| বৃহস্পতিবার, ২০ অক্টোবর ২০২২
নিউইয়র্ক সিটির সাবওয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। নজিরবিহিন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন নিউইয়র্ক সিটির সাবওয়ে যাত্রীরা। সম্প্রতি অপরাধ প্রবণতা এতোটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে স্টেশনে অপেক্ষমান যাত্রীদের ধাক্কা দিয়ে চলন্ত ট্রেনের নিচে ফেলে দেয়ার ঘটনা ঘটছে অহরহ। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় এবং বিশ্বের প্রাচীনতম এই সাবওয়ে পরিণত হয়েছে মৃত্যুফাঁদে। নিউইয়র্ক সিটিতে যাতায়াতের সবচেয়ে নিরাপদ মাধ্যম সিটি সাবওয়েকে কিছুতেই নিরাপদ করতে পারছে না পুলিশ বিভাগ।
গত দু’সপ্তাহে সাবওয়েতে বেশ ক’জন যাত্রীকে হত্যার ঘটনায় মধ্যে আতঙ্ক আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। গত সোমবার জ্যাকসন হাইটসে ও তার আগের দিন ব্রুকলীনের সাবওয়ে স্টেশনে দুর্বৃত্তদের ধাক্কায় দু’জনের প্রাণহানি ঘটে এবং এসব কোনো ঘটনাই পূর্ব উস্কানিমূলক ছিল না বলে তদন্তে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। এভাবে চলতে থাকলে সাবওয়ের যাত্রীসংখ্যা আরো হ্রাস পেতে পারে বলে আশঙ্কা করছে। উল্লেখ্য, করোনাকালে সাবওয়ের যাত্রীসংখ্যা যে হারে হ্রাস পেয়েছে তা এখন পর্যন্ত কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। জীবন ঝুকিপূর্ণ হয়ে ওঠায় যাত্রী সংখ্যা নেমে গেছে অর্ধেকে।
প্রতিদিন গড়ে ৫৬ লাখ যাত্রী ওঠানামা করতো এই সাবওয়ে ট্রেনে। ৮৫০ মাইল দৈর্ঘ্যরে নিউইয়র্ক সিটি সাবওয়ের ৪৭২টি স্টেশনে দিনরাত ২৪ ঘণ্টাই চলাচল ছিলো যাত্রীদের। ভীতির কারণে এসব স্টেশন আজ মৃতপ্রায়। সাবওয়ে অপরদিকে অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে যাত্রীসংখ্যা হ্রাসের কারণে।
সিটি মেয়র এরিক অ্যাডামস সাবওয়ে ব্যবহারকারী নিউইয়র্কারদের সতর্কতার সঙ্গে চলাফেরার আহবান জানিয়ে বলেছেন তিনি নিজেও নিরাপদ বোধ করেন না সাবওয়ে ব্যবহার করতে। তিনি সর্বত্র হোমলেসদের দেখেছেন, বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি লক্ষ্য করেছেন। তার মতে সিটিবাসী নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছে। তিনি অপরাধ হ্রাসে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং নিউইয়র্কারদের জন্য সাবওয়ে সিস্টেমকে নিরাপদ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সিটির অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করে সিটিকে নিরাপদ করে তোলাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে মেয়রের জন্য। সিটিকে নিরাপদ ও অপরাধমুক্ত করতে যেসব প্রতিশ্রুতি মেয়র দিয়েছেন, তা পূরণ করা বাস্তব জীবনে কঠিন হলেও সিটিবাসীর অবাধ চলাফেরার ন্যূনতম নিরাপত্তা বিধান করতে হবে। কারণ অপরাধ এখনই ঠেকানো না হলে অপরাধীরা আরো আস্কারা পেয়ে যাবে। শুধু সাবওয়েই নয়, গোটা নিউইয়র্ক সিটিতে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বেড়ে চলেছে অপরাধ।
সাবওয়ে, বাস, রাস্তাঘাট এবং একসময়ের শান্ত, নিরাপদ নেইবারহুডগুলোতেও হত্যা, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ধর্ষণের মতো অপরাধ ঘটছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো অসহায় হয়ে পড়েছে অপরাধীদের কাছে।
অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, সন্দেহভাজন অপরাধীদের গ্রেফতার করার পর যখন আদালতে হাজির করা হয়, আদালত অপরাধীদের জামিন দিয়ে দেয়। এতে একদিকে পুলিশ অপরাধী গ্রেফতার করতে উৎসাহ হারিয়ে ফেলে, অপরদিকে জামিন পেয়ে অপরাধীরা আরো উৎসাহে অপরাধকর্মে নিয়োজিত হয়। নিউইয়র্ক সিটির কোনো কাউন্টিকেই এখন আর নিরাপদ এলাকা বলে ধরে নেওয়া যাচ্ছে না। যেসব এলাকা আগে নিরাপদ বলে প্রশংসিত হতো এবং যেসব এলাকার নিরাপত্তার প্রতি কোনো হুমকি নেই বলে ধারণা করা হতো, এখন আর কারও পক্ষে বলা সম্ভব হচ্ছে না যে সিটির কোন এলাকায় নিñিদ্র নিরাপত্তা বজায় রয়েছে। এখন সিটির প্রতিটি কাউন্টির প্রায় প্রতিটি নেইবারহুড অপরাধীদের নেটওয়ার্কের আওতায়। যখন তখন তারা যেকোনো অঘটন ঘটাতে পারে এবং কার্যত তা ঘটিয়ে চলেছে। আমরা মনে করি নিউইয়র্ক সিটি কর্তৃপক্ষকে অপরাধ দমনকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে নগরবাসী নিরাপদে বসবাসের পরিবেশ সৃষ্টিতে।
Posted ১:৫৬ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২০ অক্টোবর ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh