| বৃহস্পতিবার, ২২ অক্টোবর ২০২০
দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হওয়ার জন্য জোরালো প্রচার চালাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার প্রচারের এ আগ্রাসী প্রক্রিয়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর গণতান্ত্রিক যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হয়ে উঠেছে। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে দেশে-বিদেশে যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তির মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন।রাজনৈতিক বিরোধীদের আইনগত অধিকার দিতে নারাজ তিনি। জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রাখার সব নীতি-আদর্শ ট্রাম্প বিসর্জন দিয়েছেন। জনস্বার্থের প্রতি তার দরদের পুরোটাই ছিল নিজের রাজনৈতিক এবং ব্যবসায়িক স্বার্থ হাসিলের জন্য। যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের জীবন ও স্বাধীনতার অধিকারের বিষয়ে নজিরবিহীন অবজ্ঞা প্রদর্শন করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। যে দায়িত্ব পেয়েছেন, তা পালনে একেবারেই অযোগ্য তিনি।
যেনতেন কারণে দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের সম্পাদকীয় পরিষদ ক্ষমতাসীন কোনো প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে সাধারণত এমন কঠোর সমালোচনা করে না। ট্রাম্পের চার বছর মেয়াদের বিভিন্ন সময় আমরা তার বর্ণবাদী এবং জাতিঘৃণার সমালোচনা করেছি। অনেক জীবনের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন জোট (যেমন- সামরিক জোট ন্যাটো) এবং গড়ে ওঠা সম্পর্ক নিয়ে তার তাচ্ছিল্যপূর্ণ মনোভাবের সমালোচনা করেছি। তার বিভাজনমূলক বক্তৃতা এবং নিজ দেশের জনগণ সম্পর্কে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিদ্বেষমূলক আক্রমণের সমালোচনাও আমরা করেছি।ক্ষমতার অপব্যবহারের দায়ে বিরোধী পক্ষ ট্রাম্পকে সিনেটে অপসারণ করতে ব্যর্থ হয়। আমরা তখন বিরোধী পক্ষকে পরামর্শ দিয়েছিলাম, বিষোদ্গার না করে আপনারা ট্রাম্পকে ব্যালট বাক্সের মাধ্যমে পরাজিত করুন। ৩ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় নির্বাচন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য টার্নিং পয়েন্ট হতে যাচ্ছে। এ নির্বাচনে দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে দেবে জনগণ। তবে বাস্তবতা হলো, ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র কঠিন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে গেছে। আরও চার বছরের জন্য তিনি নির্বাচিত হলে পরিস্থিতি হবে ভয়াবহ। পুনর্নির্বাচিত হওয়ার জন্য প্রচার চালাতে গিয়ে গণতন্ত্রের মৌলিক বিধানগুলোকেই হুমকিতে ফেলেছেন তিনি। হেরে গেলেও শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতি দেননি তিনি। জনরায় তার পক্ষে না গেলে নির্বাচনকেই আদালতের কাঠগড়ায় তুলতে চান তিনি; এমনকি রাজপথে সহিংসতা ছড়াতেও দ্বিধা করবেন না তিনি। গত চার বছরে ট্রাম্প সম্পর্কে আমাদের তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে। এ থেকে আমরা যে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাটি নিতে পারি তা হলো, জাতির কোনো সমস্যা সমাধানে ট্রাম্প যোগ্য ব্যক্তি নন, বরং তিনি নিজেই জাতির জন্য এক বিশাল সমস্যা আকারে হাজির হয়েছেন। তিনি একজন বর্ণবাদী বক্তৃতাবাজ। চার বছরে কিছুই গড়েননি তিনি। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে গড়ে ওঠা অনেক নীতি-আদর্শ তিনি ভেঙে দিয়েছেন। ট্রাম্প এমন একজন প্রেসিডেন্ট যিনি শুধু ভাঙতে জানেন, গড়তে জানেন না।
জলবায়ু পরিবর্তনকে বিশ্ব যখন চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে, তখন ট্রাম্প তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। বৈধ এবং অবৈধ অভিবাসীদের ওপর তিনি নিষ্ঠুর দমন-পীড়ন চালিয়েছেন। করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলা করতে গিয়ে ট্রাম্পের অযোগ্যতা প্রকাশ পেয়েছে নগ্নভাবে। জীবন বাঁচানো বাদ দিয়ে তিনি এ ভাইরাস নিয়ে মানুষকে ক্রমাগত মিথ্যা বলে গেছেন। সেপ্টেম্বরে তিনি এও বলেছেন, এ ভাইরাস কার্যত কারো ক্ষতি করে না। যুক্তরাষ্ট্রের আধুনিক ইতিহাসে বেশ কয়েকজন প্রেসিডেন্ট আইন ভেঙেছেন এবং বিপর্যয়কর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। রাজনৈতিক বিরোধীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন রিচার্ড নিক্সন। এইডস সংক্রমণকে পাত্তাই দেননি রোনাল্ড রিগ্যান। মিথ্যাচার এবং বিচারিক কাজে বিঘ্ন ঘটানোর জন্য অভিশংসিত হয়েছেন বিল ক্লিনটন। মিথ্যা তথ্যের পসরা সাজিয়ে জাতিকে ভয়ংকর যুদ্ধের মধ্যে ঠেলে দিয়েছেন জর্জ ডব্লিউ বুশ। কয়েক দশক ধরে কয়েকজন প্রেসিডেন্ট যুক্তরাষ্ট্রের যে ক্ষতি করেছেন, ট্রাম্প এক মেয়াদে তার চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতি করে ফেলেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ ঘোর বিপদের সম্মুখীন। যেসব ভোটার প্রেসিডেন্ট হিসেবে একজন রিপাবলিকানকে দেখতে চান, তারাও এর বাইরে নন। ভোটের ক্ষমতা প্রয়োগ করে যুক্তরাষ্ট্রের পতন ঠেকাতে তাদেরও সামনে এগিয়ে আসতে হবে। ১৬ অক্টোবর প্রকাশিত সম্পাদকীয়।
Posted ১১:০৭ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২২ অক্টোবর ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh