| শনিবার, ১৬ জুলাই ২০২২
যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় জনবহুল নগরী নিউইয়র্ক সিটি । সম্প্রতি এই নগরীর আইন শৃংখলা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি ঘটেছে। প্রতিদিন সিটির পাঁচটি বরোর কোথাও না কোথাও সংগঠিত হচ্ছে মারাত্নক অপরাধ। বিশেষ করে বন্দুক সহিংসতায় ঝড়ে যাচ্ছে নিরীহ মানুষের জীবন। পুলিশ সদস্যরাও রেহাই পাচ্ছেন না খুনীদের হাত থেকে। সিটির আইনশৃংখলা পরিস্থিতির যে কতটা অবনতি ঘটেছে, তা আবারও উৎকটভাবে প্রমাণিত হলো প্রকাশ্য দিবালোকে অস্ত্রের মুখে সিটি মেয়রের এক সহকারীর সর্বস্ব লুণ্ঠনের ঘটনার মধ্য দিয়ে। ঘটনাটি ঘটেছে গত ব্রুকলিনের ভিনেগার হিলে হাডসন এভিনিউ ও ইয়র্ক স্ট্রিটের কোণায়।
মেয়রের সহকারীর নাম ক্রিস বাউ (৩৩)। তিনি যখন তার গাড়ি নিতে যাচ্ছিলেন তখন ব্রুকলিন নেভি ইয়ার্ডের বাইরে এক নির্জন ট্রাফিক আইল্যান্ডে দুই সশস্ত্র ব্যক্তি তার ওপর হামলা করে তাকে মাটিতে ফেলে দেয়। প্রথমে একজন তার পায়ের পেছনে আঘাত করেছিল, অপরজন তাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়। ক্রিস বাউ সশস্ত্র ব্যক্তিদ্বয়ের কাছে অনুনয় করেন, “আমার সাথে তোমরা এমন করতে পারো না। আমি মেয়রের জন্য কাজ করি। আমার রাস্তা থেকে সরে দাঁড়াও।” তিনি বার বার সিটি হলের সঙ্গে তার যোগসূত্রের উল্লেখ করে তস্করদের মনে ভীতি সঞ্চারের চেষ্টা করেন এবং তাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুনয় বিনয় করেন। এছাড়া সাবওয়েতে ধাক্কা দিয়ে ফেলা দেয়া সহ অন্যান্য অপরাধের ঘটনাও বাড়ছে সমানতালে।
কোথাও স্বস্থি ও নিরাপদে নেই নগরবাসী। নিউইয়র্ক সিটিতে বসবাসকারী বাংলাদেশীরাও প্রতিনিয়ত শিকার হচ্ছেন অপরাধ কর্মের এসব ঘটনায় কমিউনিটিতে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। সত্তরের দশকে নিউইয়র্ক সিটি ছিল আইনশৃংখলার অবনতির অনিরাপদ এক নগরী। একের পর এক দু:খজনক ঘটনার পর নিউইয়র্কাররা আশাবাদী হয়ে ওঠেছিল এ সিটি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে নিরাপদ নগরী হিসেবে গড়ে ওঠবে।
কিন্তু তা দুরাশায় পরিণত হয়েছে। অপরাধী গ্যাংগুলো আগের চেয়ে বেশি নৃশংসতায় রাস্তায় নেমে এসেছে। এসবের সঙ্গে অন্যান্য অপরাধ এবং দুর্ঘটনাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। পর পর অনেকগুলো অপরাধের ঘটনা এবং সাবওয়েতে যাত্রীদের উত্যক্ত করার নিয়মিত ঘটনা সিটিবাসীকে ভীতির অন্ধকারে ছুড়ে দিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। গত দুই বছর যাবত করোনা মহামারীর ব্যাপকতা ও বিধিনিষেধের কারণে এমনিতেই নিউইয়র্ক সিটিসহ সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রে অচলাবস্থার মধ্যে সিটিতে অপরাধের বিস্তার জনমনে এক অনিশ্চয়তার সৃষ্টি করে। নিউইয়র্ক সিটিতে ইতোমধ্যে গুলিবিনিময় ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ২০১৮ সালের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২১ সালে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে ৪৮৮টি। নব্বইয়ের দশকে যেভাবে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে তা এখনকার ঘটনার চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন ছিল।
এখন বিভিন্নভাবে লোকজন নিহত হচ্ছে। এ পরিস্থিতির কোনো উন্নতি ঘটতে যাচ্ছে না। সাম্প্রতিকালে সংঘটিত অপরাধমূলক ঘটনাগুলো দেখে ও জেনে মনে হচ্ছে সিটিবাসী পুরোনো দিনে ফিরে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে আর নিরাপত্তার বোধ অনুভব করেন না। আগে দিন ও রাতের যে কোনো সময়ে ঘুরে বেড়াতে কোনো ভয় ছিল না। কখনও ভীতি অনুভব হতো না সাবওয়ে ব্যবহারে। কিন্তু এখন সাবওয়ে ট্রেনে ওঠার কথা ভাবতেই ভীতি অনুভব হয়। সত্তরের দশকে নিউইয়র্ক সিটির অর্থনৈতিক অবস্থা শোচনীয় পর্যায়ে চলে গিয়েছিল।
১৯৭৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে জাতীয় বেকারত্ব যেখানে ৮.৫ শতাংশ ছিল, তখন নিউইয়র্ক সিটিতে বেকারত্ব ছিল ১২ শতাংশ। এর পেছনে ছিল নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ও বড় করদাতারা সিটির বাজেট ঘাটতি ঘটার কারণে পরিণত হয়ে সিটিকে দেউলিয়াত্বের প্রান্তে নিয়ে গিয়েছিল। আর্থিক ঘাটতি পূরণ করার বিকল্প ছিল না। ১৯৭৫ সালে জেনারেল ইলেকট্রিক এবং পেপসিকো’র মত বড় কর্পোরেশনগুলো নিউইয়র্ক সিটি থেকে তাদের সদর দফতর সরিয়ে নেয়ার ফলে বেকারত্ব ও আর্থিক সংকট বৃদ্ধি পেয়েছিল, যা কাটিয়ে উঠতে সিটির অনেক বছর সময় লেগেছে। নিউইয়র্ক সিটির সাম্প্রতি অপরাধ কর্মকান্ডে সিটিবাসী যেমন উদি¦গ্ন, তেমনি প্রচন্ড চাপে আছেন মেয়র এরিক এডামস। ঘটনার ভয়াবহতা আঁচ করে প্রেসিডেন্ট জো-বাইডেন গত সপ্তাহে নিউইয়র্ক সিটি প্রশাসনের কর্মকর্তাদেও সাথে বৈঠক করেছেন। যেকোন মূল্যে সিটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট। আমরা চাই নিউইয়র্ক সিটি প্রতিটি নাগরিকের জন্য হোক নিরাপদ আবাসস্থল।
Posted ৫:২৯ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ১৬ জুলাই ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh