এবার নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে ১০টি দেশের সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন করতে। দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য, সাক্ষ্য-প্রমাণ ও অন্যান্য সহায়তা নিতে ১০ দেশের সঙ্গে আইনগত সহায়তা চুক্তির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বিদেশে পাচার করা অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনা সহজ করতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে পারস্পরিক আইনগত সহযোগিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অপরাধ সম্পর্কিত বিষয়ে পারস্পরিক সহায়তা আইন-২০১২ জারি করা হয়েছে। এই আইনের আওতায় অপরাধ সম্পর্কিত বিষয়ে পারস্পরিক সহায়তা দিতে কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ হিসাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করছে। এছাড়া অ্যাটর্নি জেনারেলের নেতৃত্বে বিদেশে পাচার করা সম্পদ বাংলাদেশে ফেরত আনার বিষয়ে গঠিত টাস্কফোর্স কাজ করে যাচ্ছে। অর্থ পাচার রোধে বর্তমানে বাংলাদেশে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ বলবৎ রয়েছে। সর্বশেষ ২০১৫ সালের ২৬ নভেম্বর এটি সংশোধিত হয়। এই আইনের বিধান অনুসারে বৈধ বা অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ বা সম্পত্তি নিয়মবহির্ভূভাবে বিদেশে পাচারকে মানি লন্ডারিং অপরাধ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। মানি লন্ডারিং অপরাধের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন চার বছর এবং সর্বোচ্চ ১২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। এর অতিরিক্ত অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সম্পত্তি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা ও সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির দ্বিগুণ মূল্যের সমপরিমাণ বা ১০ লাখ টাকা (এর মধ্যে যা অধিক) অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, পাচার করা অর্থ উদ্ধারের বিষয়ে একটি কৌশলপত্র প্রণয়ন করা হয়েছে, যা মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কাজে অর্থায়ন প্রতিরোধে গঠিত জাতীয় সমন্বয় কমিটি কর্তৃক অনুমোদনের পর ওই কৌশলপত্রের সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থায় পাঠানো হয়েছে। এছাড়া পাচার করা অর্থ উদ্ধারের বিষয়ে বিএফআইইউ কর্তৃক একটি গাইডলাইন প্রণয়ন করা হয়েছে, যা জাতীয় সমন্বয় কমিটি কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে। এছাড়া ওয়েজ আর্নার্স ও বিমানের যাত্রীরা ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মূল্যবান রেমিট্যান্স হিসেবে যে নগদ বৈদেশিক মুদ্রা আনেন, তা ব্যাংকিং চ্যানেলে রাষ্ট্রীয় রিজার্ভে জমা হওয়ার পরিবর্তে অসাধু ব্যাংক কর্মকর্তাদের কারসাজিতে ব্যাংকিং চ্যানেলে না দেখিয়ে নিজেরাই প্রবাসীদের কাছে খোলা বাজারে বিক্রি করে দেওয়ার একটি গোপন প্রক্রিয়া চাল রাখায় প্রতিদিন প্রায় ১০০ কোটি টাকা সমমূল্যের বৈদেশিক মুদ্রা থেকে ব্যাংকিং খাত বঞ্চিত হচ্ছে। এসব অর্থ পরে মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে বিদেশে পাচার করা হচ্ছে। এভাবে দেশের মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা পাচার করে দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্ত করা হচ্ছে। এজন্য দুদক অভিযান পরিচালনা করে এবং বৈদেশিক মুদ্রার কালোবাজারির সঙ্গে জড়িত ব্যাংক ও মানি এক্সচেঞ্জারদের একটি চক্রের সন্ধান পাওয়া যায়। এ ব্যবস্থা দূর করতেও পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। সকলে আশা করেন যে কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা সুযোগসন্ধারীনের মাধ্যমে বিদেশে পাচার হয়ে যাক। এর আশু অবসান জরুরী।
Posted ৭:৩০ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh