| বৃহস্পতিবার, ০৭ জুলাই ২০২২
বিশ্ব মুসলিম উম্মার মাঝে আবার এসেছে ঈদুল আজহা। মুসলমানদের সর্ববৃহৎ দু’টি ধর্মীয় উৎসবের মধ্যে ঈদুল আজহা ঈদ অন্যতম। ঈদ মানে খুশি তবে একার আনন্দ নয়। বছরে মাত্র দু’বার ঈদ আসে বিশেষ একটা মাহাত্ন্য নিয়ে। আর তা হলো পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ব ও সৌহাদ্যপূর্ণ সম্পর্ককে বাড়িয়ে তোলা। ধনী-গরীব, উচুঁ-নীচু, সাদা কালো নির্বিশেষে সকল মানুষ সমান, এই আদর্শে উজ্জীবিত হওয়াই হচ্ছে ঈদের মূল উদ্দেশ্য। ঈদুল আজহা এক্ষেত্রে ত্যাগ-তিতিক্ষা আর আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়ার সর্বোচ্চ নিদর্শন। ঈদুল আজহাকে তাই বলা হয় কোরবানীর ঈদ অর্থাৎ আত্নত্যাগ বা উৎসর্গের ঈদ। এবার ৯ জুলাই শনিবার যুক্তরাষ্ট্রে এবং ১০ জুলাই বাংলাদেশে উদযাপিত হবে পবিত্র ঈদুল আজহা। পবিত্র হজ্ব পালিত হচ্ছে ৮ জুলাই। কিন্তু মুসলিম বিশ্বের ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মত এবারের ঈদুল আজহা ও পবিত্র হজ্ব উদযাপিত হবে সম্পূর্ণ ভিন্ন আঙ্গিকে। বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে গতবছর ঈদুল ফিতরের জামাত যথাযথভাবে অনুষ্ঠিত হতে না পারলেও চলতি বছর ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়েছে সকল স্বাস্থ্যবিধি অনুসরন করে।
কিন্তু ইতিমধ্যে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের কঠোরতা শিথিল করা হয়েছে এবং এর ফলে আগামী ঈদুল আজহার জামাত অত্যন্ত আনন্দময় পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। স্বাস্থ্য অনুসরণে বাধ্য করার জন্য কঠোরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তা সত্বেও ঈদের মত আনন্দ উৎসব পালন করা থেকে মানুষকে দমিয়ে রাখা কঠিন ব্যাপার। জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করেই শুধু এর প্রতিকার সম্ভব হতে পারে। এবারের ঈদুল আজহার জামাত নিউইয়র্কসহ অন্যান্য স্টেটে ভালোভাবে পূর্ণ ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা বজায় রেখে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দেখে সকলের মধ্যে আনন্দের ভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। অনেক ইসলামিক সেন্টার ও মসজিদের পক্ষ থেকে খোলা মাঠে বড় ঈদ জামাতের আয়োজন করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। অপরদিকে বাংলাদেশে করোনা মহামারির অবর্ণনীয় দুঃখ কষ্টে দিন কাটবে মানুষের। এমতাবস্থায় ঈদের আনন্দ তো দূরের কথা, মানুষ তাদের স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে পারছে না। এবার হজ্বও পালিত হচ্ছে নজিরবিহীন সীমিতাকারে। মহান আল্লাহ তায়ালা সবাইকে ঈদের আনন্দ উপভোগ করার সুযোগ দিবেনÑএটাই আমাদের প্রার্থনা।
ঈদের খুশি মানে কেবল আমাদের খুশি নয়; আল্লাহকে খুশি করার উদ্দেশ্যে ত্যাগ স্বীকার করাই হচ্ছে ঈদুল আযহার মূল কথা। কেননা, স্বয়ং আল্লাহই তার প্রিয় বান্দা বা সৃষ্টির সর্বশ্রেষ্ঠ জীব আশরাফুল মাখলুকাত মানুষ জাতিকে ত্যাগ তিতিক্ষার চেতনায় মহীয়ান করার উদ্দেশ্যে স্মরনীয় একটি ঘটনার মধ্য দিয়ে এই ঈদুল আযহার প্রবর্তন করেন। সেই ঘটনাটি আমরা সকলেই জানি। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এক এক করে তার প্রিয় দুম্বাগুলোর কয়েকটিকে কোরবানী করার পরও স্বপ্নে আল্লাহর আদেশ পেতে থাকলেন সর্বাপেক্ষা প্রিয় হচ্ছে একমাত্র কিশোর পুত্র ইসমাইল (আঃ)। তখন তিনি পুত্র ইসমাইল (আঃ) কেই নিজ হাতে কোরবানী করার প্রস্তুতি নিলেন। আল্লাহকে খুশি করার কথা ভেবে হযরত ইসমাইল (আঃ) রাজি হলেন। এক পর্যায়ে পিতার ধারালো ছুরির নীচে শায়িত হলেন ইসমাইল (আঃ) এবং হযরত ইব্রাহীম (আঃ) নিজের চোখ বেঁধে ছুরি চালালেন প্রিয়তম পুত্রের গলায়। আর এর পরপরই ঘটলো বিস্ময়কর ঘটনাটি। চোখ খুলে তিনি দেখতে পেলেন, পুত্র তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে তার বদলে কোরবানী হয়েছে একটি দুম্বা। অর্থাৎ মহান আল্লাহ হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর সর্বোচ্চ ত্যাগের এই সদিচ্ছ্বায় খুশি হয়েছেন এবং তাৎক্ষণিকভাবে এজন্য তাকে তিনি পুরস্কৃত করেছেন। আর সেদিন থেকেই প্রতিবছর জিলহজ্ব মাসের দশ তারিখে এই কোরবানীর ঈদ বা ঈদুল আযহা পালিত হয়ে আসছে। এই ঈদে প্রত্যেক সামর্থবান মুসলমান গবাদিপশু কোরবানী দিয়ে থাকে। তার মানে কোরবানী নিছক পশু জবাই বা গোশত খাওয়া নয়। এটা একটি প্রতীক মাত্র। কোরবানীর আসল কথা হলো আত্নত্যাগ ও আত্নশুদ্ধি। আর নিজেদের মধ্যকার পশুত্ব বা পাশবিকতাকে কোরবানী করা। মুসলিম উম্মাহ যথাযোগ্য মর্যাদা, ধর্মীয় উৎসাহ, উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালন করবে পবিত্র এই দিবসটি। পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।
Posted ৯:০৭ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৭ জুলাই ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh