| বৃহস্পতিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২
কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ সোসাইটি বিগত চার বছর যাবত গভীর সংকটে নিপতিত। একটি মহল নানাবিধ অভিযোগে বার বার মামলার জালে আটকে ফেলছে সোসাইটিকে। বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচনের দিনক্ষণ যখনই চূড়ান্ত হয় তখনই তারা শরনাপন্ন হন আদালতের। মামলা ঠুকে দিয়ে জারি করান স্থগিতাদেশ। ২০১৮ সাল থেকে এই মামলা মামলা খেলা চলে আসছে। মামলার কারণে ভন্ডুল হয়ে যায় ২০২১ সালের ১৪ নভেম্বরের সর্বশেষ নির্বাচনী প্রস্তুতি। এতে বড় ধরণের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে বাংলাদেশ সোসাইটি এবং নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতাকারী প্রার্থীরা। গভীর হতাশাও বিরাজ করছে প্রার্থী ও সমর্থকদের মাঝে। বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচন কমিশন নূতন করে নির্বাচনের দিন তারিখ ঘোষণা করেছে। আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের জন্য চূড়ান্ত প্রস্তুতিও গ্রহণ করা হয়েছে। এবারের নির্বাচন যাতে সুষ্ঠুভাবে নিষ্পন্ন হতে পারে সেজন্য কমিউনিটির সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।
এর আগে আদালতের নির্দেশে স্থগিত হয় গত ১৪ নভেম্বরের পূর্ব-নির্ধারিত নির্বাচন। চূড়ান্ত প্রস্তুতি পর্বের শেষ মুহূর্তে বাংলাদেশ সোসাইটি’র নির্বাচন স্থগিতের আদেশ দেন নিউইয়র্ক স্টেট সুপ্রিম কোর্ট। নির্বাচনে নানা অনিয়মের অভিযোগ এনে সোসাইটির এক জন সদস্য মামলা দায়ের করেন আদালতে। মামলায় বাংলাদেশ সোসাইটির প্রধান নির্বাচন কমিশনার সহ কর্মকর্তাদের বিবাদী করে আত্মপক্ষ সমর্থন করে জবাব দিতে বলা হয়। ২০১৮ সালের ২১ অক্টোবর সংগঠনটির দ্বিবার্ষিক নির্বাচন আটকে যায় মামলার ফাঁদে। নিউইয়র্ক প্রবাসী বাংলাদেশীদের সর্ববৃহৎ সামাজিক সংগঠন বাংলাদেশ সোসাইটি পথচলার দীর্ঘ চার দশকেরও অধিক সময়কালে নেতৃত্বের কোন্দলে বার কয়েক জড়িয়েছে মামলা মোকদ্দমায়। ব্যক্তি ইগো, আঞ্চলিকতা, স্বদেশী রাজনীতির সংশ্লিষ্টতা, আর্থিক লেনদেন সহ নানাবিধ কারণে সৃষ্ট জটিলতা ও মামলা মোকদ্দমার কারণে দিন দিন পারস্পরিক বিভেদ বাড়ে সংগঠনটির অভ্যন্তরে।
পক্ষান্তরে সংগঠনটির মৌলিক চেতনা অভিবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যকার পারস্পরিক সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধের বন্ধন বার বার হয়েছে ছিন্ন-ভিন্ন। ২০১৮ সালে সোসাইটিতে রেকর্ড সংখ্যক ২৭ হাজার ৫১৩ ভোটার হয়। প্রতি দু’বছর অন্তর সংগঠনটি কার্য নির্বাহী কমিটি গঠিত হয় সাধারণ সদস্যদের সরাসরি ভোটে। নির্বাচন এলেই সরব হয়ে উঠেন সোসাইটি সংশ্লিষ্ট একটি মহল।
এক ধরণের উৎসবের আমেজ পরিলক্ষিত হয় কমিউনিটিতে। সাম্প্রতিক সময়ে সোসাইটির নির্বাচনের চূড়ান্ত দিনক্ষণ ঘনিয়ে এলে মামলাকারীরা তৎপর হয়ে উঠেন। দীর্ঘদিন ধরে মামলার ফাঁদ পেতে তারা অপেক্ষা করেন মোক্ষম সময়টির জন্য। অলাভজনক সামাজিক এ সংগঠনটির কর্মকান্ড ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনে আদালতে মামলা ঠুকে দেন। বিগত সময়ে নির্বাচন কমিশন এবং প্রতিদ্বন্দ্বি দু’টি প্যানেলের ৩৮ প্রার্থী ও তাদের সমর্থকগণ যারপরনাই পরিশ্রম করেছেন। মামলাকারীদের অভিযোগ সোসাইটিতে যোগ্য নেতৃত্ব নেই। মামলার ভয়েই যে যোগ্য ব্যক্তিরা এখন সোসাইটিতে আসছেন না এ বিষয়টি মামলাকারীদের ভাবনায় নেই। সোসাইটির অনিয়ম নিয়ে নির্বাচনের একমাস পূর্বে কেন অভিযোগ উত্থাপন করা হয় না।
এ নিয়ে সাধারণ সদস্যদের মাঝে প্রশ্নের উদ্রেক করেছে। মামলার কারণে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও অনেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন সোসাইটি থেকে এবং এই প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। সামান্য কারণে কথায় কথায় আদালতের শরনাপন্ন হওয়াতে সোসাইটি ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে। ২০১৮ সাল এবং চলতি বছরের নির্বাচনী প্রচারণা, নির্বাচন কমিশন ও মামলায় ব্যয় বাবদ পুরো প্রক্রিয়ায় মিলিয়ন ডলারের শ্রাদ্ধ হয়ে গেছে বলে অভিজ্ঞ মহলের ধারণা। বাংলাদেশ সোসাইটি একটি অলাভজনক ও অরাজনৈতিক সংগঠন। সোসাইটির তহবিলের অর্থ সাধারণ প্রবাসীদের। মামলা-মোকাদ্দমা বা অন্য কোন অভিপ্রায়ে এই তহবিলের অর্থ অপচয় করলে এ প্রক্রিয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট সোসাইটির সবাইকে জবাবদিহি করতে হবে। এখন সর্বাগ্রে প্রয়োজন চলমান জটিলতা ও সংকট নিরসন। এক্ষেত্রে সোসাইটির বর্তমান নেতৃত্ব, নির্বাচন কমিশন, উভয় প্যানেলের শীর্ষ প্রার্থী, সমর্থক ও মামলাকারীদেও সম্মিলিত প্রয়াস প্রয়োজন। যার মূল লক্ষ্য হবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা। অন্য কোন পন্থা বা প্রক্রিয়া নয়। মামলা সংকট নিরসনের কোন পন্থা নয়। একমাত্র অবাধ এবং পক্ষপাতহীন নির্বাচন অনুষ্ঠানই বাংলাদেশ সোসাইটির বর্তমান সংকট নিরসনের একমাত্র পথ।
Posted ১:০৯ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh