| বৃহস্পতিবার, ১০ আগস্ট ২০২৩
ইমিগ্রান্টদের নিয়ে নিউইয়র্ক সিটিতে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। নিউইয়র্ক সিটি নবাগত ইমিগ্রান্টদের চাপে এখন অনেকটাই বিপর্যস্ত। তবুও টেক্সাস সীমান্ত থেকে পাঠিয়ে দেওয়া ইমিগ্রান্ট প্রবাহ বন্ধ হচ্ছে না। গত এক বছরে প্রায় এক লাখ ইমিগ্রান্ট নিউইয়র্কে প্রবেশ করেছে এবং তাদের আবাসনসহ অন্যান্য ব্যবস্থা করতে সিটি প্রশাসনকে হিমসিম খেতে হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে সিটির ইমিগ্রান্ট সংকট কাটাতে সিটির ৫৪ জন নির্বাচিত ডেমোক্রেট প্রতিনিধি – যাদের মধ্যে রয়েছেন কংগ্রেসম্যান থেকে থেকে সিটি কাউন্সিলম্যান পর্যন্ত রয়েছেন, তারা সংকট নিরসনে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
দক্ষিণ সীমান্ত দিয়ে মাইগ্রেন্টদের অনুপ্রবেশ প্রবাহ এবং ইমিগ্রেশন ব্যবস্থার ওপর রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটদের বিপরীতমুখী অবস্থানের কারণে বিষয়টি প্রতিনিয়ত জটিল হচ্ছে। এখন ডেমোক্রেটরা রাষ্ট্রের ক্ষমতায় আসীন এবং রিপাবলিকানদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের অন্যতম বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে ইমিগ্রেশন ইস্যুতে ডেমোক্রেটদের কীভাবে কাবু করা যায় সেই ব্যবস্থা করা এবং শুধু এ কারণেই সীমান্ত পথে যারা যুক্তরাষ্ট্রে অনুপ্রবেশ করছে, টেক্সাস হালভা তাদেরকে স্যাঙ্কচ্যুয়ারি সিটি খ্যাত নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসি, পোর্টল্যান্ডের মতো সিটিগুলোতে পাঠিয়ে দিচ্ছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশনের ইতিহাসে নজীরবিহীন বলে বর্ণনা করেছে সংবাদপত্র ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলো। ইমিগ্রান্টদের অব্যাহত চাপ সিটিগুলো সহ্য করতে হিমশিম খাচ্ছে। নিউইয়র্কের অবস্থা সবচেয়ে নাজুক।
এ ধরনের সমস্যা মোকাবেলার মতো বিপুল পরিমাণ অর্থ নিউইয়র্কের নেই। ২০২৪ এর জুন পর্যন্ত নিউইয়র্ক সিটিকে এখাতে চার বিলিয়ন ডলারের অধিক ব্যয় করতে হবে। সিটি কর্তৃপক্ষ ফেডারেল সরকারের আর্থিক সহায়তা চেয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সাড়া না পাওয়ায় নির্বাচিত প্রতিনিধিরা প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে আবেদন জানিয়েছে ইমিগ্রান্টদের ব্যাপারে জরুরী ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে এবং আগত ইমিগ্রান্টদের সকল স্টেটে আনুপাতিক হারে বসবাস ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে। নিউইয়র্কে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তাতে পরিবেশগত সমস্যা এখনই সৃষ্টি হয়েছে, আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি হতে বাধ্য। যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে প্রায় দেড় কোটি অবৈধ ইমিগ্রান্ট বসবাস করছে, যাদের মধ্যে প্রায় দশ লাখ ইমিগ্রান্ট এসাইলাম বা রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেছে।
এসাইলাম অফিস থেকে যাদের আবেদন নামঞ্জুর করা হয়েছে তাদের বিষয় পুন:বিবেচনার জন্য ইমিগ্রেশন জজদের কাছে পাঠানো হয় এবং ইমিগ্রেশন আদালতগুলোতে প্রায় ছয় লাখ এসাইলাম কেস বিবেচনাধীন রয়েছে। লোকবলের ঘাটতির কারণে এসাইলাম অফিস ও ইমিগ্রেশন আদালতগুলোতে অনিস্পন্ন এসাইলাম কেস ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। অতএব ইমিগ্রান্ট সমস্যা নিস্পত্তি করতে বাইডেন সরকারের হস্তক্ষেপ জরুরী হয়ে পড়েছে। শুধু নিউইয়র্ক সিটির কথা বলতে গেলে দেখা যায়, সিটি প্রশাসনকে ইমিগ্রান্টদের জন্য প্রতিদিন প্রায় ৮ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করতে হচ্ছে, যা সিটির ওপর আর্থিক চাপ সৃষ্টি করছে এবং আশংকা করা হচ্ছে যে এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে বহু নাগরিক সুবিধা হ্রাস করে সেই অর্থ ইমিগ্রান্টদের পেছনে ব্যয় করতে হবে।
নিউইয়র্ক সিটিতে ইমিগ্রান্ট ঢল রোধ করার উদ্যোগ হিসেবে সিটি মেয়র এরিক অ্যাডামস দক্ষিণ সীমান্ত এলাকায় অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রমকারীদের মাঝে লিফলেট বিতরণ করার ব্যবস্থা করেছেন, যাতে তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে যে তারা যাতে নিউইয়র্ক পর্যন্ত যাওয়ার কষ্ট না করেন। এমন আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়ার মত নয় যে, ইমিগ্রান্ট ইস্যুকে কেন্দ্র করে হেটক্রাইম পরিস্থিতি চাঙ্গা হয়ে না উঠে। কারণ সিটির দু’একটি স্থানে ইমিগ্রান্টদের জন্য আবাসনের উদ্যোগ নেয়া হলে নির্বাচিত প্রতিনিধিসহ স্থানীয় লোকজন প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে উঠেছেন। অতএব গুরুতর কিছু ঘটার আগেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আগেই সবকিছু সামলে নেয়া।
Posted ১২:৩৭ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১০ আগস্ট ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh