| বৃহস্পতিবার, ২৯ আগস্ট ২০২৪
ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতি বৃষ্টিতে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ১১টি জেলায় ভয়াবহ বন্যায় ৪,৯৩৮, ১৫৯ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যায় এখন পর্যন্ত মারা গেছে ২৭ জন। সরকারি হিসেবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ৯ লাখ ৪৪ হাজার ৫৪৮টি। যদিও ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত সংখ্যা এর তুলনায় আরো অনেক বেশি হবে। কারণ বন্যার ক্ষয়ক্ষতির খবর এখনো আসছে। বন্যাদুর্গত মানুষের আশ্রয়ের জস্য সরকারিভাবে ৩, ৫২৭টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছিল। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৮৮৮ জন আশ্রয় নিয়েছে। এর বাইরেও বহু ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ বিভিন্ন স্থানে নিজেদের উদ্যোগে আশ্রয় নিয়েছে। আগাম পূর্বাভাস না থাকায় ওইসব এলাকার লোকজন বন্যার ক্ষতি থেকে কোনোভাবে জীবন রক্ষা করতে পারলেও তাদের সর্বস্ব হারিয়েছে। ফসলি জমি ঢলের সাথে আসার বালিব নিচে চাপ পড়েছে। ইতোমধ্যে জানা গেছে যে, বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফেনী জেলা।
এই জেলার অধিকাংশ এলাকার বাসিন্দাদের স্মৃতিতে এমন বন্যার কোনো অভিজ্ঞতা নেই। পানির ধারা এত প্রবল ছিল যে প্রথম দুদিন সেসব স্থানে উদ্ধার অভিযানও চালানোও সম্ভব হয়নি। ত্রাণকার্য চালানো সম্ভব হয়নি দুর্গম এলাকায় যাওয়ার জন্য নৌযানের অভাবে। অভিযোগ উঠেছে ভারত তাদের ত্রিপুরা রাজ্যের ডুম্বুর বাঁধের গেট খুলে দিয়েছে বাংলাদেশকে তাদের উজানে প্রবল বৃষ্টিপাত ও পানিবৃদ্ধির বিষয়ে আগাম সতর্কবাণী দেয়নি। তারা অজুহাত দিচ্ছে যে, ত্রিপুরায় কদিন ধরেই যে অতিবৃষ্টি হচ্ছিল তাতে বাঁধ খুলে না দিলে ভারতেও বিপুল সংখ্যক মানুষের প্রাণহানি ঘটতো। ভারতের দিক থেকে বিষয়টি যৌক্তিক বলে মনে হলেও আন্তর্জাতিক নদীর পানি বণ্টন ও ব্যবস্থাপনার কিছু নিয়ম-কানুন আছে। উজানের দেশ হিসেবে ভারতের এই নিয়মগুলো মেনে চলা উচিত ছিল। দুঃখজনক হলো, ভারত এসব আন্তর্জাতিক বিধিবিধানের কোনো তোয়াক্কাই করে না। ভারত বছরের পর বছর ধরে পানি নিয়ে যে কৌশল অবলম্বন করে আসছে, তাকে বিশ্লেষকরা ‘পানি রাজনীতি’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। এরকম নামকরণের কিছু প্রেক্ষাপট রয়েছে।
কারণ উজানে অবস্থানের সুবিধা নিয়ে ভারত দেশের ভেতরে অধিকাংশ অভিন্ন নদীর পানি শুকনো মওসুমে সরিয়ে নিয়ে চাষাবাদে কাজে লাগায়। তাদের অভ্যন্তরীন নদীগুলোর নাব্যতা বজায় রাখে। বর্ষা মওসুমে অতিবৃষ্টি বা বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিলে ভারত এসব বাঁধের গেট খুলে দিয়ে নিজ দেশে বন্যা পরিস্থিতি সামাল দিয়ে বন্য ঠেলে দেয় বাংলাদেশে। ভাটির দেশ হওয়ায় বাংলাদেশ বরাবরই ভারতের এই পানি আঁটকে রাখা এবং বৃষ্টির মওসুমে পানি ছেড়ে দেওয়ার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফারাক্কা বাঁধের কারণে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদীগুলোয় প্রবাহ কমে গিয়ে ওইসব এলাকার মানুষের জীবন-জীবিকায় কী মারাত্মক প্রভাব পড়ছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলো শুকনো মওসুমে পানিশূন্য মরুর মতো হয়ে যায়। ভারতের সঙ্গে পদ্মা নদীর পানি বণ্টন নিয়ে বাংলাদেশের চুক্তি আছে। কিন্তু চুক্তির অনেক শর্ত বাংলাদেশের স্বার্থ পরিপন্থী। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ পানি পায় না। রাজনৈতিক সরকারগুলো ক্ষমতায় আসে এবং ক্ষমতায় টিকে থাকার কারণে দেশের স্বার্থ বিকিয়ে চুক্তি করে। তারা চুক্তি সম্পন্ন করা বা নবায়ন করার কৃতিত্ব নেয়, কিন্তু সমস্যা যেখানে ছিল সেখানেই রয়ে যায়। বিশেষ করে পানি ভাগাভাগি নিয়ে বাংলাদেশ শুরু থেকে ভারতে বিগ ব্রাদারসুলভ অপরাজনীতির শিকার হওয়া থেকে বের হতে পারেনি। তিস্তা নদীর পানি নিয়েও ভারতের টালবাহানা একই ধরনের। কবে অভিন্ন নদীগুলোর পানির ন্যায্য অংশ বাংলাদেশ লাভ করবে, তা নিশ্চিত করতে হলে যে শক্ত কূটনৈতিক অবস্থান গ্রহণ করা প্রয়োজন জনগণ সেই আশায় অপেক্ষা করছে।
Posted ১২:১৪ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৯ আগস্ট ২০২৪
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh