আগামী ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ঢাকায় মহাসমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে এবং বিএনপি নেতৃত্ব আশা করছে যে সমাবেশে ৫০ থেকে ৬০ লাখ লোকের সমাবেশ ঘটবে। ইতোমধ্যে বিএনপি বিভাগীয় পর্যায়ে যে সমাবেশগুলো করেছে, আওয়ামী লীগ ও সরকারের বিভিন্ন বাহিনীর নানা অপতৎপরতা সত্বেও সেসব সমাবেশে জনজোয়ার দেখে বিএনপি নেতারা আশা করতেই পারেন যে ঢাকায় তাদের কাক্সিক্ষত সংখ্যক জনতার উপস্থিতি ঘটবে। আওয়ামী একনায়কতন্ত্রে দেশের মানুষ যে নিপীড়িত, ঢালাও দুর্নীতির কারণে দেশের অর্থনীতি বিপর্যস্ত, এবং আইনশৃংখলার অবনতিতে দেশবাসী যে নারকীয় পরিস্থিতির মধ্যে কাটাচ্ছে তাতে কারো মনে সন্দেহ থাকার কথা নয়। এই সামগ্রিক অরাজক পরিস্থিতি থেকে দেশবাসী যে মুক্তি চায় বিএনপির আহবানে জনগণের সাড়া থেকে তা স্পষ্ট বোঝা যায। জনগণ অপেক্ষা করছিল তাদের হয়ে মাঠে কারো অবতীর্ণ হবার। বিএনপি নেতৃত্ব এতদিন এগিয়ে আসতে পারেনি সরকার তাদের ওপর বহু সংখ্যক মামলা দিয়ে রাখায়, রাস্তায় বের হলেই আওয়ামী মাস্তানদের অথবা দলীয়করণকৃত আইনশৃংখলা প্রয়োগকারী বাহিনীর দ্বারা হত্যা, গুম হওয়ার আশঙ্কায়।

বিশ্বজুড়ে ২০১৮ সালের ভোটারবিহীন ও রাতের ভোটের নির্বাচন নিয়ে কটু সমালোচনা এবং নিষ্ঠুর দমন পীড়নের কারণে আইনশৃংখলা বাহিনীগুলোর উপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে তাদের নিষ্ঠুর কর্মকান্ড কিছুটা হ্রাস পাওয়ায় বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকরা রাস্তায় বের হয়েছে। ইতোমধ্যে অনুষ্ঠিত সমাবেশগুলোই প্রমাণ যে দেশবাসী আওয়ামী সরকারের বিরুদ্ধে কতটা ক্ষুব্ধ। আওয়ামী লীগ এবং তাদের সরকারও হতবাক যে তারা এত উন্নয়ন ঘটানোর পর জনগণ এতটা ক্ষুব্ধ কেন। তাই দীর্ঘদিন যাবত ক্ষমতার বাইরে থাকা এবং হামলা-মামলায় বিপর্যস্ত বিএনপি এখনো জনগণের কাছে এত প্রিয় কেন, তা আওয়ামী লীগ হজম করতে পারছে না। ১০ ডিসেম্বর বিএনপির কর্মসূচিকে বাধাগ্রস্থ করতে আওয়ামী তাদের সাধ্যে থাকা সবকিছু করবে। ইতোমধ্যে বিএনপির মহাসমাবেশের ঠিক আগের দিন ৯ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ ঢাকায় কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এটা যে সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যমূলকভাবে ঘোষণা করা হয়েছে তা বোঝার জন্য রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। সেদিন যদি আওয়ামী লীগ নিজেরাই আইনশৃংখলা পরিস্থিতি সৃষ্টি করে বিএনপির মহাসমাবেশের উপর নিষেধাজ্ঞাও জারি করে তাতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। কারণ আওয়ামী লীগ তাদের জন্ম থেকে এ ধরনের হঠাকারী কাজ করতে সিদ্ধহস্ত।

এবং সে কারণে ১০ ডিসেম্বর ঘিরে দেশের রাজনীতিতে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। বলা যায়, ১০ ডিসেম্বর থেকে ঘিরে বিএনপি-আওয়ামী লীগ এখন মুখোমুখি অবস্থানে। বিএনপি সেদিন ঢাকার মহাসমাবেশ থেকে তাদের পরবর্তী লক্ষ্য সম্পর্কে কি ঘোষণা দেয় তা দেখার বিষয়। অবশ্য এ নিয়ে বিএনপির মধ্যে বিভক্তি দেখা দিয়েছে বলে বিভিন্ন সংবাদপত্রের খবরে প্রকাশিত হয়েছে। একটি অংশ বলছে, ওখান থেকেই সরকারের পতনের লক্ষ্যে চূড়ান্ত কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। কিন্তু বেশির ভাগ নেতা মনে করেন, যা করা হবে সবই নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে। বিএনপি নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনে বিশ্বাসী এবং সে নির্বাচন অন্তবর্তীকালীন সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হওয়ার পক্ষে কথা বলবে। অন্যদিকে সরকারি দল ও সরকার যন্ত্রের দায়িত্ব হবে বিএনপি যাতে শান্তিপূর্ণভাবে তাদের মহাসমাবেশ করতে পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। সরকার যেহেতু নিজেদের গণতান্ত্রিক সরকার হিসেবে দাবী করে, অতএব দেশ পরিচালনায় বিরোধী দলের অনিবার্যতা বিবেচনা করে বিরোধী দলকে সাথে রেখেই দেশ পরিচালনা করতে হবে। তা না করে ক্ষমতাসীন দল প্রধান বিরোধী দল বিএনপির মহাসমাবেশকে যদি বাধা দিতে চায়, তাহলে পরে দেশে একটি অরাজক পরিস্থিতি তৈরি হবে এবং সেখানে সরকারের জন্য পরিস্থিতির মোকাবেলা করা কঠিন হয়ে পড়বে। সকলে আশা করে যে সরকার সে পথে যাবে না।