| বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫
নিউইয়র্ক সিটির মেয়র পদে নির্বাচনের জন্য প্রার্থী মনোনয়নে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রাইমারিতে প্রার্থী ভারতীয় বংশোদ্ভুত নিউইয়র্ক স্টেটের তরুণ অ্যাসেম্বলিম্যান জোহরান মামদানি হেভিওয়েট প্রার্থী নিউইয়র্ক স্টেটের সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু ক্যুমোকে পরাস্ত করে অভূতপূর্ব বিজয় অর্জন করেছেন। গত মঙ্গলবার সিটির বোর্ড অফ ইলেকশনস ঘোষিত প্রাইমারির চূড়ান্ত ফলাফলে মামদানি পেয়েছেন প্রদত্ত ভোটের ৫৬ শতাংশ এবং তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যান্ড্রু ক্যুমো’ পেয়েছেন ৪৪ শতাংশ ভোট। আগামী ৪ নভেম্বর সিটির ১১১তম মেয়র পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মামদানি নির্বাচিত হলে সিটির চারশ’বছরের ইতিহাসে তিনিই হবেন সর্বপ্রথম মুসলিম ও ভারতীয়বংশোদ্ভুত মেয়র। নিউইয়র্ক সিটি বহুকাল ধরেই একটি ডেমোক্রেট সিটি।
সাধারণভাবে প্রাইমারিতে মামদানির বিজয় লাভের অর্থ তিনিই যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম এই সিটির পরবর্তী মেয়র। কিন্তু চূড়ান্ত নির্বাচন তার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ, পরাজিত ডেমোক্রেট প্রার্থী ক্যুমো চূড়ান্ত নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়বেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তাছাড়া বর্তমান মেয়র, যিনি সিটির দ্বিতীয় কৃষ্ণাঙ্গ মেয়র তিনি পুন:নির্বাচনের জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
প্রাইমারিতে মামদানির বিজয় এক চমক। ডেমোক্রেট পার্টির নীতি নির্ধারকরাও ধারণা করতে পারেননি যে, মামদানির পক্ষে ক্যুমো, সিটি কম্পট্রোলার ব্র্যাড ল্যান্ডারের মতো প্রার্থীকে এত ব্যবধানে পরাজিত করা সম্ভব। সিটিতে বসবাসকারী ইহুদি জনগোষ্ঠীর হতাশা আরো তীব্র। তারা একজন মুসলিম এবং নির্বাচনী প্রচারণায় ইসরায়েলি সরকারের ফিলিস্তিনি নিগ্রহের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার ঘটনাকে ভালোভাবে গ্রহণ করতে পারেনি। তাছাড়া মামদানি একজন সমাজতন্ত্রী, যাদেরকে ইহুদি জনগোষ্ঠী ভালো দৃষ্টিতে দেখে না। ডেমোক্রেটিক পার্টির একাধিক ইহুদি কংগ্রেসম্যান মামদানিকে সমর্থন করায় সিটির ইহুদিদের একটি অংশ তাদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। শুধু তাই নয়, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মামদানির বিজয়কে ভালোভাবে গ্রহণ করেননি এবং অত্যন্ত আক্রমণাত্মক ও আপত্তিকর ভাষায় তার বিরুদ্ধে কথাবার্তা বলতে শুরু করেছেন। তিনি প্রমাণ করতে চান যে, তিনি নিউইয়র্ক সিটির মেয়র হিসেবে জোহরান মামদানিকে দেখতে চাননা। মামদানি যদি মেয়র হন তাহলে তাকে ভদ্রভাবে চলতে হবে, তা না হলে নিউইয়র্ক সিটির আর্থিক বরাদ্দ বন্ধ হতে পারে এমন প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিতও ফুটে উঠেছে তার কথায়। তার ভাষায় ডেমোক্রেটি পার্টি মামদানিকে প্রার্থী বাছাই করে ভুল করেছে। এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পোস্টে ট্রাম্প মামদানিকে শতভাগ কমিউনিস্ট পাগল বলে বর্ণনা করেছেন।
মামদানি ‘দেখতে ভয়ঙ্কর’ এবং তার ‘কণ্ঠ কর্কশ’ বলে বিদ্রƒপ করতেও ছাড়েননি। তার পক্ষে যদি সম্ভব হতো তাহলে তিনি হয়তো খোলামেলাই বলে বসতেন যে, মামদানি একজন ‘মুসলিম’ হওয়ার কারণে তিনি তার নির্বাচিত হওয়াকে ভালো চোখে দেখছেন না। তবে এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে নভেম্বরের নির্বাচনে জোহরান মামদানি সিটির মেয়র নির্বাচিত হলেও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মেয়াদে তার পক্ষে নির্বিঘ্নে দায়িত্ব পালন করা কঠিন হবে। ট্রাম্পের বক্তব্যে উৎসাহিত হয়ে মামদানিকে ঘায়েল করার জন্য রিপাবলিকানরা উঠেপড়ে লেগেছেন। তারা ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি আহবান জানিয়েছেন যে জোহরান মামদানির আমেরিকান নাগরিকত্ব বাতিল করে তাকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ডিপোর্ট করতে। তারা আরো বলছেন যে, মামদানি নিউইয়র্ক সিটির পরবর্তী মেয়র হলে সিটি ‘ইসলামোফোবিক’ উগ্রতায় ছেয়ে যাবে।
তারা যুক্তরাষ্ট্রে কমিউনিজমের প্রভাব মোকাবিলার উদ্দেশ্যে ১৯৫৪ সালে প্রণীত ‘রেড স্কেয়ার-এরা কমিউনিস্ট কন্ট্রোল অ্যাক্ট’ প্রয়োগ করে মামদানির আমেরিকান নাগরিকত্ব বাতিল করে তাকে দ্রুততম সময়ে ডিপোর্ট করার আহবান জানিয়েছে। এসবের মধ্যেও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, মামদানি যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন কৌশলে পরিবর্তনের সূচনা এনেছেন। তিনি অসাধারণ তৃণমূল আন্দোলন গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন। এ ধরনের একটি আন্দোলন গড়ে তুলতে হলে ও জনগণকে পাশে পেতে হলে এমন একটি অর্থনৈতিক কর্মসূচি থাকতে হবে, যা শ্রমজীবীও সাধারণ মানুষের প্রয়োজনের কথা বলে। নিউইয়র্কবাসী অপেক্ষা করছে নভেম্বরের নির্বাচনে মামদানিকে বিজয়ী হয়ে নিউইয়র্কের মেয়র হিসেবে দেখতে।
Posted ১২:৪৩ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh