| বৃহস্পতিবার, ০৩ জুন ২০২১
অবিশ্বাস্যভাবে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি। করোনা মহামারির ভয়াবহতা কমে আসায় নূতন স্বাভাবিকতায় ফিরছে সবকিছু। কভিড-১৯ মহামারীর ক্ষত কাটিয়ে উঠতে অর্থনীতিতে বিপুল পরিমাণ প্রণোদনা দিয়েছে সরকার। সময়োচিত প্রনোদনার কারণে নাগরিকদের এসময়ে অতিরিক্ত আয় বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ২ ট্রিলিয়ণ ডলার। সাধারণ মানুষের বেড়েছে ক্রয় ক্ষমতা। বাড়ির মূল্য আকাশ ছোঁয়া হয়েছে নিউইয়র্ক সহ বিভিন্ন রাজ্যে। গাড়ি বিক্রি বেড়েছে নূতন করে। ভীড় জমেছে স্বর্ণ সহ বিভিন্ন বিলাসী সামগ্রীর দোকানে। পাশাপাশি শিথিল করা হয়েছে বিভিন্ন বিধিনিষেধও। ফলে গতি ফিরেছে গ্রাহকব্যয় ও অর্থনৈতিক কার্যক্রমে। শিগগিরই বিশ্বের বৃহত্তম এ অর্থনীতি প্রাক-কভিড স্তরে ফেরার ইঙ্গিতও দেখা যাচ্ছে। আমেরিকার অন্যান্য জাতি গোষ্ঠির মানুষের মতো বাংলাদেশী আমেরিকান কমিউনিটিতেও এর প্রভাব লক্ষ্যণীয়।
সরকারী প্রণোদনা ছাড়াও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অনেকেই পিপিপি লোন ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য প্রদত্ত ঋণ সুবিধা ভোগ করছেন।আর চলতি বছর অর্থনীতিতে চার দশকের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী কর্মক্ষমতার প্রত্যাশা করা হচ্ছে। অর্থনীতিবিদরা ৬ দশমিক ১ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছেন। পৃথক দুই রাউন্ডে প্রণোদনা চেক ও বিপুল পরিমাণ সঞ্চয় অনেক গ্রাহককে জানুয়ারি থেকে মার্চ সময়কালে পণ্য ও পুনরায় চালু হওয়া পরিষেবায় অবাধে ব্যয় করতে সহায়তা করেছে। এরই মধ্যে ক্রমবর্ধমান টিকাদান কার্যক্রম অর্থনীতিকে সব ধরনের বিধিনিষেধের বাইরে বের হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। পাশাপাশি ব্যবসায়িক কার্যক্রমে বিনিয়োগ ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরো শ্রমিক নিযুক্ত করার আত্মবিশ্বাস সরবরাহ করেছে। এমন বেশ কয়েকটি অর্থনৈতিক তথ্য পুনরায় চাঙ্গা করে তুলেছে শেয়ারবাজারকে। রেকর্ড ছাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ির দাম। গত এপ্রিল থেকেই বাড়তে থাকে বাড়ির দাম। চলতি মাসে এসে তা অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে বেড়ে যায়। সেই সময় থেকে এখন পর্যন্ত এটি সর্বোচ্চ মধ্যবর্তী দাম। এসব বাড়ির মধ্যে রয়েছে একক পরিবারের জন্য বাড়ি, টাউনহোম, যৌথ মালিকানার বাড়ি ও সমবায় সমিতির বাড়ি। গত বছরের তুলনায় এ সব ধরনের বাড়ির দাম বেড়েছে অন্তত ১৯ শতাংশ। কেবল একক পরিবারের বসবাসের মতো বাড়িগুলোর দাম গত বছরের চেয়ে ২০ শতাংশ বেড়েছে। দাম বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে বাড়ি বিক্রির হারও। প্রতিটি বাড়ি কেনার জন্য অন্তত পাঁচজন লাইনে থাকছেন। এদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশই নগদে মূল্য পরিশোধ করতে চান। নগদে মূল্য পরিশোধের পরিমাণও মার্চের চেয়ে এপ্রিলে বেড়েছে।
আর ঘরে বসে থাকতে চাইছে না যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ। ঘর থেকে বেরিয়ে কেনাকাটা করার জন্য মুখিয়ে আছে তারা। ওয়ালমার্টের প্রধান নির্বাহী সম্প্রতি এ কথা বলেছেন। ফেব্রুয়ারি-এপ্রিল সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য বিক্রি বেড়েছে ৬ শতাংশ। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় অনলাইন বিক্রিও কমতে শুরু করেছে। এপ্রিল মাসে অনলাইন বিক্রির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৭ শতাংশ। দুই ডোজ টিকাপ্রাপ্ত মানুষেরা এখন অনেকটা স্বাধীনভাবে ঘোরাফেরা শুরু করেছেন। করোনা সংক্রমণের হার একেবারেই কমে যাওয়া এবং মৃত্যুর হারও নিয়ন্ত্রণে আসায় নিউইয়র্কসহ সারা আমেরিকা পুনরায় জেগে ওঠা শুরু করেছে। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যেও গতি আসতে শুরু করেছে। ব্যবসা-বাণিজ্য কেন্দ্রে প্রবেশাধিকার অবাধ এবং অফিস-আদালতেও সশরীরে উপস্থিতির বিধি শিথিল করা হয়েছে। গ্রীষ্মের আমেজে পরিবেশ-প্রকৃতি সবকিছুতেই প্রাণ ফিরেছে। প্রাণের সঙ্গে প্রাণ মিশিয়ে বিশ্বখ্যাত টাইমস স্কোয়ারে তরুণ-তরুণীরা আবারও উচ্ছলতায় মেতে উঠেছেন। নিজ নিজ আঙিনায় পুরনো আড্ডায় বারবিকিউ পার্টি শুরু করেছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরাও। সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক সংগঠনগুলোও চিরচেনা পন্থায় বৈঠক শুরু করেছে। অনেকেই পিকনিকের কর্মসূচি ঘোষণা করছেন।
এদিকে কঠোর লকডাউন ও নিষেধাজ্ঞা শেষে নিউইয়র্ক সিটির সবকিছু ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। বার ও রেস্টুরেন্টের ওপর জারি থাকা নিষেধাজ্ঞাও আর বহাল নেই।এর ফলে অনেকটাই প্রাণ ফিরে পেয়েছে নিউইয়র্কবাসী। করোনা ভাইরাস সংক্রমণে যুক্তরাষ্ট্রের অন্য যে কোনো সিটির তুলনায় বেশি নাজুক পরিস্থিতি ছিল নিউইয়র্ক সিটির। মহামারীর কারণে নিউইয়র্ক সিটির ৯ লাখের বেশি মানুষ কর্মহীন হয়েছে এবং লোকজন কাজে ফিরে আসলেও গতি অতি মন্থর। গত মার্চ মাসে নিউইয়র্ক সিটির রেস্টুরেন্টগুলোতে ১৫ হাজার লোক যোগ দিয়েছে। অন্যান্য ব্যবসাও চালু হচ্ছে এবং শীঘ্রই বেকার হয়ে পড়া লোকজন কাজে ফিরে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। সিটি প্রশাসনের দায়িত্বশীলরা বলছেন যে মহামারী জনিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়া শুরু হয়েছে এবং অর্থনীতির চাকা স্বাভাবিকভাবে ঘুরতে শুরু করবে। পর্যটকেরা ফিরছে, ব্রুকলিন ব্রিজে সেলফি তুলছে এবং প্রিয় রেস্টুরেন্টগুলোতে ভিড় করছে। স্কুলগুলো পুরোপুরি চালু হতে আগামী বছর পর্যন্ত লেগে যেতে পারে। বর্তমানে সীমিত সংখ্যক ছাত্র স্কুলে যাচ্ছে, অধিকাংশ ছাত্র ভার্চুয়াল ক্লাস করছে, আবার একটি অংশ আছে হাইব্রিড, যাদেরকে ফিজিক্যালি ক্লাস করতে হচ্ছে, আবার ভার্চূয়াল ক্লাসও করছে।
আমরা মনে করি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সুযোগ্য নেতৃত্বে অর্থনীতিসহ সার্বিক বিষয়ে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ শক্তি হিসেবে পুণরায় উঠে আসবে যুক্তরাষ্ট্র।
Posted ২:০১ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৩ জুন ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh