সম্পাদকীয় | বৃহস্পতিবার, ০৪ মার্চ ২০২১
বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসে যুক্তরাষ্ট্রে মৃতের সংখ্যা ৫লাখ ৩০ হাজারে পৌছেছে। আর মোট আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৩ কোটি। অপরদিকে বিশ্বব্যাপী করোনায় প্রাণহানি ঘটেছে ২৫ লাখ ৬০ হাজার মানুষের। মহামারি শুরুর প্রায় বছরখানেক পর শুরু হয়েছে ভ্যাকসিনের ব্যবহার । ধনী দেশগুলোতে ভ্যাকসিন গ্রহণের সুযোগ নিচ্ছেন অনেকে। দরিদ্র দেশগুলোতে ভ্যাকসিন পৌছতে আরো সময় প্রয়োজন। তারপরও মানুষ আশাবাদী হয়ে উঠেছে ভ্যাকসিনের কারণে। এখনো যুক্তরাষ্ট্র সহ বিভিন্ন দেশে প্রতিদিন করোনাক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেন মানুষ। ভ্যাকসিন প্রয়োগের সাথে সাথেই নির্মূল হবে না করোনা। এজন্য কিছুটা সময় প্রয়োজন। আর এসময়টায় সবাইকে মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি। শুধু প্রাণহানিই নয় করোনার ভয়াবহ ছোবলে ভেঙ্গে পড়েছে বিশ্ব অর্থনীতি। বেকার হয়ে পড়েছে কোটি কোটি মানুষ।
করোনা আক্রান্ত রোগী ভর্তির সংখ্যা লক্ষ্যণীয়ভাবে কমেছে যুক্তরাষ্ট্রে হাসপাতালের। সারা দেশে করোনা সংক্রমণের প্রবণতায় দেখা যায় যায় যে একটি অঞ্চলে সংক্রমণ হ্রাস পেলেও অন্য অঞ্চলে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষজ্ঞরা এর কারণ আবহাওয়াজনিত ও বায়ু প্রবাহের সঙ্গে জড়িত বলে উল্লেখ করেছেন। বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে অধিক আক্রান্ত দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল ও ফ্রান্সে সংক্রমণ হার লক্ষ্যণীয়ভাবে হ্রাস পেয়েছে। ইতোমধ্যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও মাস্ক ব্যবহারের উপর জোর দেয়ায় এখন পরিস্থিতির উন্নতি ঘটছে। তাছাড়া তারা মনে করেন ভ্যাকসিন প্রয়োগের কারণেও রোগের বিস্তার হ্রাস পেয়েছে ।এখন আশাবাদ পোষণ করার সময়, তবে এখনো রয়ে গেছেপরিস্থিতির ভঙ্গুরতা । আমরা টানেলের শেষে আলো দেখতে পাচ্ছি, কিন্তু টানেলটি এখনো অনেক দীর্ঘ। সেজন্য যতো দ্রুত সম্ভব অধিক সংখ্যক মানুষকে ভ্যাকসিনেশনেরও আওতায় আনতে হবে।
পরিবর্তিত ধরনের করোনা ভাইরাস সর্বপ্রথম সনাক্ত হয়েছে ব্রিটেনে, এবং সেখান থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ছড়িয়েছে। আয়ারল্যান্ড, পর্তুগাল ও জর্দানেও নতুন ধরনের করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা গেছে। দক্ষিণ আফিকায় নতুন ধরনের যে ভাইরাস সনাক্ত করা হয়েছিল, যা ভ্যাকসিনের কার্যকারিতায় দুর্বল হয়ে পড়েছে, সেটিও যুক্তরাষ্ট্রে ছোবল দিয়েছিল। গত এপ্রিল মাসে ৫০টি স্টেটের গভর্নররা যখন দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মত একযোগে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করেন ।এ সিদ্ধান্ত ছিল মূলত বাইপার্টিজান । কিন্তু নির্বাচনী বছরের অর্থনীতি নিয়ে ট্রাম্প বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়ায় ভাইরাস ইস্যু অনেকটাই ধামাচাপা পড়ে যায়। মহামারী নিয়ন্ত্রণ করতে ফেডারেল নেতৃত্বের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করেন। যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যাকে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ‘হৃদয়বিদারক মাইলফলক’ বলে উল্লেখ করেছেন।
তিনি বলেন, ‘জাতি হিসেবে আমরা এত নির্মম ভাগ্যকে মেনে নিতে পারি না। দুঃখিত হওয়ার জন্য আমাদের অনুভূতিহীন হওয়া বন্ধ করতে হবে। করোনায় বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। আক্রান্তের সংখ্যাতেও বিশ্বে প্রথম যুক্তরাষ্ট্র। তিনি বলেন, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও ভিয়েতনাম যুদ্ধে সব মিলিয়ে যত আমেরিকান মারা গেছেন, তার চেয়ে বেশি আমেরিকান মারা গেছেন করোনাভাইরাসে। যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সংক্রামক-রোগ বিশেষজ্ঞ ড. অ্যান্থনি ফাউচি বলেন বিশ্বের অন্যতম ধনী ও পরিশীলিত দেশে অর্ধ মিলিয়ন মানুষ করোনাভাইরাসে মারা যাওয়ার কথা ছিল না।
দেশটির স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় গত ১০০ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে এটিই সবচেয়ে খারাপ নজির হয়ে থাকবে। করোনা ভাইরাস বিশ্বমানবতার জন্য এক অভিশাপ। চীনের উহান শহরে গত নভেম্বর মাসে উৎপত্তি কোভিড-১৯ এর। এক পর্যায়ে উৎপত্তিস্থল চীনে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব কমলেও বিশ্বের অন্যান্য দেশে এর প্রকোপ বাড়তে শুরু করে। চীনের বাইরে করোনাভাইরাসের প্রকোপ ১৩ গুণ বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষাপটে গত ১১ মার্চ দুনিয়াজুড়ে মহামারি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা চলতি বছরের জানুয়ারী থেকে বিশ্বব্যাপী বিরামহীন যুদ্ধ চলছে অশরীরি এই মরণব্যাধির বিরুদ্ধে। করোনা সংক্রমনে ভেঙ্গে গেছে গ্লোবাল ভিলেজ। শুরুতে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে জল-স্থল-অন্তরীক্ষের সকল যোগাযোগ ব্যবস্থা। ছোট বড় সকল রাষ্ট্র পরিণত হয় একেকটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপে। সীমিত হয়ে পড়ে মানুষের চলাচল। একদেশ থেকে আরেক দেশ। এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়ি। এমন কি বাড়ীর এক ঘর থেকে অন্য ঘরে নিষিদ্ধ হয়ে যায় স্বজনের প্রবেশাধিকার। ব্যবসায় বাণিজ্য, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ে বন্ধ হয় যায় সকল উদ্যোগ আয়োজন । মহামারী কেটে গেলে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবো আমরা। উপভোগ করার সুযোগ পাবো সবধরণের অনুষ্ঠানাদি। সেজন্য করতে হবে আরো কিছুটা সময় অপেক্ষা। কোন সংক্রমন ব্যাধিই দীর্ঘস্থায়ী হয় না। মহান সৃষ্টিকর্তা এর হাত থেকে এবারো মানবজাতিকে নিশ্চয়ই রক্ষা করবেন। তবে এজন্য আমাদেরকে ধৈর্য্য ধরতে হবে।
Posted ১১:১১ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৪ মার্চ ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh