| বৃহস্পতিবার, ২৮ অক্টোবর ২০২১
পেনসিলভেনিয়ার ফিলাডেলফিয়া সিটিতে গত ১৫ অক্টোবর চলন্ত ট্রেনে যাত্রীদের সামনে এক নারীকে ধর্ষনের ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। হুট করেই যে ঘটনাটি ঘটেছে তা নয়, দীর্ঘ চল্লিশ মিনিট ধরে ধর্ষক তার অসহায় শিকার ওই নারীর সঙ্গে কথাকাটাকাটি, ধস্তাধস্তি করেছে এবং ধর্ষক ও ধর্ষিতা যে স্টেশনে ট্রেনে আরোহণ করেছিল, সেখান থেকে ট্রেনটি ২৭টি স্টেশন অতিক্রম করার পর কোনো একটি ট্রেনের বাইরে থাকা একজন রেলকর্মী ট্রেনের ভেতর সন্দেহজনক কিছু ঘটছে আঁচ করে পুলিশের কাছে ফোন করার পরই কেবল পুলিশ পরবর্তী স্টেশনে ট্রেনে উঠে ধর্ষনরত অবস্থায় ধর্ষককে আটক করেছে। ঘটনাটি সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হওয়ার পর সকলে স্তব্ধ হয়েছে। কারণ ধর্ষণের ঘটনার চেয়েও যা ভীতিকর ছিল, তা হচ্ছে ট্রেনভর্তি যাত্রীদের অকল্পনীয় নীরবতা। অসহায় যাত্রীকে ধর্ষকের কবল থেকে রক্ষা করতে কেউ বাধা দেয়নি, কোন যাত্রী তাদের ফোনে একটি ছবিও ধারণ করেনি, এমনকি কেউ ৯১১ এ কল করে পুলিশের সহায়তা পর্যন্ত চায়নি।
ট্রেনটি একটি একটি করে ২৭টি স্টেশন অতিক্রম করেছে এবং যাত্রীরা পুরো সময় ধরে তামাশা দেখেছে। পুলিশ এবং অন্যান্য কর্মকর্তারাও হতচকিত হয়েছেন যে এ ধরনের একটি ন্যাক্কারজনক ঘটনায় এত বিপুল সংখ্যক যাত্রী কিভাবে নীরবতা পালন করে করতে পারলো, কেউ তাদের মোবাইলে একটা ছবি তোলার বা পুলিশ ডাকার অথবা ট্রেনে থাকা ইমার্জেন্সি বাটনে চাপ দেয়ার প্রয়োজন পর্যন্ত বোধ করলো না। ট্রেন যাত্রীদের এই নির্লিপ্ততা বা বাজে কিছু দেখেও না দেখার ভান করা অত্যন্ত অস্বাভাবিক। কারণ শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, যেকোনো সমাজ ও সভ্যতায় অপরাধ ঘটতে দেখলে সচেতন মানুষ প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠে অথবা নিজেদের পক্ষে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব না হলে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার শরণাপন্ন হয়। ২০১৭ সালের মে মাসে পশ্চিম উপকূলের স্টেট ওরিগনের পোর্টল্যান্ড সিটির এক ট্রেনে এক শ্বেতাঙ্গ ব্যক্তি হিজাব পরা দুই মুসলিম তরুণীকে উত্যক্ত করতে দেখে ট্রেনের ওই কম্পার্টমেন্টে থাকা যাত্রীরা প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠে। কিন্তু ওই বর্ণবিদ্বেষী শ্বেতাঙ্গ ব্যক্তি ছুরি বের করে প্রতিবাদকারীদের উপর চড়াও হয় এবং তার উপর্যূপরি ছুরিকাঘাতে এক যাত্রী নিহত এবং অপর দুইজন গুরুতর আহত হয়। সচেতন মানুষের এ ধরনের ভূমিকা সর্বত্র পালন করতে দেখা যায়। কিছু ঘটতে দেখলে যাত্রীসহ সকলের উচিত অবিলম্বে তা আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাকে অবহিত করা, এবং তারা তাদের পরিচয় গোপন রাখতে চাইলেও অপরাধ দমনে তাদের ভূমিকা থাকা জরুরী।
পেনসিলভেনিয়ার ঘটনায় যাত্রীদের পক্ষ থেকে কোনো আপত্তি না উঠা একদিকে রহস্যজনক, অপরদিকে হতাশাজনক। রেলওয়ের পুলিশ প্রধানও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে সেজন্য প্রত্যেকের ক্রদ্ধ হওয়া ও বিরক্তি প্রকাশ করা উচিত। কারণ সভ্য সমাজে প্রকাশ্যে এধরনের কোন ঘটনা মেনে নেওয়ার মত নয়। প্রত্যেকের উচিত প্রতিটি ব্যবস্থাকে নিরাপদ করতে এগিয়ে আসা। দীর্ঘ চল্লিশ মিনিট ধরে একটি হামলার ঘটনা ঘটলো এবং কেউ ঘটনা প্রতিহত করতে এগিয়ে এলো না, এ পরিস্থিতিতে আমি উৎকণ্ঠিত। এটি একটি অস্বাভাবিক ও ব্যতিক্রমী ঘটনা। যাত্রীদের মধ্য থেকে কারো না কারো কিছু করা উচিত ছিল। তাদের কিছু না করার ঘটনা প্রমাণ করে যে আমরা সমাজের কোথায় আছি, যারা এ ধরনের একটি ঘটনা ঘটতে দেয়, তারা সমাজকে আরো ভীতিকর পরিণতির দিকেই ঠেলে দেয়। শুধু যাত্রীদের পক্ষ থেকে ভূমিকা পালনের নিস্পৃহতাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনও অপরাধীদের ব্যাপারে অনেক ক্ষেত্রে দায়মুক্তি দেয়, যা অপরাধীকে একটির পর একটি অপকর্ম সংঘটনে উৎসাহী করে। আলোচ্য ধর্ষক ফিস্টন এনগয়ের ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে বলে সন্দেহ করলে তা আদৌ অমূলক সন্দেহ হবে না। কারণ ধর্ষক ফিস্টন প্রায় এক যুগ আগে এদেশে স্টুডেন্ট ভিসায় এসেছিল কঙ্গো থেকে। তার ভিসার মেয়াদ শেষ হলে তিনি রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেন, যা ইমিগ্রেশন কোর্টে বিবেচনাধীন রয়েছে। এ সময়ের মধ্যে ধর্ষক ফিস্টন যৌন অপরাধসহ অনেক অপরাধ ঘটিয়েছে, তার বিরুদ্ধে কারাদন্ড হয়েছে। তাকে কেন ডিপোর্ট বা যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিস্কার করা হবে না, এই প্রশ্নের প্রেক্ষিতে ইমিগ্রেশন আপিল কোর্টের সিদ্ধান্ত ছিল যে অভিযুক্তের দ্বারা যৌন অপরাধ এমন কোনো গুরুতর অপরাধ নয়, যা তাকে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানের অযোগ্য করতে পারে। আদালতের এ ধরনের সিদ্ধান্ত যৌন অপরাধসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। এজন্য যে কোনো সিদ্ধান্ত তা বিচারিক হোক বা প্রশাসনিক হোক, অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে গ্রহণ করা উচিত, যাতে অপরাধী কোনোভাবেই প্রশ্রয় না পায়। সাথে সাথে অপরাধের বিরুদ্ধে জনগণেরও আরো সতর্ক হওয়া উচিত, যাতে অপরাধীরা এ ধরনের ঘৃণ্য কর্মে লিপ্ত হওয়ার আগে তার পরিণতি সম্পর্কে হাজার বার চিন্তা করে।
Posted ৪:৪৭ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৮ অক্টোবর ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh