| বৃহস্পতিবার, ১৭ আগস্ট ২০২৩
খ্যাতিসম্পন্ন আলেম, জনপ্রিয় ওয়ায়েজ ও সাবেক এমপি মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী গত ১৪ আগস্ট সোমবার রাতে ঢাকার বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। ধর্মীয় আলোচনায় সমসাময়িক ব্যক্তিত্বদের মধ্যে তিনি সবচেয়ে অগ্রসর এবং সর্বাধিক জনপ্রিয় ছিলেন। তার ওয়াজের ক্যাসেট ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বিশ্বাসভেদে সকলের কাছে প্রিয় ছিল। তার ওয়াজ মাহফিলে লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম ঘটতো, যার মধ্য দিয়ে ধর্ম-বর্ণ-রাজনীতি নির্বিশেষে সারা দেশে তিনি ছিলেন বিপুল জনপ্রিয়তা ছিল প্রশ্নাতীত। তার মৃত্যুতে সাধারণ মানুষের মধ্যে গভীর শোকের ছায়া নেমে আসে।
ওয়াজ মাহফিলের মাধ্যমে নৈতিক দায়িত্ব পালনের তাগিদকে তিনি অসাধারণ জনপ্রিয় করেছিলেন। তার মৃত্যুতে এর অভাব দীর্ঘদিন পর্যন্ত তার স্থান পূর্ণ হবে না এবং তার অভাব অনুভূত হবে। মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত হয়ে তিনি গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে ছিলেন। হার্ট, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসসহ বার্ধক্যজনিত জটিলতায় ভুগছিলেন। তার হার্টে ৫টি রিং পরানো ছিল। গত রোববার বিকেলে তিনি হার্টে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করেন। তাকে গাজীপুরের স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসাপাতালে আনা হলে রাত ৮টা ৪০ মিনিটে ইন্তেকাল করেন। দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী পিরোজপুর জেলার ইন্দুরকানি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে গ্রামে তার পিতার প্রতিষ্ঠিত মাদরাসায় ধর্মীয় শিক্ষা অর্জন করেন। তিনি ছারছীনা আলিয়া মাদরাসায়, পরে খুলনা আলিয়া মাদরাসায় শিক্ষা গ্রহণ করেন।
মানুষকে নৈতিক শিক্ষায় সচেতন করতে তিনি ধর্মকে সামনে আনেন। সেগুলোকে মানুষের সামনে অত্যন্ত আকর্ষণীয় কায়দায় উপস্থাপন করতেন। এ জন্য তাকে ব্যাপক সাধনা করতে হয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় পুস্তক অধ্যয়ন করেন। তিনি বাংলা, উর্দু, আরবি, ইংরেজি ও ফারসি ভাষায় দক্ষ ছিলেন। ওয়াজে তার এই দক্ষতার প্রকাশ বিপুল মানুষকে মুগ্ধ করেছে। ১৯৮০-র দশকে ওয়াজ করে সারা দেশে তুমুল জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। তিনি জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সাথে জড়িত হলেও অন্যান্য দলের লোকেরা তার ওয়াজ পছন্দ করতেন। ধর্মীয় ওয়াজে লোকসমাগমের বিপুল উপস্থিতি; সেটা বাংলাদেশে প্রথম সাঈদীর মাহফিলে দেখা যায়।
মাওলানা সাঈদীর ব্যক্তিত্বের মধ্যে উল্লেখযোগ্য দিক ছিল ধর্ম নির্বিশেষে মানুষের প্রতি উদারতা। এ কারণে তিনি রাজনীতিতে প্রবেশ করে ব্যাপক সাফল্য দেখান। তার জন্মস্থান পিরোজপুর হিন্দু অধ্যুষিত হওয়ার পরেও পরপর দুইবার তিনি সেখান থেকে বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে পেরেছিলেন। পরে তার সন্তানরাও তার জনপ্রিয়তার ওপর ভর করে সেখানে স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন। সংসদীয় রাজনীতিতেও তিনি প্রভাব রেখেছিলেন। স্পষ্টভাষায় জনগণের পক্ষে কথা বলে সংসদেও জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগের মামলায় সাঈদীকে ঢাকায় তার শহীদবাগের বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয় ২০১০ সালের ২৯ জুন। এরপর তাকে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের মুখোমুখি করা হয়। ২০১৩ সালে ২৮ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তার বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, নির্যাতন ও ধর্মান্তরে বাধ্য করার দায় এনে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়। পরে আপিলের রায়ে সাজা কমিয়ে উচ্চ আদালত তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মাওলানা সাঈদীর কী ভূমিকা ছিল, এ নিয়ে বিভক্ত মত রয়েছে। এ ধরনের ভিন্নমত আরো অনেকের ব্যাপারে রয়েছে। একটি মানুষের জীবন শুধু একটি ঘটনার প্রেক্ষিতে বিবেচ্য নয়। তার জীবন একটি আলোচনার বিষয় হিসেবে থাকবে, ইসলাম ধর্মের প্রচারক হয়েও সবশ্রেণীর মানুষের কাছে তার জনপ্রিয় হওয়া। এমন বিরল ঘটনা খুব কম মানুষের ক্ষেত্রে ঘটে।
Posted ৫:২৬ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৭ আগস্ট ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh