ইমা এলিস/ বাংলা প্রেস, নিউ ইয়র্ক : | বৃহস্পতিবার, ২০ জুলাই ২০২৩
পুরোনো দিনের গানে নিউ ইয়র্কে প্রবাসী দর্শক মাতালেন দেশের অন্যতম সেরা সঙ্গীতশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন। গত ১৫ জুলাই শনিবার সন্ধ্যায় জ্যামাইকার ম্যারি লুইস একাডেমিতে যখন সাবিনা ইয়াসমিনের একক সঙ্গীতানুষ্ঠান শুরু হয়, তখন মিলনায়তনে দর্শকশ্রোতা ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। তাঁর এ সঙ্গীতানুষ্ঠানকে ঘিরে প্রায় দু’সপ্তাহ আগে থেকেই নিউ ইয়র্ক প্রবাসীদের মাঝে ব্যাপক সাড়া পড়েছিল। অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশের জন্য সব টিকেট আগেই বিক্রি হয়ে যায়। নিউইয়র্কের পিজি গ্রুপ প্রথমবারের মত সেরা সঙ্গীতশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিনের একক সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করেন।
অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গত ১১ জুলাই মঙ্গলবার সকালে সাবিনা ইয়াসমিন নিউইয়র্কে এসে পৌঁছান। তাঁর সঙ্গে আসেন সহশিল্পী জাহাঙ্গীর সাইদ। শনিবার সন্ধ্যায় সাবিনা ইয়াসমিনের আগে মঞ্চে সঙ্গীত পরিবেশন করেন দেশ থেকে সঙ্গে আসা সাবিনা ইয়াসমিনের সহশিল্পী জাহাঙ্গীর সাইদ। এরপর মঞ্চে আসেন দেশের অন্যতম সেরা সঙ্গীতশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন। তিনি তাঁর গাওয়া জনপ্রিয় পুরোনো দিনের এবং রুপালী পর্দার সব পুরানো গান গেয়ে মধ্যরাত পর্যন্ত দর্শকদের মাতিয়ে রাখেন। শিল্পীকে যন্ত্রে সঙ্গত করেন-পার্থ গুপ্ত (কীবোর্ড), দেবু চৌধুরী (তবলা), রিচার্ড (ড্রাম), মাহফুজ (বেস গিটার), জোহান (গিটার) এবং রাকেশ ব্যানার্জি (অক্টোপ্যাড)।
গান পরিবেশনের আগে তিনি প্রতিটি গানের গীতিকার ও সুরকারের নাম উল্লেখসহ সেইসব গান তৈরির প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন প্রবাসী দর্শকদের কাছে। গানে জন্য দেশবরেণ্য এ শিল্পী বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন। এর মধ্যে ইংল্যান্ড, সুইডেন, নরওয়ে, হংকং, আমেরিকা, বাহরাইন ইত্যাদি। এছাড়া ভারত, পাকিস্তানে তিনি অনেকবার ভ্রমণ করেছেন। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন ভাষায় গান গেয়েছেন।
সাবিনা ইয়াসমিন গাজী মাজহারুল আনোয়ারের ‘উল্কা’ নামের সিনেমাতে অভিনয় করেছেন। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের গানের পাশাপাশি তিনি দেশাত্মবোধক গান থেকে শুরু করে উচ্চাঙ্গ, ধ্রুপদী, লোকসঙ্গীত ও আধুনিক বাংলা গান সহ বিভিন্ন ধারার নানান আঙ্গিকের সুরে গান গেয়ে নিজেকে দেশের অন্যতম সেরা সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দিয়ে তিনি ১৪টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও ৬টি বাচসাস পুরস্কার অর্জন করেছেন। শিল্পকলার সঙ্গীত শাখায় অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ১৯৮৪ সালে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক রাষ্ট্রীয় সম্মাননা একুশে পদক এবং ১৯৯৬ সালে সর্বোচ্চ বেসামরিক রাষ্ট্রীয় সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হন।
এছাড়াও সাবিনা ইয়াসমিন সঙ্গীতে অবদানের জন্য পুরষ্কৃত হয়েছেন অনেক বার। ১৯৮৪ সালে একুশে পদক, ১৯৯৬ সালে স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার মোট ১৪টি, বাচসাস পুরস্কার মোট ৬টি, বিএফজেএ পুরস্কার মোট ১৯৯১ সালে। উত্তম কুমার পুরস্কার ১৯৯১ সালে, এইচ এম ভি ডাবল প্লাটিনাম ডিস্ক, বিশ্ব উন্নয়ন সংসদ থেকে সংগীতে ‘ডক্টরেট’ ডিগ্রি লাভ করেছেন ১৯৮৪ সালে, ১৯৭৪ ও ১৯৭৫ সালে জহির রায়হান চলচ্চিত্র পুরস্কার, ১৯৭৫ সালে চলচ্চিত্র পূবাণী চলচ্চিত্র পুরস্কার, ১৯৯০ সালে শেরে বাংলা স্মৃতি পদক, ১৯৯২ সালে অ্যাস্ট্রোলজি পুরস্কার, ১৯৯২ সালে জিয়া স্মৃতি পদক এবং নিউইয়র্ক, লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে পান ‘বেস্ট সিঙ্গার’ পুরস্কার। ২০১৭ সালের দশম স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড-দ্য ডেইলি স্টার জীবনের জয়গান উৎসবের আজীবন সম্মাননা পান।
নিউ ইয়র্কে প্রথমবারের মত সেরা সঙ্গীতশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিনের একক সঙ্গীতানুষ্ঠান প্রসঙ্গে পিজি গ্রুপের স্বত্তাধিকারী পার্থ গুপ্ত জানান, অনুষ্ঠানের এক সপ্তাহ আগেই নব্বই শতাংশ এবং অনুষ্ঠানের আগের দিন সবগুলো টিকেট বিক্রি হয়ে যায়। টিকেট না পেয়ে বিপাকে পড়েন কিছু দর্শকশ্রোতা। তিনি বলেন, এবারে স্বল্প মূল্যে টিকেট বিক্রি করেছি। টিকেটের মূল্য রাখা হয়েছিল ২০,৩০, ৫০ ও ১০০ ডলার। এ অনুষ্ঠানকে সফল করতে পার্থ ও তার টিমের যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন হলভর্তি দর্শকশ্রোতা দেখে তারা সকলেই পরিতৃপ্ত বোধ করছেন।
পার্থ গুপ্ত অভিযোগ করে বলেন, সাবিনা ইয়াসমিনের একক এ সঙ্গীতানুষ্ঠানকে বানচাল করার জন্য নিউইয়র্কের বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী সাবিনা ইয়াসমিনকে সরাসরি ফোন করে নিউ ইয়র্কে আসতে বারণ করেছিলেন। এমনকি তাঁর ব্যাবস্থাপককে টেক্সট ম্যাসেজ পাঠিয়েও নানা ধরনের কথা বলেন। এরা পার্থের ব্যবসার সাবেক অংশিদার বলে জানান তিনি। তাদের সকল বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে প্রবাসীদের ভালবাসায় নিউ ইয়র্কে ছুটে আসেন সাবিনা ইয়াসমিন।
Posted ১:৩২ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২০ জুলাই ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh