| বৃহস্পতিবার, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২১
একদিকে করোনায় মানুষ অকাতরে মারা পড়ছে, ব্যবসায়ীদের ব্যবসায় ভাটা পড়েছে, মানুষের কাজ নেই এবং সরকারি আর্থিক সাহায্যই ছিল গত দেড় বছর ধরে নিম্নবিত্ত ও মাঝারি আয়ের মানুষের একমাত্র ভরসা। সরকার সংকটে পতিত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য সাহায্যের হাত প্রসারিত করতে ভোলেনি এবং তাদের জন্য বরাদ্দ করেছে ৭৮০ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু বিশ্বকে কাঁপিয়ে তোলা মহামারীও অসৎ মানুষের মাঝে সুমতি ফিরিয়ে আনতে পারেনি। চোখের সামনে স্বজন, পরিচিতদের মৃত্যুমুখে পতিত হতে দেখেও এরা ধর্মের পথে ফিরে আসেনি। তারা ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীদের ক্ষতি সামলে উঠার জন্য দেয়া ঋণের মধ্য থেকে ৭৬.৩ বিলিয়ন ডলার বা মোট বরাদ্দের ১৫ শতাংশই আত্মস্যাৎ করেছিল নানা অসৎ পন্থা অবলম্বন করে।
একটু বিলম্বে হলেও সরকার অর্থ আত্মসাতের বিষয়টিকে আমলে নিয়ে ইতোমধ্যে পাঁচ শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে, যার মধ্যে কিছু অসৎ বাংলাদেশী ব্যবসায়ীও আছেন বলে জানা গেছে। আত্মসাতকৃত অর্থ আদায়ের জন্যও সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। করোনায় সকল খাতের মত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও বিপুলভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন, তাতে কোন সন্দেহ নেই; বরং বলা যায় যুক্তরাষ্ট্রে আর্থিক গ্রুপ হিসেবে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাই সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ শ্রেনি। বিষয়টিকে যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে সরকার পে-চেক প্রটেকশন প্রোগ্রাম বা পিপিপি নামে এই কর্মসূচির আওতায় প্রকৃতপক্ষে এক ধরনের ক্ষমাযোগ্য ফেডারেল ঋণ দিয়েছে, যে ঋণ পেতে আবেদনকারীর সিকিউরটি ডিপোজিট, কোলেটারেল এর প্রয়োজন পড়েনি, পরিশোধের মেয়াদ দীর্ঘ এবং সূদ হার নামেমাত্র। অর্থ্যাৎ কেউ এ ঋণ নিতে পারলে তা পরিশোধ করার গরজ না থাকলেও চলবে- এ ধারণার বশবর্তী হয়ে অসংখ্য লোক নামে মাত্র ব্যবসার নামে অথবা ব্যবসা সংক্রান্ত জাল দলিলপত্র তৈরি করে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নিয়েছে। এই ঋণ দেয়ার পেছনে সরকারের উদ্দেশ্য ছিল সরকার এই ঋণ মওকুফ করবে, যদি ঋণগ্রহীতারা ঋণের একটি অংশ সংশ্লিষ্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কর্মরত ব্যক্তিদের বেতনভাতা পরিশোধে ব্যয় করে।
নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সিটিতে বসবাসকারী এসব প্রতারক এখন সময় কাটছে আতঙ্কে। গ্রেফতারের ভয়ে ইতোমধ্যে গাঁ ঢাকা দিয়েছেন অনেকে। ট্যাক্স ফাইলিংয়ের কাজ করেন এমন অনেকের সঙ্গে যোগসাজশে ভূঁয়া তথ্য দিয়ে আবেদন করে তারা হাতিয়ে নিয়েছেন মোটা অংকের অর্থ। প্রতারকদের অনেকেই বিলাসবহুল বাড়ি-গাড়ির মালিক হয়েছেন। চেষ্টা করছেন নতুন নতু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার। কিন্তু জালিয়াতি ও প্রতারণার বিষয়টি ফাঁস হওয়ায় এখন তারা নির্ঘুম দিন কাটাচ্ছেন। সরকার যেসব প্রতিষ্ঠানের উপর ক্ষুদ্র ঋণের অর্থ বিতরণের দায়িত্ব ন্যস্ত করেছিল, সেসব প্রতিষ্ঠানের বেশ কটি প্রতারকদের সঙ্গে যোগসাজশ করে তাদের দ্রুত ঋণ পাওয়ার সুবিধা করার মধ্য দিয়ে ব্যাপক প্রতারণা ও করদাতাদের বিপুল পরিমাণ অর্থ অপচয়ের পথ উন্মুক্ত করে দিয়েছে। সরকার এখন খড়গহস্ত। ঋণ প্রতারকদের নিকট থেকে অর্থ আদায় ও তাদের শাস্তি বিধান করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
ফেডারেল আইনজীবীরা সন্দেহভাজন ঋণ আবেদনকারী ও ইতোমধ্যে ঋণ গ্রহণকারীকে শনাক্ত করে প্রতারণার মাধ্যমে জরুরী কর্মসূচির অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। সকলেই আশা করেন যে তাদেরকে কঠোর শাস্তি আওতায় আনা হোক, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে, সরকারের দেয়া সুবিধা নিয়ে কেউ প্রতারণা ও জালিয়াতি করার কথা চিন্তা করতেও ভয় পায়। সরকারের পক্ষে মামলা পরিচালনাকারী একজন আইনজীবী জেমস পি কেনেডি জুনিয়রও বলেছেন যে পিপিপি ঋণের উদ্দেশ্য ছিল মানুষকে আর্থিকভাবে চাঙ্গা রাখা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংনেসর হাত থেকে রক্ষা করা। সেজন্য যারা প্রতারণার মাধ্যমে এই অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে বা নেয়ার চেষ্টা করেছে, ন্যায়বিচারের দাবী হলো তাদের বিচারের মুখোমুখি করে শাস্তি প্রদান করা এবং আমরা তাই করছি, যাতে ভবিষ্যতে কেউ মানুষের কল্যাণের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাতের চেষ্টা থেকে বিরত থাকে।
Posted ৯:৩২ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh