| বৃহস্পতিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১
করোনাভাইরাস মহামারী শুরু হওয়ার পর থেকে দেড় বছর কেটে গেছে। এই সময়ে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ২২ কোটির বেশি মানুষ এবং মারা গেছে ৫০ লাখ। আক্রান্তের তালিকায় শীর্ষে আছে যুক্তরাষ্ট্র। মৃত্যুতেও দেশটি এক নম্বরে। যুক্তরাষ্ট্রে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ৪ কোটি ৬৪ লাখ ৯ হাজার ৯৬৫ জন। মারা গেছে ৬ লাখ ৭৪ হাজার ৮১০ জন। সংক্রমণের চলমান হার অব্যাহত থাকলে ডিসেম্বরের মধ্যে আরও এক লাখ মানুষের মৃত্যু হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন চিকিৎসা বিজ্ঞানিরা এমন বৈশ্বিক মহামারীর প্রতিষেধক জানা ছিল না বিশ্বের এবং নতুন করে ভ্যাকসিন আবিস্কার করতে হয়েছে বিজ্ঞানিদের এবং যুক্তরাষ্ট্রের মত চিকিৎসাবিজ্ঞানে উন্নত দেশে প্রথম ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়েছে ভাইরাস সংক্রমণের নয় মাস পর। সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশনের হিসাব অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত ৬৫ শতাংশ মানুষ অন্তত এক ডোজ ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছে এবং সংক্রমণের আশ্কং উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে।
এটি স্বস্থির খবর ছিল, কিন্তু গত জুন মাস থেকে ভাইরাসের ডেল্টা ভেরিয়ে›ন্টের বিস্তার স্বাস্থ্য সুরক্ষাকে আবারও ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। নতুন করে বাড়তে শুরু করেছে রোগী ও মৃতের সংখ্যা। গত ১২ সেপ্টেম্বর সোমবার সমাপ্ত এক সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী সংখ্যার দৈনিক গড় ছিল ১৪৪,৩০০ এবং একই সপ্তাহে দৈনিক গড়ে ১,৬০০ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী মারা গেছে। হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ১০২,০০০ জনের বেশি ভর্তি হচ্ছে সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রে। নিউইয়র্ক টাইসসের ডাটাবেজ অনুযায়ী, করোনা ভাইরাসের প্রকোপ শুরু হওয়ার পর থেকে এ যাবত যুক্তরাষ্ট্রে চার কোটির অধিক লোক ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ স্টেট ক্যালিফোর্নিয়ার জনসংখ্যার চেয়ে অধিক। সংক্রমণের ক্ষেত্রে বিশ্বে আমেরিকার অবস্থান পঞ্চম। জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত সপ্তাহ পর্যন্ত সমাপ্ত ১৮ মাসে সমগ্র বিশ্বে করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা হিসাব করা হয়েছে ২২ কোটি ১০ লাখ। এমন পরিস্থিতিতে চলতি বছর তথা আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে আরও এক লাখ মানুষের মৃত্যু হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে কয়েকটি পরিসংখ্যান। তবে টিকা প্রদানের মাধ্যমে সম্ভাব্য এ মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব বলে মত দিয়েছেন স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটন এক ধারণাপত্রে দেখিয়েছে, কভিড-১৯ সংক্রমণের চলমান হার অব্যাহত থাকলে ডিসেম্বরের মধ্যে আরও এক লাখ মানুষের মৃত্যু হবে।
এবারের ফোর্থ জুলাইয়ের আগে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছিলেন যে, তিনি আশা করেন যে “এবার সামার হবে স্বাধীনতার”। কিন্তু তা হয়নি, বরং এবারের সামারেও ভাইরাস প্রবল প্রতাপে বিস্তার লাভ করেছে। ভ্যাকসিন নেয়া লোকজনও আক্রান্ত হচ্ছে। অনেক স্টেটের হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ খালি পাওয়া যাচ্ছে না।
পরিস্থিতির লাগাম টেনে ধরতে হিসসিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে ভ্যাকসিন গ্রহণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যা রোগ গুরুতর পর্যায়ে চলে যাওয়া ও মৃত্যু রোধ করতে পারে। কিন্তু এখন পর্যৗল্প ৪৭ শতাংশ আমেরিকানের ভ্যাকসিন নেওয়া হয়নি, অথবা মাত্র এক ডোজ ভ্যাকসিন নিয়েছে। ফলে ভ্যাকসিন না নেওয়া লোকের মধ্যে ডেল্টা ভাইরাসের সংক্রম বেশি হচ্ছে। এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী যারা ডেল্টা ভেরিয়েন্টে আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের ৯৯ শতাংশই ভ্যাকসিন গ্রহণ করেননি। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন যে, যেসব করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন তাদের সিংহভাই ভ্যাকসিন নেননি এবং এর ফলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর বিপুল চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। সেন্টারস ফর ডিজিস কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশনস (সিডিসি) এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত আগষ্ট মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ৬৫ শতাংশ মানুষ কমপক্ষে এক ডোজ ভ্যাকসিন নিযেছে এবং দুই ডোজ ভ্যাকসিন নিয়েছে ৫৩ শতাংশ। সামারে ভ্যাকসিন নেয়ার মাত্রা বৃদ্ধি পাবে বলে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা ধারণা করলেও এখনো তা গত বসন্তে ভ্যাকসিন নেয়ার ক্ষেত্রে যে গতি সঞ্চারিত হয়েছে, তার চেয়ে ভ্যাকসিন নেয়ার হার অনেক কমে গেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত যাতে সাধারণ মানুষ অধিক হারে ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহী হয়ে সকলের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় তাদের ভ‚মিকা পালন করে।
Posted ৯:০২ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh