| বৃহস্পতিবার, ০৬ এপ্রিল ২০২৩
উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌছেছে যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুকের গুলিতে খুনের ঘটনা। সম্প্রতি টেনেসি অঙ্গরাজ্যের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক তরুণীর এলোপাতাড়ি গুলিতে তিন শিশুসহ ছয়জন নিহত হয়েছেন। পরে পুলিশের গুলিতে ওই তরুণীও প্রাণ হারান। এ নিয়ে চলতি বছরের প্রথম তিন মাসেই যুক্তরাষ্ট্রে কমপক্ষে ১২৯টি বন্দুক হামলা হয়েছে । অনলাইনে বন্দুক সহিংসতা তথ্য সরবারাহকারী প্রতিষ্ঠান দ্য গান ভায়োলেন্স আর্কাইভ (জিভিএ) থেকে এ তথ্য জানা যায়।
জিভিএ অনুসারে, গত বছরের ১৯ মার্চ একদিনেই একশ বন্দুক হামলা চালানো হয়েছিল। এর আগে ২০২১ সালেও মার্চের শেষ দিনে একই ধরনের হামলার ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর মুখ খুলেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বলেন, ‘এটা মেনে নেওয়া যায় না। গোটা বিষয়টির দিকে কড়া নজর রাখছি। এই ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের হৃদয় একেবারে ভেঙে গিয়েছে।
কংগ্রেসের কাছে আমার আবেদন, অস্ত্র রাখার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করুন তারা। বাইডেনের বক্তব্য, একমাত্র কংগ্রেসই এই পরিস্থিতিতে এগিয়ে আসতে পারে এবং দেশকে বাঁচাতে পারে। এদিন বক্তৃতার সময় বাইডেন জানিয়েছেন, দুঃখজনক সত্য হলো, আমেরিকায় সবচেয়ে বেশি শিশুর মৃত্যু হয় বন্দুকধারীর গুলিতে। গত কয়েক বছরে একের পর এক স্কুলে আক্রমণ হয়েছে এবং একের পর এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
ন্যাশভিল তার সাম্প্রতিকতম উদাহরণ। এই মুহূর্তে এটা বন্ধ হওয়া দরকার। বাইডেন একটি সমীক্ষা তুলে ধরে জানান প্রতি বছর গাড়ি দুর্ঘটনায় যত ছাত্র-ছাত্রীর মৃত্যু হয়, বন্দুকধারীর হামলায় তারচেয়ে অনেক বেশি ছাত্র-ছাত্রী নিহত হয়। চোখের সামনে এই তথ্য থাকা সত্ত্বেও তার হাত-পা বাঁধা। অস্ত্র আইন বদলের চেষ্টা করেও তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। ফলে এবার বিষয়টি তিনি কংগ্রেসের হাতে ছেড়ে দিয়েছেন। তার বক্তব্য, একমাত্র কংগ্রেসই পারে এই পরিস্থিতির বদল ঘটাতে। নব্বইয়ের দশকে প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টন অস্ত্র আইন নিয়ে কড়া পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। এবারও সেই একইভাবে অস্ত্রের বিরুদ্ধে নামতে হবে। প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, অধিকাংশ আমেরিকান ঘরে সেমি অটোমেটিক, হত্যা করা যায়, এমন অস্ত্র রাখতে চান না। কয়েকজন রাখে। আর যারা রাখে, তারাই এই কাজ করে।
আগ্নেয়াস্ত্রধারীদের এলোপাতারি গুলিতে স্কুলে, শপিং মলে, দোকানে বা উন্মুক্ত স্থানে হত্যা করার ঘটনা হ্রাস পাওয়ার কোনো লক্ষণই যেন দেখা যাচ্ছে না। বিভিন্ন রাজ্যে, ছোট-বড় শহর ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রায় প্রতি দিনই বন্দুক হামলায় ঘটছে প্রাণহানির ঘটনা। বিগত প্রায় তিন দশকে হত্যাকান্ড ও অপরাধের ঘটনা কমে যাওয়ায় জনগণ ছিলো অনেকটাই স্বস্থিতে। সম্প্রতি খুনের ঘটনা শান্তিপ্রিয় মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে নূতন করে। অবাধে চলছে অস্ত্র বিক্রির রমরমা ব্যবসায়।
জাতীয়ভাবে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন পাশ না হওয়ায় নানা ফাঁকফোকড় দিয়ে বেড়িয়ে যাচ্ছে অপরাধীরা। ২০২০ সালে হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে সাড়ে ২১ হাজার মানুষ। ২০১৯ সালের তুলনায় যা প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি। আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে খুনের সংখ্যা বেড়েছে বলে জানিয়েছে এফবিআই। এফবিআইয়ের রিপোর্ট বলছে, ৭৭ শতাংশ মানুষ খুন হয়েছেন বন্দুকের গুলিতে। অস্ত্র বিক্রির হার সবচেয়ে বেশি টেক্সাসে। কিন্তু কীভাবে অপরাধ প্রবণতাকে বদলানো সম্ভব, তা নিয়ে কোনো স্পষ্ট অভিমতে ্পৌছাতে পারেননি বিশেষজ্ঞরা। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ভোটপ্রচারের সময় বলেছিলেন, অস্ত্র বিক্রি নিয়ে তার প্রশাসন কড়া পদক্ষেপ নেবে। এফবিআইয়ের রিপোর্ট সরকারকে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য করে কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়। নিউইয়র্ক সিটিতেও বৃদ্ধি পেয়েছে অপরাধ প্রবণতা।
অনেক সময় কোন অপরাধ ঘটতে দেখলেও আইন প্রয়োগকারীরা নিজেদেরকে অপরাধ দমন থেকে সরিয়ে নেন। এতে অপরাধীরা উৎসাহিত হয় এবং সাম্প্রতিককালে সমগ্র দেশে হত্যাকান্ড বেড়ে চলার মধ্যে পুলিশের নিস্ক্রীয়তাও কম দায়ী নয় বলে মনে করেন অপরাধ বিশেষজ্ঞরা। আইন শৃংখলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটানো, বিশেষ করে মানুষ যাতে আইনকে হাতে তুলে নিতে না পারে সেজন্য আইনশৃংখলা রক্ষাকারীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার আবশ্যকতা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, পুলিশের প্রতি অবিশ্বাস ও আস্থাহীনতা এবং পুলিশের মাঝে স্বল্প নৈতিক মনোবল থাকার কারণে পুলিশ প্রো-অ্যাকটিভ হতে পারে না। কারণ তারা কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করলে তাদের উর্ধতনরা তাদের অ্যাকশনকে সমর্থন করবেন কিনা তা নিয়ে তারা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগে। পুলিশ অফিসাররা সাম্প্রতিক জামিন বিধি সংস্কারকেও অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধির একটি কারণ বলে উল্লেখ করেছেন। অন্যান্য ফ্যাক্টরের মধ্যে স্থায়ীভাবে বিদ্যমান মাদক, অর্থ ও আগ্নেয়াস্ত্রের সমন্বয়ও গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হিসেবে অবদান রাখছে।
অপরাধ বৃদ্ধির পেছনে দারিদ্র ও মানসিক স্বাস্থ্য, মাদকসেবনের মত বিষয়গুলো বিশেষভাবে জড়িত। এছাড়া আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে সৃষ্ট দ্বন্দ্বেও হত্যাকান্ডের মত ঘটনা ঘটে চলেছে। এমনকি করোনা মহামারির আগেও দেখা গেছে যে মানুষ বেশি স্পর্শকাতর হয়ে গেছে। তুচ্ছ বিষয় নিয়ে কলহও হত্যাকাণ্ডে পর্যবসিত হচ্ছে, যা মহামারির সময়ে আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। বাইডেন প্রশাসন অতি দ্রুত অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন পাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এমন প্রত্যাশাই জনগণের। নাগারিকের জানমালের নিরাপত্তা বিধানের দায় সরকারের উপরই ন্যাস্ত করেছে দেশের সংবিধান।
Posted ১:১৫ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৬ এপ্রিল ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh