| বৃহস্পতিবার, ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
আমেরিকায় আগ্নেয়াস্ত্র সহিংসতা অবসানের কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। প্রতিটি ব্যাপক হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটার পর আমেরিকান প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে উচ্চ পর্যায়ের সকলেই আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন, কিন্তু প্রতিবারই তা আটকে যায় আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণের বিরোধিতাকারী শক্তিশালী সংগঠনগুলোর চাপে, যাদের অন্যতম শক্তিশালী সংগঠন হচ্ছে ন্যাশনাল রাইফেলস অ্যাসোসিয়েশন বা এনআরএ। রাষ্ট্রের ক্ষমতাধরদের একটি বড় অংশ এই সংগঠনের সদস্য ও কর্মকর্তা। অতএব যুক্তরাষ্ট্রে সহসা আগ্নেয়াস্ত্র সহিংসতা দূর হবে এমন সম্ভাবনা সুদূর পরাহত। আমেরিকান নন প্রফিট সংস্থা ‘গান ভায়োলেন্স আর্কাইভ’ যুক্তরাষ্ট্রে সংঘটিত আগ্নেয়াস্ত্র সহিংসতার আশংকাজনক বিস্তারকে ‘আমেরিকান ব্যাধি’ বলে বর্ণনা করেছে।
তাদের এ মূল্যায়ন যথার্থ হলেও এ ব্যাধি নিরাময়ের কোনো উপায় নেই এবং এ ধরনের ব্যাপক আকারের হত্যাকান্ড যে ঘটতেই থাকবে তা বলা বা ধারণা করা নি:সন্দেহে অতিশোয়াক্তি হবে না। নতুন বছরের জানুয়ারি মাসেই শুধুমাত্র ক্যালিফোর্নিয়ায় তিনটি পৃথক ব্যাপক গুলিবর্ষণের ঘটনায় ২২ ব্যক্তি নিহত হয়েছে। ঘটনাগুলো ঘটেছে দুই সপ্তাহের মধ্যে। লস অ্যাঞ্জেলেস এর ঘটনায় নিহত হয়েছে ১১ জন এবং স্যানফ্রান্সিসকো বে এরিয়ায় গুলিবর্ষণের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা আট। এক সপ্তাহ না কাটতেই লস অ্যাঞ্জেলেস এ আরেকটি গুলিবর্ষণের ঘটনায় আরও তিনজন নিহত হওয়ার ঘটনাসহ জানুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ৪২টি গুলিবর্ষণের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে এবং এসব ঘটনায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে কমপক্ষে ৭৩ এবং আহত হয়েছে আরো ১৬৭ জন। যুক্তরাষ্ট্রে কোনো গুলিবর্ষণের ঘটনায় চার জন নিহত হলে সেটি মাস শ্যুটিং বা ব্যাপক হত্যাকান্ডের মধ্যে বিবেচিত হয়।
অবশ্য ২০১২ সালের আইনে এফবিআই’র সংজ্ঞা অনুযায়ী, একটি ঘটনায় তিন বা ততোধিক ব্যক্তি নিহত হলে, সেটি ‘নির্বিচার গুলি’র পর্যায়ে পড়ে। গান ভায়োলেন্স আর্কাইভের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ক্যালিফোর্নিয়ার গুলিবর্ষণ ও হতাহতের ঘটনার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পুনরায় অ্যাসাল্ট রাইফেল নিষিদ্ধ আইন নবায়ন করার আহ্বান জানিয়েছেন কংগ্রেস সদস্যদের প্রতি। কিন্তু আগ্নেয়াস্ত্র আইন সংস্কার আনা প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র বিভক্ত। কংগ্রেসম্যানরা বিভক্ত।
দেখেশুনে মনে হয়, গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটুক, মানুষজন হতাহত হোক, কিন্তু আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ করার কোনো সিদ্ধান্ত মেনে নেয়া হবে না। মূলত এই একগুয়েমির কারণেই আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ, তথা ঘাতকের দ্বারা নিরীহ মানুষের অপমৃত্যু বন্ধ হওয়ার পথ রুদ্ধ। ডেমোক্র্যাটরা এ আইন সংস্কার করার পক্ষে, রিপাবলিকানরা বিপক্ষে। অ্যাসল্ট রাইফেল, যা সেমি অটোমেটিক রাইফেলের মধ্যে পড়ে সেটি ব্যবহার নিষিদ্ধ করার লক্ষ্যে ১৯৯৪ সালে কংগ্রেসে একটি বিল পাস হয়েছিল। কংগ্রেসের উভয় কক্ষে পাস হওয়া ওই বিলটির কারণে ১০ বছরের জন্য ‘অ্যাসল্ট রাইফেল’ ও উচ্চক্ষমতা-সম্পন্ন গুলি বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা ছিল। তবে ২০০৪ সালে আইনটির মেয়াদ শেষ হয়।
এর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অস্ত্র বিক্রি অনেক বেড়ে যায়। প্রেসিডেন্ট বাইডেন বারবার আইনটি নবায়নের আহ্বান জানাচ্ছেন এবং আগের মতোই হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টেটিভে রিপাবলিকান প্রতিনিধিরা এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করছেন। গত বছর জেএএমএ নেটওয়ার্ক ওপেনে প্রকাশিত একটি গবেষণায় গত তিন দশকে আগ্নেয়াস্ত্রে মৃত্যুর ঘটনাগুলো পর্যালোচনা করা হয়। এতে বলা হয়, ১৯৯০ সাল থেকে ১০ লাখের বেশি মানুষ আগ্নেয়াস্ত্রে প্রাণ হারিয়েছেন।
মার্কিনদের চেয়ে অন্যান্য দেশের খুব কম মানুষই এত বেশি আগ্নেয়াস্ত্র রাখেন। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক স্মল আর্মস সার্ভের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে ৩৯ কোটি ৩০ লাখ ব্যক্তিগত আগ্নেয়াস্ত্র আছে। সে হিসাবে প্রতি ১০০ জনের বিপরীতে ১২০টি আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। অবশ্য অনিবন্ধিত ও অবৈধ অস্ত্র কেনাবেচার কারণে ব্যক্তিগত আগ্নেয়াস্ত্রের প্রকৃত হিসাব পাওয়া কঠিন।
২০২২ সালের অক্টোবরে গ্যালাপের এক জরিপ অনুযায়ী, প্রায় ৪৫ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মার্কিন বাসায় আগ্নেয়াস্ত্র রাখার কথা জানিয়েছেন। ক্যালিফোর্নিয়া থেকে মেরিল্যান্ড পর্যন্ত বাসিন্দারা যখন নির্বিচার বন্দুক হামলার দুঃসহ স্মৃতি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ছটফট করছেন, তখন অন্যরা নিজেদের আঙিনায় একই ধরনের সহিংসতার শঙ্কা নিয়েই দিন যাপন করছেন।
Posted ১:১০ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh