বাংলাদেশ অনলাইন : | বৃহস্পতিবার, ২৭ মে ২০২১
করোনা ভাইরাস মহামারির ভয়াবহতা কমে আসছে যুক্তরাষ্ট্রে। টানা বছরাধিককাল দাপিয়ে বেড়ানো বৈশ্বিক এ মহামারি প্রাণ কেড়ে নিয়েছে ৬ লক্ষাধিক মানুষের। আক্রান্ত হয়েছে প্রায় সাড়ে তিনকোটি। ২০২০ সালের মার্চ মাসে যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করে করোনা মহামারি। বন্ধ হয়ে যায় ছোট বড় সব ব্যবসায় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অচল হয়ে পড়ে পরিবহণ সহ সিংহভাগ যোগাযোগ। বেকারত্ব বরণ করে প্রায় চারকোটি মানুষ। আকস্মিক এ দুর্যোগে সবচেয়ে বড় হয়ে দেখা দেয় অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও জীবনের নিরাপত্তা। লকডাউনের পাশাপাশি স্থবির হয়ে পড়ে জনজীবন। বিশেষ করে মধ্য ও নিন্ম মধ্যবিত্ত শ্রেনীর মানুষ সম্মুখীন হন নানাবিধ সংকটের। মানুষের এ দুর্দশা লাঘবে তাৎক্ষণিক সহযোগিতার হাত প্রসারিত করে ফেডারেল ও স্টেট সরকার। দ্রুত চালু করে বেকার ভাতা ও মহামারিকালীন অতিরিক্ত আর্থিক সহায়তা।
বেকার ভাতার পাশাপাশি ফেডারেল সরকার প্রদত্ত অতিরিক্ত মহামারি ভাতা দেশের অর্থনীতি সচল রাখতে পালন করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। সরকারী এসব ভাতার কারণে সাধারণ মানুষ ফিরে পায় আর্থিক নিরাপত্তা ও আস্থা। এসব বেকার ভাতার সুযোগ লাভ করে পরিবারের প্রতিটি কর্মক্ষম সদস্য। এছাড়া ফেডারেল সরকারের তিনদফা স্টিমুলাস চেকও পেয়েছে স্বল্প আয়ের প্রতিটি মানুষ। ফলে সাময়িকভাবে পরিবারগুলো স্বচ্ছলতার মুখ দেখে। বেকার ভাতার মেয়াদকালও বাড়ানো হয় কয়েক ধাপে। দেশজুড়ে করোনা মহামারির প্রকোপ কমে এসেছে। ভ্যাকসিন গ্রহণের কারণে এর দ্রুততা আরো বাড়ছে। নূতন স্বাভাবিকতা ফিরে আসছে জনজীবনে। ব্যবসায় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ সবকিছু খুলে দেয়া হচ্ছে। প্রাণ চাঞ্চল্যতা ফিরে আসছে সর্বত্র। এ সময়ে বেকার ভাতা সুবিধাভোগীদেরকে কাজে ফিরে যেতে উৎসাহিত করে সরকার। কিন্তু অনেকেই কাজে না ফিরে বেকার ভাতার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েছে। ফিরছে না আশানুরূপ কর্মচাঞ্চল্য। অনেকের মাঝেই কাজে ফিরতে কাজ করছে অনীহা।
করোনাকালে অনেকের মৃত্যু হয়েছে আক্রান্তদের। অনেকে সুস্থ্য হয়ে উঠেনি এখনো। এ সময়ে অবসরে গিয়েছেন কেউ কেউ। তারপরও নূতন স্বাভাবিকতায় কাজে ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে শৈথিল্য বা অনীহা শিল্প কারখানা ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের মালিকদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। ভাবিয়ে তুলেছে সরকারকে। বেকার ভাতার পাশাপাশি মহামারির জন্য অতিরিক্ত ভাতা অব্যাহত থাকার কারণেই কর্মক্ষম অনেকে কাজে ফিরতে নারাজ। আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এসব ভাতা অব্যাহত থাকবে। বেকার ভাতা গ্রহণকালীন অনেকে নগদ বেতনে কাজ করছেন এমন অভিযোগও রয়েছে। ফলে কাজে ফিরে যেতে অনাগ্রহী তারা।
এমতাবস্থায় কর্মী সংকট দেখা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে। বার বার তাগিদ দেয়ার পরও কাজে ফিরছে না পুরনো কর্মীরা। সৃষ্ট এ কর্মী সংকট নিরসনে বিভিন্ন রাজ্য সরকার জুন মাস থেকেই বন্ধ করে দিচ্ছে বেকার ভাতা।
রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত ২২টি স্টেটের গভর্নররা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে তারা তাদের স্টেট থেকে ঢালাওভাবে ফেডারেল আনএমপ্লয়মেন্ট বেনিফিট প্রদান বন্ধ করবেন। এর ফলে স্টেটগুলোর ২০ লাখের অধিক আমেরিকান আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত ফেডারেল আর্থিক সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে যাচ্ছে। যদিও আশংকা করা হচ্ছে যে, বেনিফিট বন্ধ হয়ে গেলে অনেক মানুষ দারিদ্রের মধ্যে পড়বে। কিন্তু স্টেটগুলোর গভর্নররা বলছেন, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ফেডারেল আনএমপ্লয়মেন্ট বেনিফিট অব্যাহত রাখা হলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিয়োগকারীরা অভিযোগ করবেন যে কর্মীর অভাবে তারা তাদের শূন্য পদগুলো পূরণ করতে সক্ষম হচ্ছেন না এবং ইতোমধ্যে যেসব প্রতিষ্ঠান চালু হয়েছে সেখানে কর্মী সংকট রয়েছে। বেনিফিট অব্যাহত রাখার কারণেই এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। রীভস এবং অন্য গভর্নররা ইঙ্গিত দিয়েছেন যে যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে কর্মখালি রয়েছে ৮০ লাখের অধিক, ফেডারেল বেনিফিট চালু থাকলে সক্ষমদেহীরাও কাজে ফিরে আসতে চাইবে না। গত এপ্রিল মাসে ফেডারেল সরকার আশা করেছিল যে অন্তত ১০ লাখ কর্মী কাজে ফিরে আসবে, কিন্তু বাস্তবে ২ লাখ ৬৬ হাজার লোক কাজে ফিরেছে। ১৮ স্টেটের গভর্নররা দৃঢ় অবস্থান নিয়েছেন যে তারা সকল কর্মহীন মানুষের জন্য ৩০০ ডলারের সাপ্তাহিক ফেডারেল ভাতাসহ আনএমপ্লয়মেন্ট বেনিফিটের অবসান ঘটাবেন, এবং লোকজন কাজ খুঁজে পেতে আগ্রহী হয়ে উঠবে। কাজে ফিরে আসতে উৎসাহী করার জন্য অ্যারিজোনা, মন্টানা ও ওহাইয়ো মাথাপিছু ২,০০০ ডলারের বোনাস ঘোষণা করেছে। এছাড়া চাইল্ড কেয়ারের জন্য পৃথক ভাতার ব্যবস্থাও থাকবে বলে জানান হয়েছে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও উচ্চারণ করেছেন সতর্ক বাণী।
Posted ১২:১৩ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৭ মে ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh