| বৃহস্পতিবার, ১৩ মে ২০২১
বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাস তছনছ করে দিয়েছে সবকিছু। পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত। ছোটবড় প্রতিটি দেশ আক্রান্ত এই ভাইরাসে। টানা সোয়া বছর ধরে এই ভয়াবহ মহামারির কবলে মানব জাতি অনেকটাই ক্লান্ত। ধনী দরিদ্র কেউই রেহাই পায়নি করোনার ছোবল থেকে। বিশ্বব্যাপী করোনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৪ লাখে। আক্রান্ত হয়েছে ১৬ কোটি মানুষ। এখনো বিভিন্ন দেশে নিত্যদিন দীর্ঘায়িত হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। বিশেষ করে ভারত ও ব্রাজিলের পরিস্থিতি ধারণ করেছে মারাত্মক আকার। এসব দেশের সরকার ও সাধারণ মানুষ দিশেহারা। বাংলাদেশেও করোনা মহামারির ব্যাপকতা উদ্বেগজনক। করোনাক্রান্ত দেশগুলোতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সুবিধা না থাকায় বাড়ছে মৃত্যু ঝুঁকি। বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করছে অসহায় মানুষ। ধনী দেশগুলোতে ভ্যাকসিন গণহারে দেয়া শুরু হলেও দরিদ্র দেশগুলো এর সুবিধা থেকে বঞ্চিত। ফলে এসব দেশের মানুষের জীবন ক্রমশ: হয়ে উঠছে দুর্বিসহ। করোনাক্রান্ত হয়ে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রে। প্রায় ৬ লাখ মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছে এই ঘাতক ব্যাধি। আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে তিন কোটি। সাম্প্রতিককালে ভ্যাকসিন প্রয়োগের ফলে সংক্রমন হার ও মৃতের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। তবে এখনো প্রতিদিন মরছে মানুষ । ২০২০ সালের মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে দেশটিতে। অচল হয়ে পড়ে জনজীবন। অজানা আতঙ্কে কাল কাটে মানুষের। দীর্ঘদিন পর নতুন স্বাভাবিকতায় ফিরছে নিউইয়র্কসহ গোটা যুক্তরাষ্ট্র। ভয়াল সে সময়টায় বাংলাদেশী আমেরিকান কমিউনিটিরও প্রায় তিন শতাধিক মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। শোকের ছায়া এখনো আবৃত করে রেখেছে তাদের পরিবার ও স্বজনদের ।
গত বছর ঈদুল ফিতরের কোন জামাত অনুষ্ঠানের সুযোগ ছিল না। বছর ঘুরে আবার এসেছে ঈদুল ফিতর। এখনো পূর্ণ স্বাভাবিকতা ফিরে আসেনি। মাস্কের ব্যবহার এবং সামাজিক দূূরত্ব বজায় রেখেই এবার অনুষ্ঠিত হবে ঈদের নামাজ ও অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা। বিরত থাকতে হবে কোলাকুলি করা থেকে। আত্মীয় স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের বাড়িতে বেড়ানোর ব্যাপারেও অবলম্বন করতে হবে সাবধানতা। যুক্তরাষ্ট্র সরকার করোনা কালে এগিয়ে এসেছে মধ্য ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের সাহায্যে । বেকার ভাতার পাশাপাশি বার কয়েক প্রনোদনার অর্থ পৌছে দিয়েছে মানুষের হাতে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদেরকে দিয়েছে আর্থিক সহায়তা। ফলে মহামারিতে সৃষ্ট আর্থিক ধকল অনেকটাই কাটিয়ে উঠতে পেরেছে মানুষ। কিন্তু স্বজন হারানোর বেদনা বার বার মানসিকভাবে আহত করেছে তাদেরকে। তারপরও একমাস সিয়াম সাধনার পর পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপনের প্রস্তুতি চলছে তাদের মাঝে। অপরদিকে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে অনেক মানুষ করোনা মহামারির সাথে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করছে। এসব দেশের মুসলমানরা বঞ্চিত হচ্ছে ঈদের আনন্দ থেকে। নিদারুণ হাহাকার বিরাজ করছে তাদের মাঝে। শুধুমাত্র অক্সিজেনের অভাবে মারা যাচ্ছেন অনেকে। বাংলাদেশে চলছে লকডাউন। দরিদ্র মানুষ হিমশিম খাচ্ছে জীবিকা নির্বাহে । শহর ছেড়ে ছুটছে গ্রামে একটু আনন্দ উপভোগের আশায়। তাদের কথাও ভাবতে হবে আমাদেরকে। আমরা যারা ভালো আছি তাদের উচিত হবে স্বদেশে স্বজনদের প্রতি সহযোগিতার হাত সম্প্রসারিত করা। যাকাত-ফিতরার অর্থের পাশাপাশি অন্য যে কোন প্রক্রিয়ায় দরিদ্র অভাবী মানুষের পাশে দাঁড়ানো। শান্তির ধর্ম ইসলাম আমাদেরকে এ শিক্ষাই দিয়েছে। আমরা যদি ঈদের আনন্দ একাকী উপভোগ না করে সকলের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে উদ্যোগী হই তাহলেই সিয়াম সাধনায় মিলবে সার্থকতা। ১৩ মে বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রে উদযাপিত হবে পবিত্র ঈদুল ফিতর। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দিবসটি উদযাপিত হবে ১৪ মে শুক্রবার। পবিত্র ঈদের প্রাক্কালে আল আকসা মসজিদে ও ফিলিস্তিনের গাজায় ইহুদিদের হামলার নিন্দা জানাই। করোনা মহামারি নির্মূলে ধনী দরিদ্র নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষের জন্য নিশ্চিত করা হোক ভ্যাকসিন। মানুষ দাঁড়াক মানুষের পাশে। ঈদের আনন্দ পৌছে যাক সবার ঘরে ঘরে।
Posted ৩:২০ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৩ মে ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh