| বৃহস্পতিবার, ২৫ নভেম্বর ২০২১
কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ সোসাইটি আবারো গভীর সংকটে নিপতিত। আদালতের নির্দেশে স্থগিত হলো গত ১৪ নভেম্বরের পূর্ব-নির্ধারিত নির্বাচন অনুষ্ঠান। চূড়ান্ত প্রস্তুতি পর্বের শেষ মুহূর্তে গত ১২ নভেম্বর বাংলাদেশ সোসাইটি’র নির্বাচন স্থগিতের আদেশ দিয়েছেন নিউইয়র্ক স্টেট সুপ্রিম কোর্ট। নির্বাচনে নানা অনিয়মের অভিযোগ এনে সোসাইটির এক জন সদস্য মামলা দায়ের করেন আদালতে। মামলায় বাংলাদেশ সোসাইটির প্রধান নির্বাচন কমিশনার সহ কর্মকর্তাদের বিবাদী করে আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলা হয়েছে জবাব দিতে। এ ব্যাপারে শুনানির দিন ধরা হয়েছে ২ ডিসেম্বর। ২০১৮ সালের ২১ অক্টোবর সংগঠনটির দ্বিবার্ষিক নির্বাচন আটকে যায় মামলার ফাঁদে। নিউইয়র্ক প্রবাসী বাংলাদেশীদের সর্ববৃহৎ সামাজিক সংগঠন বাংলাদেশ সোসাইটি পথচলার দীর্ঘ চার দশকেরও অধিক সময়কালে নেতৃত্বের কোন্দলে বার কয়েক জড়িয়েছে মামলা মোকদ্দমায়। ব্যক্তি ইগো, আঞ্চলিকতা, স্বদেশী রাজনীতির সংশ্লিষ্টতা, আর্থিক লেনদেন সহ নানাবিধ কারণে সৃষ্ট জটিলতা ও মামলা মোকদ্দমার কারণে দিন দিন পারস্পরিক বিভেদ বাড়ে সংগঠনটির অভ্যন্তরে। পক্ষান্তরে সংগঠনটির মৌলিক চেতনা অভিবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যকার পারস্পরিক সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধের বন্ধন বার বার হয়েছে ছিন্ন-ভিন্ন।
২০১৮ সালে সোসাইটিতে রেকর্ড সংখ্যক ২৭ হাজার ৫১৩ ভোটার হয়। আর এসব ভোটারই এবার প্রস্তুত ছিলো ভোট প্রদানে। এবারের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারির ব্যাপারটি অপ্রত্যাশিত ছিল না। কমিউনিটিতে জল্পনা-কল্পনা চলছিল যে আবারও থামিয়ে দেওয়া হতে পারে নির্বাচনের আয়োজনকে। দুই প্যানেল এবং স্বতন্ত্রসহ ৩৮ প্রার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। প্রতি দু’বছর অন্তর সংগঠনটি কার্য নির্বাহী কমিটি গঠিত হয় সাধারণ সদস্যদের সরাসরি ভোটে। নির্বাচন এলেই সরব হয়ে উঠেন সোসাইটি সংশ্লিষ্ট একটি মহল। এক ধরণের উৎসবের আমেজ পরিলক্ষিত হয় কমিউনিটিতে। সাম্প্রতিক সময়ে সোসাইটির নির্বাচনের চূড়ান্ত দিনক্ষণ ঘনিয়ে এলে মামলাকারীরা তৎপর হয়ে উঠেন। দীর্ঘদিন ধরে মামলার ফাঁদ পেতে তারা অপেক্ষা করেন মোক্ষম সময়টির জন্য। অলাভজনক সামাজিক এ সংগঠনটির কর্মকান্ড ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনে আদালতে মামলা ঠুকে দেন। এবারো এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। বিগত তিন মাস ধরে নির্বাচন কমিশন এবং প্রতিদ্বন্দ্বি দু’টি প্যানেলের ৩৮ প্রার্থী ও তাদের সমর্থকগণ যারপরনাই পরিশ্রম করেছেন।
মামলাকারীদের অভিযোগ সোসাইটিতে যোগ্য নেতৃত্ব নেই। মামলার ভয়েই যে যোগ্য ব্যক্তিরা এখন সোসাইটিতে আসছেন না এ বিষয়টি মামলাকারীদের ভাবনায় নেই। সোসাইটির অনিয়ম নিয়ে নির্বাচনের একমাস পূর্বে কেন অভিযোগ উত্থাপন করা হলো না বা সোসাইটির কর্মকর্তা ও নির্বাচন কমিশনকে পরামর্শ দেয়া হলো না এ নিয়ে সাধারণ সদস্যদের মাঝে প্রশ্নের উদ্রেক করেছে। মামলার কারণে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও অনেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন সোসাইটি থেকে এবং এই প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। সামান্য কারণে কথায় কথায় আদালতের শরনাপন্ন হওয়াতে সোসাইটি ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে। ২০১৮ সাল এবং চলতি বছরের নির্বাচনী প্রচারণা, নির্বাচন কমিশন ও মামলায় ব্যয় বাবদ পুরো প্রক্রিয়ায় মিলিয়ন ডলারের শ্রাদ্ধ হয়ে গেছে বলে অভিজ্ঞ মহলের ধারণা।
২০১৮ সালের যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো সেই নির্বাচনে দু’জনের প্রার্থীতা অযোগ্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এসব নিয়ে বাদ-প্রতিবাদের কারণে শেষ পর্যন্ত আদালতের শরনাপন্ন হন ভুক্তভোগী দু’প্রার্থী। সোসাইটির অপর একজন সাবেক কর্মকর্তা পৃথক আরো একটি মামলা করেন অনিয়মের অভিযোগ এনে। আদালত নিষেধাজ্ঞা জারি করেন নির্বাচন অনুষ্ঠানের উপর। থমকে যায় সব উৎসব আয়োজন। বাংলাদেশ সোসাইটি একটি অলাভজনক ও অরাজনৈতিক সংগঠন। সোসাইটির তহবিলের অর্থ সাধারণ প্রবাসীদের। মামলা-মোকাদ্দমা বা অন্য কোন অভিপ্রায়ে এই তহবিলের অর্থ অপচয় করলে এ প্রক্রিয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট সোসাইটির সবাইকে জবাবদিহি করতে হবে। এখন সর্বাগ্রে প্রয়োজন চলমান জটিলতা ও সংকট নিরসন। এক্ষেত্রে সোসাইটির বর্তমান নেতৃত্ব, নির্বাচন কমিশন, উভয় প্যানেলের শীর্ষ প্রার্থী, সমর্থক ও মামলাকারীদেও সম্মিলিত প্রয়াস প্রয়োজন। যার মূল লক্ষ্য হবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা। অন্য কোন পন্থা বা প্রক্রিয়া নয়। মামলা সংকট নিরসনের কোন পন্থা নয়। একমাত্র অবাধ এবং পক্ষপাতহীন নির্বাচন অনুষ্ঠানই বাংলাদেশ সোসাইটির বর্তমান সংকট নিরসনের একমাত্র পথ।
Posted ৯:৫২ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৫ নভেম্বর ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh