| বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫
ছবি : সংগৃহীত
প্রতিষ্ঠিত হওয়ার প্রায় আট দশক পর ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে ইসরাইলের উপলব্ধি ঘটেছে যে, চারদিকে শত্রু পরিবেষ্টিত থেকে গায়ে পড়ে উস্কানি দেওয়ার অর্থ নিজের অস্তিত্বকে হুমকির মুখোমুখি করা। মধ্যপ্রাচ্যের মুরুব্বি হিসেবে খ্যাত সৌদি আরব, মিশর, জর্ডান, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত ইসরাইলের সঙ্গে কোনো দ্বন্দ্বে লিপ্ত হতে যেহেতু অপারগ, সেক্ষেত্রে ইসরাইল ধরেই নিয়েছিল যে, দুই হাজার কিলোমিটার দূরের ইরানকে কাবু করা খুব কঠিন হবে না। কারণ একমাত্র ইরানই ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের সার্বিক সহায়তা করে যাচ্ছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র যেহেতু ইসরাইলের প্রধান মিত্র এবং ইরানের প্রধান শত্রু, অতএব ইসরাইল ধরেই নিয়েছিল যে, যুক্তরাষ্ট্র ইরানে বিপ্লবোত্তর শাসকগোষ্ঠীকে উৎখাত করে পলাতক শাহের পুত্রকে ক্ষমতাসীন করবে।
যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা অর্জনের বিরুদ্ধে শুরু থেকে মুখর, সেক্ষেত্রে ইসরাইলের প্ররোচনায় ইরানের তিনটি কথিত পারমাণবিক স্থাপনায় ভূগর্ভভেদী বোমা হামলা চালিয়ে সাপের লেজে পা ফেলার মতো কাজ করেছে। ইরান আগেই ঘোষণা দিয়েছিল যে যুক্তরাষ্ট্র যদি ইরানের ওপর হামলা চালায় তাহলে তারা মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি এবং পারস্য উপসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহী রণতরীতে আঘাত হান এবং মধ্যপ্রাচ্য থেকে পশ্চিমের দেশগুলোতে তেলবাহী জাহাজ চলাচলের প্রধান নৌ করিডোর হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেবে।
ইরান তাই করেছিল এবং যুক্তরাষ্ট্রের তাতে হুশ হয়েছে। হুশ হয়েছে ইসরাইলেরও। ইসরাইয়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং কাতারের আমিরের শরণাপন্ন হয়েছেন ইরানকে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত করাতে। ইরান শর্তসাপেক্ষ তাতে সম্মত হয়েছে। ২৪ জুন থেকে অবশেষে তেহরান-তেলআবিব যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। এর আগে ২৩ জুন ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেন, ‘সম্পূর্ণ ও সার্বিক’ যুদ্ধবিরতি, ধাপে ধাপে কার্যকর হবে। যদিও যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেওয়ার পরও ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা এবং ইসরাইলের বিমান হামলা চলেছে। তবুও সন্দেহের অবসান ঘটেনি। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা এখনো নিশ্চিত হতে পারেননি যে, এই যুদ্ধবিরতি কতটা স্থায়ী হতে পারে? এ ব্যাপারে দুই পক্ষের আনুষ্ঠানিক সম্মতি বিশেষভাবে প্রয়োজন। আনুষ্ঠানিক সম্মতি না এলেও দেশ দু’টির কর্মকাণ্ড থেকে মেনে নেয়ার বিষয়টি স্পষ্ট।
এই যুদ্ধবিরতি দুই পক্ষের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষণও হতে পারে, আবার সীমিত সময়ের জন্য দু’পক্ষ বিশ্রাম চাইছে বলেও যুদ্ধের বিরতির ব্যবস্থা হতে পারে। ইরান বলছে, ইসরাইল যদি আক্রমণ বন্ধ করে, তবেই তারা বিরতি দেবে। অর্থাৎ এখন পরিস্থিতি এক ধরনের অবাধ্য দ্বিপক্ষীয় বিশ্রাম-সমঝোতার মতো। এর পেছনে অস্থায়ী রাজনৈতিক কূটনীতি কাজ করেছে বলেও মনে হয়। মার্কিন-কাতার মধ্যস্থতায় আলোচনায় যুদ্ধ ঘিরে বেশ চাপ সৃষ্টির আলামত ছিল যার বাস্তব প্রভাব মাঠে আলাদাভাবে দেখা গেছে। এমনকি ইরানের পরমাণু কেন্দ্রসমূহে যুক্তরাষ্ট্রের বোম্বার বি-২ এর হামলা এবং কাতারের মার্কিন ঘাঁটিতে পাল্টা হামলার মধ্যেও গোপন বোঝাপড়া থাকতে পারে বলে মনে হয়। দু’পক্ষের জনগণকে শান্ত করার জন্য এই ধরনের প্রকাশ্য কিছু ইভেন্টের প্রয়োজন হয়ে থাকতে পারে। ইরানে আমেরিকার সরাসরি আক্রমণে যুদ্ধ আঞ্চলিকীকরণ পর্যায়ে পৌঁছে যায়। ইরান এই আক্রমণে আত্মসমর্পণ করেনি, পাল্টা হামলা চালিয়েছে আমেরিকান ঘাঁটিতে।
দেখা যাচ্ছে, এই পাল্টাপাল্টি আক্রমণে যুদ্ধের বিস্তার না ঘটে সমঝোতার পথ তৈরি হয়েছে। এতে স্পষ্ট যে, আমেরিকাকে একটি ধ্বংসাত্মক যুদ্ধে টেনে এনে দুর্বল করার পরিকল্পনার ফাঁদে ট্রাম্প পড়তে চাননি। যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে ইরানকে সব ধরনের সহায়তা দিতে পারে চীন ও রাশিয়া। রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট মেদভেদেভ এমনও বলেছিলেন, অনেক দেশই ইরানকে পারমাণবিক ওয়ারহেড দেয়ার প্রস্তাব করেছে। ইসরাইলের উপর ইরানের আক্রমণ শুরু থেকেই প্রত্যাশার বাইরে ধ্বংসাত্মক ছিল।
যুদ্ধ অব্যাহত থাকলে আক্রমণ পাল্টা আক্রমণ আরো ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠতে পারে। ইরান আক্রান্ত হওয়ার পর আমেরিকান স্থাপনায় আঘাত করেছে। এর আগে, দেশটি বলেছে আমেরিকান সব ধরনের স্থাপনা ও স্বার্থে আঘাত করার আইনি অধিকার এখন ইরানের সৃষ্টি হয়েছে। এটি তেহরান সংরক্ষণ করবে এবং সময়মতো ব্যবহার করবে।
Posted ১১:৪০ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh