| বৃহস্পতিবার, ১১ মে ২০২৩
বিশ্বের যেখানেই বাংলাদেশিরা বাস করছেন, সেখানেই তারা দেশের রাজনীতিকে টেনে নিয়ে সংঘর্ষে জড়িযে পড়ছেন। প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঝে মারপিট ও পুলিশী গ্রেফতারের ঘটনা নতুন কিছু নয়। যেখানে প্রবাসী বাংলাদেশি সংখ্যা অধিক সেখানে সংঘাতেও ঘটনাও অধিক।
নিউইয়র্ক তেমন একটি স্থান। দুটি প্রধান দল তো বপেই, দেশে সক্রিয় প্রতিটি দলের নেতারা নিউইয়র্কে আসেন বেশি। এখানে জাতিসংঘের সদর দফতর এবং প্রতিবছর সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে যোগদানকারী বাংলাদেশের সরকার প্রধানদের পক্ষে শান্তি সমাবেশ ও বিপক্ষে বিক্ষোভ প্রদর্শন রীতিমতো রাজনৈতিক রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। তবে চলতি সপ্তাহের ১ মে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওওয়াশিংটন ডিসিতে আওয়ামী লীগ -বিএনপির মারপিটের ঘটনা অতীতের যেকোনো ঘটনাকে হার মানিয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ৪ জন এবং গ্রেফতার হয়েছেন ৩ জন।
বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের অংশীদারত্বের ৫০ বছরপূর্তি উপলক্ষে বিশ্বব্যাংক কার্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় কার্যালয়ের বাইরে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করতে থাকেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। একই স্থানে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতা-কর্মীরা প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে সমাবেশের আয়োজন করেন। একপর্যায়ে দুই পক্ষের নেতা-কর্মীদের মধ্যে মারামারি শুরু হয়।
এতে দুই দলের বেশ কয়েকজন আহত হন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খবরটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশের রাজনীতি ও নির্বাচনী বিরোধ নিয়ে দেশের বাইরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের মারামারি-হাতাহাতির ঘটনা অত্যন্ত লজ্জাজনক। যেসব বিদেশি নাগরিক সেদিনের মারামারির ঘটনা দেখেছেন, তাঁরা বাংলাদেশ সম্পর্কে কী ধারণা করবেন? ওয়াশিংটনে দুই দলের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হলো, তারও কারণ নির্বাচন। আওয়ামী লীগ বলছে, সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে।
বিএনপির দাবি, এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না, অতএব নির্বাচনের আগে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। দেশের নির্বাচন নিয়ে ঝগড়াঝাঁটি এখন দেশের সীমানা ছাড়িয়ে দিল্লি, বেইজিং, মস্কো, ওয়াশিংটন, টোকিও, ব্রাসেলস পর্যন্ত উত্তাপ ছড়াচ্ছে। কোনো দেশের বিবৃতি যে দলের পক্ষে যায়, সেই দল আহ্লাদিত হয়। যে দলের বিপক্ষে যায়, তারা ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনে।
আমেরিকান পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে প্রায়ই বাংলাদেশের নির্বাচন, মানবাধিকার, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ইত্যাদি নিয়ে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকেরা। এসব প্রশ্ন ও উত্তর নিশ্চয়ই আমাদের জন্য সুখকর নয়। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে যে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, সেই দেশের নির্বাচন ও গণতন্ত্র নিয়ে বাইরের লোককে আমরা এত কথা বলার সুযোগ করে দিয়েছি। আমাদের নেতারা নির্বাচনের বিষয়ে জনগণের সঙ্গে কথা বলেন না, তাঁদের মনোভাব জানতেও চান না। তাঁরা কথা বলেন ‘বিদেশি বন্ধুদের’ সঙ্গে। সম্প্রতি ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র অংশীদারত্ব সংলাপেও প্রাধান্য পায় নির্বাচনের বিষয়টি।
খবরে বলা হয়, বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পাশাপাশি মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সমুন্নত রাখার বিষয়ে আবারও আকাক্সক্ষা ব্যক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব ও আমেরিকান আন্ডার সেক্রেটারির মধ্যে যে বৈঠক হয়েছে, তাতেও নির্বাচন ও মানবাধিকারের বিষয়টি এসেছে। আমরা কি এ কথা কখনো ভাবতে পারি, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, যুক্তরাজ্যের নির্বাচন নিয়ে আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিংবা পররাষ্ট্রসচিবেরা দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে তাঁদের দেশের মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রক্ষা, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের তাগিদ দেবেন? ওই রাষ্ট্রগুলো কি তা কখনো মেনে নেবে?
আমরা মেনে নিচ্ছি এ কারণে যে আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব স্বাধীনতার ৫১ বছর পরও একটি ত্রুটিমুক্ত, সর্বজনস্বীকৃত নির্বাচনী ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারেনি। আমরা বিরোধী দলে থাকতে গণতন্ত্র ও সুষ্ঠু নির্বাচনের একরকম সংজ্ঞা ঠিক করি, ক্ষমতায় গেলে আরেক রকম। এ স্ববিরোধিতা ও আত্মপ্রতারণা থেকে মুক্ত হতে না পারলে বিশ্বের সব দেশই গণতন্ত্র ও নির্বাচন নিয়ে আমাদের সবক দিয়ে যাবে। বিদেশে তাদের সামনে সংঘাতে লিপ্ত হয়ে বাংলাদেশ সম্পর্কে তাদের ধারণাকেই আরো যথার্থ প্রমাণ করতে থাকব।
Posted ৪:২০ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১১ মে ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh