| বৃহস্পতিবার, ০৮ অক্টোবর ২০২০
ঘাতক ব্যাধি করোনা ভাইরাস শেষ পর্যন্ত হানা দিয়েছে হোয়াইট হাউজে। বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্রপ্রধান ডোনাল্ড ট্রাম্প আক্রান্ত হয়েছেন স্বস্ত্রীক। এছাড়া হোয়াইট হাউজ প্রশাসনের আরো একডজন কর্মকর্তার দেহে সংক্রমন ঘটেছে কোভিড-১৯ এর। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে নিরাপদ ক্ষমতার এ কেন্দ্রবিন্দু করোনা কবলিত হওয়ায় তা পরিণত হয়েছে বিশ্ব সংবাদ শিরোনামে। আগামী ৩ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অসুস্থতা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে এক ধরণের জটিলতা। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে থমকে গেছে নির্বাচনী প্রচারণা। গত সপ্তাহে ওহাইয়োতে জো-বাইডেনের সাথে প্রথম দফা বিতর্কে অংশ নেন ট্রাম্প। ধারণা করা হয় এরপর পরই তার দেহে সংক্রমণ ঘটে করোনা ভাইরাসের। এখন পরবর্তী দু’দফা বিতর্ক অনুষ্ঠান নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। ট্রাম্পের কোভিড-১৯ টেস্ট কতবার হয়েছে এবং কখন তিনি সংক্রমনের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছেন এ নিয়েও রয়েছে বিতর্ক। কোভিড-১৯ টেস্ট পজিটিভ ধরা পড়ার পর প্রথম রাত তিনি হোয়াইট হাউজেই কাটান। পরদিন তিনি হোয়াইট হাউজ থেকে হেলিকপ্টারে ম্যারিল্যান্ডের ওয়াল্টার রীড আর্মি হাসপাতালে ভর্তি হন। ফার্স্ট লেডি মেলেনিয়া থেকে যান হোয়াইট হাউজেই। ধারণা করা হয় ট্র্রাম্প তার ব্যক্তিগত সহকারীর মাধ্যমে সংক্রমিত হয়েছেন। এরপর তিনি নিজেই সংক্রমিত করেন অন্যদেরকে।
হাসপাতালে প্রথম থেকেই তিনি ছিলেন নিবিড় পরিচর্যায়। তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক নেভি ক্যাডার শন কনলির নেতৃত্বে একদল চিকিৎসক নিয়োজিত ছিলেন চিকিৎসায়। ওয়াল্টার রীড হাসপাতালে তিনদিন ভর্তি ছিলেন ট্রাম্প। এসময় তাকে সর্বাধুনিক চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়েছে। বিশেষ করে রেমডিসিভির অ্যান্টিভাইরাল ঔষধ। কোভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য পরীক্ষাধীন এ ঔষধ ব্যবহারকারী প্রথম রোগী ডোনাল্ড ট্রাম্প। এছাড়া তার রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা স্বাভাবিক রাখার জন্য দেয়া হয় অক্সিজেন। করোনার অন্যান্য জটিল রোগীর মতো তার দেহে প্রয়োগ করা হয় উচ্চমাত্রার স্টেরয়েড। হাসপাতালে ভর্তিকালীন কোভিড-১৯ রোগীর সবধরণের উপসর্গ ছিলো তার মাঝে। জ্বর, কাশি ও মৃদু শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। ৭৪ বছর বয়সী এবং মাত্রাতিরিক্ত ওজনের অধিকারী ট্রাম্প ছিলেন শতভাগ ঝুঁকিতে। তারপরও নিজের চিকিৎসা নিয়ে লুকোচুরি করছেন তিনি। চিকিৎসকদের বাধ্য করছেন জনসম্মুখে সত্য না প্রকাশে। ফলে ডাঃ শন কনলি তার টিম সহ প্রথম সংবাদ সম্মেলনে চেপে যান চিকিৎসা সংক্রান্ত অনেক তথ্য। সৃষ্টি করেন ধোঁয়াশায়। এ নিয়ে শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয় গোটা বিশ্বব্যাপী ঝড় উঠে সমালোচনার। পরের দিন চিকিৎসকরা এসবের সত্যতা স্বীকার করেন। বিশেষ করে ট্্রাম্পের শ্বাসকষ্ট প্রশমনে অক্সিজেন প্রয়োগের বিষয়টি। পরীক্ষায় করোনা সনাক্ত হওয়ার পরও ট্রাম্প অব্যাহত রাখেন তার স্বভাবসুলভ আচরন। টুইট করে জানান দেন তিনি সুস্থ ও স্বাভাবিক আছেন। অচিরেই নির্বাচনী প্রচারনায় ফিরছেন তিনি। টেলিভিশন সংবাদে প্রচারিত তার বক্তব্য ও অঙ্গভঙ্গিতে স্পষ্ট ছাপ ছিলো কৃত্রিমতার। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়ই দ্বিতীয় দিন তিনি বেড়িয়ে পড়েন রাস্তায়। হাসপাতালের সামনের রাস্তায় সমবেত ভক্তদের দর্শন দেন ট্রাম্প। প্রেসিডেন্টের গাড়ীতে চেপে ধীর গতিতে চক্কর দেন রাস্তায়। হাত নেড়ে ভক্তদের বুঝাতে চান তিনি সুস্থ ও স্বাভাবিক আছেন। এসময় তার গাড়িতে চালক ছাড়াও ছিলেন নিরাপত্তা বাহিনীর দু’জন সদস্য। চিকিৎসকদের পরামর্শ উপেক্ষা করে স্ট্যান্টবাজি তাকে আরো বিতর্কিত করে তুলে।
এসময় যারা তার সাহচর্যে ছিলেন সবাইকে তিনি ফেলে দেন স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে। প্রশ্ন উঠেছে করোনার মতো একটি ভয়াবহ মরণব্যাধি আক্রান্ত ব্যক্তি হাসপাতালের বিছানা ছেড়ে গণসংযোগ করতে বাইরে যান কিভাবে। শুধু তাই নয় ওয়াল্টার রীড হাসপাতালের চিকিৎসা সম্পুর্ন না করেই তিনদিন পর হোয়াইট হাউজে ফিরে যান প্রেসিডেন্ট। সেখানে পৌছে বারান্দায় দাঁড়িয়ে খুলে ফেলেন মাস্ক। জনগণকে অভয় দেন করোনায় ভীত না হতে। নিজেকে পরিচয় দেন করোনা স্কুলের একজন অভিজ্ঞ ছাত্র হিসেবে। ঘোষণা দেন সহসাই নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর এবং দ্বিতীয় দফা বিতর্কে অংশ নেয়ার। এছাড়া স্টিমুলাস চেকের বিষয়টি স্থগিত করে দেন ট্রাম্প। প্যান্ডেমিক এই প্রনোদনা চেক বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণায় জনমনে সৃষ্টি হয়েছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া। তার এ সিদ্ধান্ত নির্বাচনী ফলাফলে প্রভাব ফেলবে এমনটিই অভিজ্ঞ মহলের ধারণা। করোনাভাইরাস সংক্রমন নিয়ে প্রথম থেকেই নেতিবাচক মনোভাব দেখিয়ে আসছেন ট্রাম্প।
রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। এমন অভিযোগ দেশের শীর্ষ সংক্রমন ব্যাধি বিশেষজ্ঞদের। যুক্তরাষ্ট্রে করোনা সংক্রমনের প্রারম্ভে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে প্রাণহানি হয়তো আরো অনেক কম হতো। তা না করে ট্রাম্প করোনা নিয়ে বাহাস বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। পরোক্ষভাবে মানুষকে নিরুৎসাহিত করেন মাস্ক ব্যবহারে। তার প্রতিটি অনুষ্ঠান ও নির্বাচনী সমাবেশে মাস্ক পরিধানের কোন বাধ্যবাধকতা না থাকায় তার ফল এখন ভোগ করছেন তিনি ও হোয়াইট হাউজ। যুক্তরাষ্ট্রে করোনা ভাইরাস সংক্রমনে এ পর্যন্ত প্রাণহানি প্রায় ২ লাখ ২০ হাজার। আর আক্রান্তের সংখ্যা ৭৮ লক্ষ। যা সারা বিশ্বে সর্বোচ্চ। মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ আসছে এমন সতর্ক বার্তা দিয়েছে সিডিসি। এমতাবস্থায় জনগণকে ঘাতক এ ব্যাধির হাত থেকে বাঁচাতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে। কোন ধরণের হঠকারিতা নয়। ব্যক্তিগত অসুস্থতা ও চিকিৎসা নিয়ে নাটক করেছেন তিনি। কিন্তু দেশবাসীকে নিয়ে নাটকীয়তা হবে আত্মঘাতির শামিল।
Posted ১:১৮ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৮ অক্টোবর ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh