| বৃহস্পতিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৩
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের উত্থান, বিভিন্ন বক্তব্য দিয়ে ও পদক্ষেপ নিয়ে তিনি যে চমক সৃষ্টি করেছেন, তার চেয়েও অধিক চমক গুরুতর ফৌজদারি অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম সাবেক প্রেসিডেন্ট হিসেবে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়ানোর ঘটনা। তার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ নয়, ৩৪টি অভিযোগ, যার মধ্যে নারীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক রাখা ও তার মুখ বন্ধ করার জন্য ঘুষ প্রদানসহ কর ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। গত ৪ এপ্রিল মঙ্গলবার ম্যানহাটানের একটি আদালতে তিনি আত্মসমর্পণ করার পর তাকে গ্রেফতার দেখানো হয় এবং পরে তিনি আদালতে প্রথম শুনানিতে উপস্থিত হলে তাকে অভিযোগগুলো পড়ে শোনানো হয়। ডোনাল্ড ট্রাম্প তার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ অস্বীকার করে নির্দোষ দাবী করেন।
আদালত মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছে আগামী ৪ ডিসেম্বর। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে তার বাড়াবাড়ির অভিযোগ উঠতে থাকে তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর থেকেই। এমনকি প্রেসিডেন্ট থাকাকালে তার বিরুদ্ধে দুটি ইমপিচমেন্ট উদ্যোগ এড়াতে সক্ষম হলেও গত এক দশকে বিভিন্ন অভিযোগের ওপর ব্যাপক তদন্তের পর তার বিরুদ্ধে বর্তমানে বিচারাধীন অভিযোগগুলো আনা হয়েছে। ট্রাম্প নিজেকে নির্দোষ দাবী করলেও একজন সাবেক প্রেসিডেন্টের ফৌজদারি অপরাধে আদালতের মুখোমুখি হওয়ার সুদূরপ্রসারী রাজনৈতিক পরিণতি রয়েছে বলে পর্যবেক্ষকরা বলছেন।
কারণ সরকারি দায়িত্ব পালনকালে ধনবান রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী ও যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্টকে ফৌজদারি অভিযোগে বিচারের সম্মুখীণ করার বিব্রতকর ও পাল্টাপাল্টি প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ট্রাম্প তার সহজাত ধৃষ্টতামূলক কথাবার্তা বলা পরিহার করেননি। আদালতে শুনানিতে সরকারপক্ষের আইনজীবী পূর্ববর্তী সপ্তাহগুলোতে ট্রাম্পের হুমকিপূর্ণ কথাবার্তা তুলে ধরেন। শুনানিশেষে তিনি ফ্লোরিডায় ফিরে গিয়েও একই ধরনের কথাবার্তা অব্যাহত রেখেছেন। তিনি তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলাকে সমগ্র জাতিকে অপমান করার শামিল বলে মন্তব্য করেন। ট্রাম্প যাই বলুন না কেন, তিনি যে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে অনেক কলঙ্কময় অধ্যায় যোগ করেছেন, যার একটি হলো, ক্যাপিটল হিলে হামলার জন্য তার সমর্থকদের উস্কানি দান।
২০২০ সালের নির্বাচনে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে ব্যর্থ হয়ে নির্বাচনী ফলাফলকে বানচাল করতে ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি তার সমর্থকরা ক্যাপিটল হিলে হামলা চালায়। এ অভিযোগ থেকে তিনি নিস্কৃতি পাননি। বিচারে কিছু হোক না হোক এ ধরনের একটি হীন কাজে ইন্ধন দেওয়ার জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্প ইতিহাসের কাঠগড়ায় দায়ী থাকবেন।’ এসব সত্ত্বেও ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন মর্মে ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে কোনো অবস্থাতেই তিনি নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে যাওয়ার কথা ভাবছেন না। তার মতে আইনি জটিলতার সৃষ্টি করা হলে বরং তার সমর্থক সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাবে।
তিনি যদি তার বিরুদ্ধে আনীত ফৌজদারি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হন, তাহলে তার চার বছরের কারাদন্ড হতে পারে। সে অবস্থায় তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন কিনা তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে আইনগত দিক থেকে ট্রাম্পের জন্য এসব অভিযোগ মাথায় নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে কোনো বাধা নেইা। এমনকি দোষী সাব্যস্তও হলেও প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে কোনো বাধা নেই। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য তিনটি যোগ্যতা হলো: যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করতে হবে; বয়স হতে হবে কমপক্ষে ৩৫ বছর এবং টানা ১৪ বছর যুক্তরাষ্ট্র বসবাস করতে হবে। এসব সত্ত্বেও কথা থাকে যে, “দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য।”
Posted ৩:৪৭ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh