| শুক্রবার, ২২ মার্চ ২০২৪
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের প্রায় প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রমজান পালন, ইফতার ও খাদ্য পরিবেশন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনগুলো এবং বর্তমান সরকারি দলের লেজুড় সংগঠন ছাত্রলীগের উৎসাহীরা রীতিমতো নৈরাজ্য সৃষ্টি করা হয়েছে। এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রমজানের ওপর আলোচনায় হামলা ও কয়েকজনের আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। হঠাৎ করে এ বছরই এ ঘটনাগুলো ঘটল কেন? এর পেছনে দুরভিসন্ধি থাকার কথা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এবং সে দুরভিসন্ধি হলো, তরুণদের মধ্যে ইসলামের রীতি রেওয়াজ ও অনুষ্ঠানাদি সম্পর্কে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করা এবং প্রতিবেশি দেশের অনুসরণে একটি বিশেষ ধর্মীয় গোষ্ঠী দ্বারা প্রভাবিত তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ পরিবেশ সৃষ্টি করা। অসাম্প্রদায়িক চেতনার ধারক-বাহক হিসেবে সমাদৃত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধর্ম ও মতের মানুষ তাদের আচার-অনুষ্ঠান পালন করে থাকে। তবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিগত কয়েকদিনে কিছু ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভূমিকা সেই সুনামকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। গত ১২ মার্চ থেকে শুরু হয়েছে পবিত্র রমজান মাস। রোজা উপলক্ষে ঢাবি ক্যাম্পাসে প্রথম কয়েক দিনে বেশ কিছু ধর্মীয় অনুষ্ঠান আয়োজন করে শিক্ষার্থীরা। প্রথম রমজানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্মিলিত ইফতারে নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে গণইফতারের আয়োজন করে শিক্ষার্থীরা। উৎকণ্ঠা থাকলেও শেষ পর্যন্ত আয়োজনটি নির্বিঘ্নে শেষ হয়। তবে পরদিন রমজান নিয়ে শিক্ষার্থীদের আলোচনা সভা নির্বিঘ্নে শেষ হয়নি।বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বঙ্গবন্ধু টাওয়ার’ ভবনের মসজিদে রমজান নিয়ে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের পূর্ব নির্ধারিত সেই আলোচনা সভায় হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এতে অন্তত পাঁচ জন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো নিষেধাজ্ঞা না থাকা সত্ত্বেও শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের চালানো এ হামলায় ক্যাম্পাসের সমালোচনার ঝড় ওঠে, প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে সাধারণ শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন। এক সপ্তাহ পার হতে চললেও এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে এখনো কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। প্রশাসন আশ্বাস দিলেও ভুক্তভোগীসহ অনেক সাধারণ শিক্ষার্থী এই হামলার ঘটনায় আদৌ সুষ্ঠু বিচার হবে কিনা সেটা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেছেন। এ ঘটনার পরপরই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আলোচনায় আসে কোরআন তেলাওয়াতের এক অনুষ্ঠানের ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে গিয়ে। পবিত্র রমজানকে স্বাগত জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় ‘আল কোরআন রিসাইটেশন প্রোগ্রাম’ নামে কোরআন তেলাওয়াত অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আরবি বিভাগের শিক্ষার্থীরা।‘আরবি সাহিত্য পরিষদ নামে’ বিভাগটির শিক্ষার্থীদের একটি সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত কোরআন তেলাওয়াতের এই অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বিভাগের শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। কোরআন তেলাওয়াতের এই কর্মসূচির ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সাধারণ মানুষের ব্যাপক প্রশংসা কুড়ায়। তবে কিছু মানুষ ঢাবির মতো এলাকায় ধর্মীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের সমালোচনা করেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘প্রগতিশীল’ চরিত্র ক্ষুন্ন হয়েছে বলেও তারা মনে করেন। শুরুতে এ নিয়ে নীরব থাকলেও নানা মহলের আলোচনার পর এ অনুষ্ঠানের ব্যাপারে তৎপরতা দেখায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সেদিন অনুষ্ঠান আয়োজকদের পরিচয় জানতে চেয়ে আরবি বিভাগের চেয়ারম্যানকে চিঠি দেন কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবদুল বাছির। প্রশাসনের এ পদক্ষেপ গণমাধ্যমে আসার পর থেকে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলোচনা শুরু হয় যে, শাস্তি পেতে যাচ্ছেন কোরআন তেলাওয়াত অনুষ্ঠান আয়োজনে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীরা। যদিও কর্তৃপক্ষ বলছে অনুমতি না নিয়ে আয়োজন করায় তাদের ব্যাপারে তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে। কলা অনুষদ সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, এ নিয়ে আরবি বিভাগ ও ডিনের মধ্যে একটি দীর্ঘ মিটিং হয়েছে। কয়েকদিনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এই অবস্থানের সমালোচনা ও প্রতিবাদ করেছেন দেশের বিভিন্ন ইসলামিক সংগঠনের নেতারা। তারা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে আয়োজনের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে উদারতার আহ্বান জানান। প্রশ্ন হলো, এ ধরনের একটি পরিস্থিতির উদ্ভব হবে কেন? বিপুলভাবে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশ এবং বিশেষ করে যে দেশের ভিত্তিমূলেই ছিল যে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ার কারণেই উগ্র হিন্দুদের শাসনের কবল থেকে পৃথক হওয়া, সেখানে আজ আবারও সেই উগ্রতার কাছে আত্মসমর্পণ করানোর দিকে বাংলাদেশকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে?
Posted ৮:১০ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ২২ মার্চ ২০২৪
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh