| বৃহস্পতিবার, ২১ জুলাই ২০২২
জিনিসপত্রের দাম বেড়েই চলেছে। দিশেহারা হয়ে পড়েছে মানুষ। সীমিত আয়ের লোকজন তাদের বাজেট সংকোচন করেও মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না। মূল্যবৃদ্ধি যদি কেবল ভোগ্যপন্যের ক্ষেত্রে হতো, তাহলেও হয়তো সামলে নেয়া যেতো। কিন্তু এবারের মূল্যবৃদ্ধি চতুর্মুখী, সর্বগ্রাসী। জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে, বাড়ি ভাড়া বেড়েছে, বিভিন্ন সার্ভিসের মূল্যও বেড়েছে। আমেরিকান সরকার মূদ্রাস্ফীতির হার সীমিত রাখার উদ্দেশ্যে ব্যাংকঋণের ওপর সূদের হার কয়েক দফা বৃদ্ধি করেছে। কিন্তু মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়নি। ফলে পন্যমূল্যও হ্রাস পায়নি।
ভোগ্য পন্যের মূল্য সুচক গত মাত্র এক বছর আগের চেয়ে ৯.১ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে এমনটি কল্পনা করেননি ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যানসহ শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদ ও নীতিনির্ধারকরা। বিগত চার দশকের মধ্যে ভোগ্য পন্যের মূল্য বৃদ্ধি সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌছেছে। ১৯৮১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৮.৫ শতাংশ। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে যেকোনো খাদ্যদ্রব্য, বাড়িভাড়া, গ্যাসের মূল্য হার বেড়েছে সবচেয়ে বেশি ছিল, যা অতিক্রম করেছে এবারের মূল্যস্ফীতি।
আমেরিকানদের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বাজেট সংকুচিত করেও পদে পদে হোঁচট খাচ্ছে। আমেরিকান শ্রম বিভাগের মতে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়নি ইউক্রেন থেকে তেল সরবরাহ বন্ধ থাকায়। তবে গত জুন মাসে গ্যালনপ্রতি লিড-মুক্ত জ্বালানি মূল্য ৫ ডলার থাকলেও গত সপ্তাহে সারাদেশে তা তা হ্রাস পেয়ে গড়ে প্রতি গ্যালন ৫ ডলারের নিচে নেমে এসেছে। উল্লেখ্য, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি পেলে পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি পাবে, যার পরিণতিতে ভোগ্যপন্যসহ যে কোনো পন্যের মূল্য বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে। মূল্যস্ফীতি আমেরিকানদের জীবনকে ব্যয়বহুল করে তুলেছে। জিনিসপত্রের মূল্য যে এত দ্রুত ও এত বেশি বৃদ্ধি পাবে তা ফেডারেল রিজার্ভ ধারণা করতে পারেনি। করছে ভোগ্য পন্যের মূল্য বৃদ্ধি আরও কিছুদিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।
বিশেষ করে জ্বালানি তেলের মূল্য এখন স্থিতাবস্থায় থাকলে আবারও বেড়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে পন্যমূল্যে আরেক দফা চাপ আসবে। সরকার আমেরিকানদের কোনো আশাবাদ শোনাতে পারছে না। মুদ্রাস্ফীতির হার এখন যে স্তরে আছে, তা যে দ্রুততায় বেড়ে এই স্তরে পৌছেছে তা থেকে একই দ্রুততায় হ্রাস পেয়ে স্বাভাবিক পর্যায়ে আসবে এমন আশা করার কোনো কারণ নেই। এই হারে সামান্য রদবদল হলেও পন্য মূল্যের উপর চাপ অব্যাহত থাকবে।
যেমন গত জুন মাস পর্যন্ত মুদ্রাস্ফীতির সারা বছরের গড় ছিল ৫.৯ শতাংশ এবং গত মে থেকে জুনের মধ্যে পরিবর্তন ছিল মাত্র ০.৭ শতাংশ এবং এটিও ছিল মুদ্রাস্ফীতির মাসিক হারের মধ্যে সর্বোচ্চ। করোনা মহামারীর সময়ে অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখার জন্য ফেডারেল রিজার্ভ বছরে দু’বার সামান্য হারে সূদ হার বৃদ্ধি করেছিল। তারা পন্যমূল্য এত বৃদ্ধি পাবে এমন আশঙ্কা করেননি। কিন্তু সূদ হার যখন চল্লিশ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ, তখন মূল্যবৃদ্ধির গতি ঠেকিয়ে রাখতেও পারছে না তারা। ফেডারেল সরকার এমন সংকটে পড়েছে যে তারা স্থির করতে পারছে না অর্থনীতির এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের উপায় কী। কিন্তু উদ্ভুত পরিস্থিতিতে সরকারের কিছু করণীয় থাকে। বেকার, নিম্ন, স্বল্প ও মাঝারি আয়ের কর্মজীবীদের সহায়তার জন্য সরকারের উচিত বিশেষ অর্থনৈতিক উদ্ধার কর্মসূচি তৈরি করে ভোগান্তির মধ্যে পড়া কষ্ট লাঘব করতে এগিয়ে আসা। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন খাদ্য ও জ্বালানি তেলের মূল্য কমানোর কথা একাধিকবার বলেছেন। কিন্তু তাতে মূল্যবৃদ্ধি হ্রাস পায়নি, যেহেতু তিনি কোনো পদক্ষেপ গ্রহণের কথা সুস্পষ্টভাবে বলেননি।
Posted ৬:৪৬ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২১ জুলাই ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh