| বৃহস্পতিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২২
আরবি শাওয়াল মাসের চাঁদ উঠা সাপেক্ষে আগামী ১ অথবা ২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রসহ সমগ্র উত্তর আমেরিকায় উদযাপিত হবে মুসলিমদের প্রধান ধর্মীয় আনন্দোৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর। গত বছরের সূচনায় বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে যে ভয়াবহ আতঙ্কের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, তাতে খোলা মাঠে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়নি। সকল সতর্কতা অবলম্বন ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে সীমিত সংখ্যক মুসল্লির উপস্থিতিতে গতবার ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু ঈদের কোনো আনন্দ তা ছিল না।
বছর ঘুরে আবারও আমরা ঈদুল ফিতর উদযাপন করতে যাচ্ছি। ভ্যাকসিন দেয়াসহ অন্যান্য সতর্কতা নেয়ার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে এবার করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের হার এবার কমে এসেছে এবং সার্বিক পরিস্থিতির লক্ষ্যণীয় উন্নতি হয়েছে। বিভিন্ন ইসলামী সংগঠন ও মসজিদ পরিচালনা কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সীমিত আকারে মসজিদের অভ্যন্তরে ঈদ জামাত আয়োজনের। আল্লাহতায়লা প্রদত্ত মহিমান্বিত মাস রমজান শেষে হিজরী সনের দশম মাস শাওয়ালের প্রথম দিন সারা মুসলিম জাহানে অত্যন্ত আনন্দ, উৎসাহ-উদ্দীপনা ও ধর্মীয় ভাব-গাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে দিনটি উদযাপিত হয়।
শাব্দিক অর্থে ঈদ মানে আনন্দ হলেও প্রকৃত বিবেচনায় ঈদ শুধু একটি আনন্দময় দিন নয়; বরং ঈদ একটি ইবাদত। তাই মুসলমানের ঈদের মূল বক্তব্য হলো মহান আল্লাহর স্মরণ, তার জিকির, তার শ্রেষ্ঠত্ব ও মহত্বকে সামনে রেখে সম্মিলিত আনন্দের পরিবেশ গড়ে তোলা। মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার মধ্য দিয়ে বান্দা যে মহান প্রভুর দরবারে রোজা, তারাবিহ, রহমত, মাগফিরাত, নাজাত, শবেকদরের মতো হাজার মাসের চেয়ে উত্তম রাতের প্রাপ্তিণ্ড এসব নেয়ামতের কারণে বান্দার মনে যে আনন্দের জোয়ার সৃষ্টি হয়, তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটে ঈদের দিনে। তাই মুমিনের ঈদ মানে নেয়ামতপ্রাপ্তির আনন্দ, মহান আল্লাহর দরবারে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের মহা-আয়োজন। বাইহাকি শরিফের একটি হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘রাসূল সা: যখন মদিনায় উপস্থিত হন তখন তিনি দেখতে পান, তারা দু’টি উৎসব পালন করেন। আর এ উপলক্ষে তারা বিভিন্ন আনন্দ-অনুষ্ঠান করে। তিনি জিজ্ঞেস করেন, তোমরা যে দু’টি জাতীয় উৎসব পালন করো, এর মৌলিকত্ব ও বিশেষত্ব কী?’ তারা বলে, আমরা অন্ধকার যুগে এ দু’টি দিন পালন করতাম, এখনো করি। রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ তায়ালা তোমাদেরকে এ দু’টি দিন অপেক্ষা অধিক উত্তম দু’টি দিন অর্থাৎ ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা দান করেছেন। সুতরাং আগের উৎসব বন্ধ করে আল্লাহ প্রদত্ত উৎসব করো।’
আরবি বার মাসের মধ্যে সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ রমজান মাসেই আল-কোরআন নাযিল হয়েছে। এ মাসে লাইলাতুল কদরের মত এমন একটি রাত রয়েছে যা হাজার মাস হতেও উত্তম। রমজান মাসের একটি নফল ইবাদত অন্য মাসের একটি ফরজ ইবাদতের সমান। এই মাহে রমযানের কারণেই ঈদুল ফিতর এর ব্যবস্থা করছেন মহান আল্লাহতায়ালা। এই দিনটিতে আল্লাহ তায়ালা বিশেষ দয়া ও অনুগ্রহ সহকারে বান্দাদের নিকট প্রত্যাবর্তন করেন বলে তাকে ঈদুল ফিতর বলা হয়। ঈদে মুসলমানদের হৃদয়ে এক পরম আনন্দাভূতি জাগে, তা তাদের পার্থিব ও পারলৌকিক উভয় জগতের চরম কল্যাণের সঙ্গেও সম্পর্কযুক্ত। ইসলাম ধর্মে এর মাহাত্ন কেবল ব্যক্তি ও গোষ্ঠির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বরং তা হলো বিশ্ব ব্যাপী একটি সার্বজনীন উৎসব। আধ্যাত্নিক মহিমা ছাড়াও এর রয়েছে আর্থসামাজিক, মানবিক, সাংস্কৃতিক ও বিশ্বজনীন তাৎপর্য।
শান্তির ধর্ম ইসলামে ঈদুল ফিতরের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। ঈদুল ফিতর মানে শুধু আনন্দ উৎসব নয়। ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায়ের পূর্বেই সমর্থবান প্রত্যেক মুসলমানকে অবশ্যই ফিতরা প্রদান করতে হয় যাতে ফিতরা গ্রহনকারী ঐ অর্থে কেনাকাটা করতে পারে। নিজেদের দরিদ্র আত্নীয় স্বজন ও প্রতিবেশী মুসলমানদের মধ্যে ফিতরা আদায় করতে হয়। এতে যেমন দরিদ্রের হক পূর্ণ করা হয় তেমনি নিজেদের সম্পদের পবিত্রতাও রক্ষিত হয়। ঈদুল ফিতর ধনী গরীব নির্বিশেষে সাম্য, ভ্রাতৃত্ব ও বন্ধুত্বের শিক্ষা দেয়।
জামাতে নামাজ আদায়ের পর পারস্পারিক আলিঙ্গনের মাধ্যমে সবাই ভুলে যায় বিভেদ, ঈর্ষা-বিদ্বেষ ও পরশ্রীকাতরতা। পরিবারের বাবা-মা ও সন্তান, আত্নীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের সাথে সৌজন্য এবং কুশলাদি বিনিময়ের মধ্য দিয়ে হৃদ্যতা ও সম্প্রীতির বাঁধন হয় মজবুত। করোনায় আক্রান্ত হয়ে আমরা অনেকে আমাদের প্রিয়জনকে হারিয়েছি, অনেকে সুস্থ হয়েছেন। সকলের মন ব্যথা-বেদনায় ভারাক্রান্ত। ঈদুল ফিতরকে ঘিরে উৎসবের যে আমেজ বিরাজ করার কথা বাস্তবে তা নেই। তা সত্বেও বালা-মুসিবতকে আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের কৃত অন্যায়ের সাজা হিসেবে মেনে তাঁরই সকল গুনাহ মার্জনা করা ও আমাদের বিপদ মুক্তির কামনার মধ্য দিয়ে উদযাপিত হোক ঈদুল ফিতর। পবিত্র ঈদে সবার প্রতি রইল আমাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ঈদ মোবারক!
Posted ৯:৫৪ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh