| বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ ২০২৩
রহমত-বরকত, মাগফেরাত ও নাজাতের মাস পবিত্র রমজান শুরু হয়েছে আজ ২৩ মার্চ। নিউইয়র্ক সহ গোটা উত্তর আমেরিকার মুসলিম সম্প্রদায় ধর্মীয় ভাব-গাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পালন করছে রমজানের প্রথম দিনটি। মহান আল্লাহ এ মাসের রোজাকে ফরজ করেছেন। সুবেহ সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার এবং ইন্দ্রীয় সুখ ভোগ থেকে বিরত থাকার নামই রোজা। নামাজের পরই রোজার স্থান। মানুষের দৈহিক, মানসিক, আত্মিক, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক উন্নয়নে এ মাসের রোজা অত্যন্ত ফলপ্রসূ। সংযম, সহিষ্ণুতা ও আত্মশুদ্ধির অনন্য চেতনায় ভাস্বর মাহে রমজান। মহানবী সা. এ মাসকে এক সুমহান মাস হিসেবে অভিহিত করেছেন। এ মাসের প্রথম ১০ দিন রহমত, মধ্য ১০ দিন মাগফিরাত এবং শেষ দিনগুলো জাহান্নাম থেকে মুক্তির। অন্যান্য মাস অপেক্ষা রমজান মাসের শ্রেষ্ঠত্বের বড় কারণ এই যে, এ মাসেই পবিত্র আল কোরআন নাজিল হয়। এ মাসেই রয়েছে যাকে বলা হয় লাইলাতুল কদর বা সৌভাগ্য রজনী।
আল্লাহপাক এ সম্পর্কে বলেছেন, ‘আমরা এটি (আল কোরআন) কদরের রাতে নাজিল করেছি। তুমি কি জান, কদরের রাত কি? কদরের রাত হাজার মাস অপেক্ষাও অধিক উত্তম।’ রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘যখন রমজান শুরু হয়, দোজখের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয় এবং জান্নাতের দরজা খুলে দেয়া হয়।’ রোজা মানুষকে প্রকৃত আধ্যাত্মিক ও জাগতিক মানুষ হতে অনুপ্রাণিত করে, কার্যকরভাবে সহায়তা করে। রোজা রাখা ব্যক্তিগত ইবাদত হলেও এর মর্ম অনেক গভীর ও ব্যাপক। গতবছর আমরা করোনা মহামারীর মধ্যে একটি রামজান মাস অতিবাহিত করেছি। এখনো করোনার বিপদ থেকে আমরা মুক্ত হতে পারিনি। এবারও এমন এক সময় মাহে রমজান এসেছে, যখন বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্ব ভয়াবহ বিপদ ও বিপর্যয় মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এখনো প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ আক্রান্ত ও মৃত্যুবরণ করছে।
মানুষ উদ্বিগ্ন, বিচলিত ও আতঙ্কিত। গতবারের মতো এবারও মাহে রমজানে সঙ্গতকারণেই মসজিদে ইফতার, তারাবিহ ও তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া সীমিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। একটি হাদিসে আছে, যারা নিজেদের সুরক্ষার জন্য ও অন্যদের রক্ষা করার জন্য ঘরে থাকে, তারা আল্লাহর সুরক্ষার অধীনে থাকে। করোনাকারণে বিপুল সংখ্যক মানুষ কর্মহীন ও আর্থিকভাবে বিপন্ন হয়ে পড়েছে। তাদের পাশে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়া প্রত্যেক মুমিন-মুসলমানের একান্ত কর্তব্য। রমজানের শিক্ষা ধৈর্য ও সংযম। রমজানের একটি নাম হচ্ছে শাহরুল মুওয়াসাত। এর অর্থ সহমর্মিতার মাস। একে অপরের প্রতি সম্প্রীতি, সমবেদনা ও সহমর্মিতা রমজানের মহান শিক্ষা। বিশ্বব্যাপী বর্তমানে মুসলমানদের ওপর নানা দিক থেকে আক্রমণ আসছে। অসহিষ্ণুতা, সাম্প্রদায়িক হামলা, অপপ্রচার সব মিলিয়ে বিশ্ব মুসলিমকে এক কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে। অথচ শান্তির দূত মুসলমানগণ মহান ইসলামের উদার ও মানবিক বার্তা নিয়ে বিশ্বময় এক ইতিবাচক সম্প্রদায় হিসেবে সুপ্রমাণিত ও প্রতিষ্ঠিত। শিক্ষা নিতে হবে সংযমের উৎকর্ষ থেকে। যেমন হাদিস শরীফে এসেছে, রোজাদারের সাথে কেউ গায়ে পড়ে ঝগড়া করতে এলে সে যেন বলে দেয়, আমি রোজা রেখেছি।
অর্থাৎ, আমি তোমার কথার প্রতিউত্তর দেবো না। যেকোনো পরিস্থিতিতে উসকানিতে সাড়া না দিয়ে সংযম ও তাকওয়া রক্ষা করে চলাই রমজানের শিক্ষা। ইসলাম শুধু অনুষ্ঠানসর্বস্ব ধর্ম নয়, এর মূল বাণীই হচ্ছে মানবতার উৎকর্ষ। আল্লাহ ও রাসুলের আনুগত্য আর মানুষসহ সকল সৃষ্টির প্রতি সহানুভূতি ও ভালোবাসা। পবিত্র রমজানে মুসলমানের জীবন-জীবিকার সর্বত্র সততা, সংযম ও পবিত্রতার ছোঁয়া লাগবে, এটাই কাম্য। রমজানুল মুবারকের সিয়াম সাধনার এখানেই সার্থকতা। মোবারক মাহে রমজান।
Posted ১:৩৮ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh